1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আইনে-বেআইনে লঙ্ঘিত ব্যক্তির অধিকার

সুলাইমান নিলয় ঢাকা
৫ আগস্ট ২০২২

নাগরিককে সেবা প্রদানের পরিবর্তে দেশে নানাভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে ব্যক্তির অধিকার। হিরো আলমকে ডেকে মুচলেকা নেয়া থেকে শুরু করে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনা কখনো আইনের ফাঁক ফোকর গলিয়ে চলছে, আবার কখনো ভাঙা হচ্ছে আইন।

https://p.dw.com/p/4FBNk
ছবি: Getty Images

মানবাধিকার কর্মী ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যার সমাধানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় করণের প্রভাব ও  দুর্নীতি দূর করার পাশাপাশি ব্যক্তির সাথে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করা প্রয়োজন। সেই সাথে দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক সংস্কার করা প্রয়োজন। 

পাশাপাশি ঔপনিবেশিক আমল এবং তার পরে একই ধারাবাহিকতায় শাসন-শোষণ টিকিয়ে রাখার জন্য তৈরি আইনগুলো পরিবর্তনের দাবিও করেছেন তারা।

হিরো আলমের সাথে কী ঘটেছিল?

গান, মিউজিক ভিডিওসহ নানা কনটেন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে নানাভাবে আলোচনায় থাকছেন বগুড়ার এক সময়কার সিডি ও ডিশলাইন ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম, যিনি হিরো আলম নামে পরিচিত। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছিলেন তিনি। 

বিবৃত করে রবীন্দ্র সংগীত গাওয়ার অভিযোগ এনে গত ২৭ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নেয়া হয় তাকে। আর কখনো বিকৃত করে গান না গাওয়ার মুচলেকা নিয়ে তাকে ছাড়ে ডিবি।

সেই দিনের ঘটনা বর্ণনা করে হিরো আলম বলেন, তারা হুট করে এসে সকাল ছয়টায় আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। তারপর বলে, চল। 

"কোনদিকে যামু, কোথায় যামু, ওনারা কে-সেই পরিচয় আমাকে দেয় নাই”-এক প্রশ্নের জবাবে বলেন হিরো আলম।

ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার পর অসম্মানজনক আচরণের অভিযাগ করে তিনি বলেন, কেউ তুই-তোকারি করে, কেউ মাথার চুল ধরে টানে। রাস্তার মানুষকেওতো তুই তোকারি করতে পারে না। আর আমার একটু হলেওতো সম্মান আছে। 

সকাল ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত তাদের সাথে ছিলেন বলে জানান হিরো আলম।

সকাল বেলার নাস্তাও দুর্ব্যবহার করে জোর করে খাওয়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খেতে অস্বীকার করার পর বলেছে, তোর খাওয়া বের করে দেবো। খাবি না কেন? খা। শক্ত পরোটা। কোন রকমে একটা খেয়েছি। পরে বলেছে, সব খাওয়া লাগবে। দেখেন খাবারটাও জোর করে খাওয়াবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার এই খবর তিনি পরিবারকে দিতে পারেননি। কারণ অফিসে এসেই তার ফোন দুটি নিয়ে যায় ডিবি সদস্যরা।  গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকেও  এই খবর পরিবারকে জানানো হয় নাই। 

তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় কেউ ইউনিফর্ম পরা ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোন কিছু অভিযোগ থাকলে আমাকে ডাকলে আমি ডিবি অফিসে যেতাম। আমিতো চোর ডাকাত না। ডাকার পর না গেলে আমাকে তুলে নিয়ে যেতে পারতো। 

তিনি বলেন, আমি বর্তমানে আমার জীবন নিয়ে আশঙ্কায় আছি। ওরা আমার সাথে যা করেছে, সেটা আমি সবাইকে খুলে বলেছি। এখন তারা আমাকে ক্রসফায়ার দিতে পারে, অন্য মামলায় ঢুকিয়ে দিতে পারে, মেয়ে দিয়ে-অস্ত্র দিয়ে হ্যারাসমেন্ট করতে পারে। আমি কি এখন মরে যাবো নাকি বাকী জীবন জেলখানায় কাটাবো-আমি জানি না। 

হিরো আলমকে ডেকে নিয়ে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশের ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে৷Bangladesch | Hero Alom
হিরো আলমকে ডেকে নিয়ে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশের ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে৷ছবি: Hero Alom

ডিবির এই কার্যক্রমে কোন আইনগত পদক্ষেপ নিতে চান কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদক্ষেপ নিতে পারিনি। পদক্ষেপ নিতে গেলে মন্ত্রী-মিনিস্টার লাগে। এখনতো নরমের যম, শক্তের জয়। আল্লাহ আর আমি ছাড়া আমার তো আর কেউ নাই। 

কাউকে তুলে নিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গানের ব্যাপারে সীমানা ঠিক করে দিতে পারে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন। 

তিনি বলেন, আইয়ুব আমল থেকে বিভিন্ন মার্শাল ল'র সময় বিভিন্ন পোশাক, চলাফেরা নিয়ে মানুষকে হ্যারাসমেন্ট করতে দেখেছি। এটি নাগরিকের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করারই নামান্তর। 

"(কেউ অভিযোগ করলেও) সেটিরও সমাধানের পথ আদালত। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরতো এই ধরনের ভূমিকা কোনভাবে সমর্থনযোগ্য না।”

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, হিরো আলমের ঘটনার পর কেউ প্যারোডিও গাইবে না। হাসতো আমরা ভুলে যাবো।

"দেশে এতগুলো পত্রিকা আছে, কার্টুন কিন্তু নাই।”

ব্যক্তির অধিকার: বাস্তবায়ন নেই সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের

বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সাধারণ মানুষের  সম্পর্কের প্রশ্নে ঘুরে ফিরে আসে উচ্চ আদালতের একটি রায়, যাকে ঐতিহাসিক বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মী ও আইন বিশেষজ্ঞরা। 

ঘটনার শুরু ১৯৯৮ সালের ২৩ জুলাই। বেসরকারি ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ'র শিক্ষার্থী ২০ বছর বয়সী শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পুলিশী হেফাজতে তার মৃত্য হয়। এই ঘটনার পর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও ১৬৭ ধারায় রিমান্ডে নেয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট দায়ের হয়।

বাংলাদেশ লিগাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট্র, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলনসহ ৫ ব্যক্তি এই রিট দায়ের করেন। ২০০৩ সালের এপ্রিলে রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধসহ ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার নিয়ে এক ঐতিহাসিক রায় দেয় হাই কোর্ট। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২০১৬ সালে তা খারিজ হয়ে যায়। এরপর এই রায়ের রিভিউর আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

তবে উচ্চ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আইন খান পান্না বলেন, রিভিউ না হওয়া পর্যন্ত আগের রায় বাস্তবায়ন করা বাধ্যতামূলক। 

এই রায়ে অযাচিত আটক এবং রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধে নির্দেশনা ছিল। রিমান্ডের সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যস্থা রাখা, আইনজীবী রাখা, আইনজীবীর সাথে পরামর্শের সুযোগ ইত্যাদিও রাখা হয়। 

আইন না মানার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায় বেশি: ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া

মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন মনে করেন, ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারের বিষয়ে উচ্চ আদালতের এসব নির্দেশনা দিয়ে ব্যক্তির অধিকার, আইন প্রয়োগকারীদের হাতের মাঝে একটি সীমারেখা টানা যায়।

রায়কে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার বা আটক করতে হবে। আত্মীয় স্বজন বা আইনজীবীকে এই খবর জানাতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় আইনজীবীকে রাখতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদের পূর্বে এবং চিকিৎসক দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। 

তিনি বলেন, অস্ত্র উদ্ধার বা সহযোগীদের চিহ্নিত করার অভিযানে আসামির নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ঝুঁকি থাকলে তাকে নিয়ে যাওয়া যাবে না।

"রাতের বেলা কাউকে ধরতে বাড়ি গিয়ে শিশুদেরকে জাগিয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ছোঁ মেরে আসামিকে ধরে নিয়ে আসা একেবারেই মানবাধিকারের লঙ্ঘন। কোনো আইনে এটার বৈধতা দেয়ার সুযোগ আমি দেখি না।”

জেড আই খান পান্না বলেন, কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বেলায়, যারা এই দেশে বিশ্বাস করে না। তাদের বেলায় একদম দাঁড়ি-কমা-সেমিকোলনসহ (এই রায়) ফলো করা হয়েছে। কিন্তু আমার দেশের চোর ছ্যাচোড়ই ধরলাম, তার বেলায় কেন ফলো করা হবে না? সে কি যুদ্ধাপরাধীদের চেয়েও নিকৃষ্ট? নট অ্যাট অল।

নুন খান লিটন বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাইরে সাধারণ মানুষতো দূরের কথা এক সময় ক্ষমতায় থাকা রাজনীতিবিদরাও এই সুবিধা পাচ্ছে না।

উচ্চ আদালতের আইনজীবী ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, আপিল বিভাগের দেয়া ১৫টা নির্দেশনা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। কোনটাই মানা হয় না। না মানার প্রশ্ন তুললে যখন পুলিশ তার নিয়মতান্ত্রিক উপায়েই কাজ করছে বলবে, তখনও সে আসলে বেআইনীভাবে কাজ করছে। একইসাথে সে নাগরিকের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।

"৫৪ ধারায় যিনি যাচ্ছেন, তিনি গিয়ে নিজের পরিচয় দেবেন। সুপ্রিম কোর্টের অন্য মামলায়ও নির্দেশনা ছিল, সাদা পোশাকে কেউ কারো বাসায় গিয়ে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। যে যেই বাহিনীর, সে সেই বাহিনীর পোশাক পরে এই সব অভিযানে যেতে হবে।”

তিনি বলেন, আমাদের এখানে আরো একটা সমস্যা আছে। আমাদের  এখানে প্রথমে গিয়ে গ্রেপ্তার করে, তারপর গিয়ে মামলা সাজায়। কিন্তু হওয়ার কথা পুরো উল্টোটা। 

"কগনাইজেবল অফেন্স যদি ঘটে থাকে, তার যদি রিজনেবল সাসপিসন থাকে, সেই রিজনেবল সাসপিসনটা কেন হবে, সেটাও ডায়রিতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। কোন একটা অপরাধ ঘটতে যাচ্ছে বা কোন একটা অপরাধ ঘটতে যাচ্ছে, এভাবে ওই কর্মকর্তাকে নিজেকে সন্তুষ্ট হতে হবে এবং পরবর্তীতে এটা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উত্থাপনও করতে হবে। না পারলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা আছে।” 

‘পুলিশের কাছে সেবা নিতে গেলেও ভয়'

মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটনের মতে, পুলিশের কাছে সেবা নিতে যাওয়া থেকেই অব্যবস্থাপনা শুরু হয়। থানায় বসার সুবিধা, দরখাস্ত লেখার জন্য কমল-কাগজের ব্যবস্থা, এমনকি শৌচাগারের সুবিধাকেও নাগরিক অধিকারের সাথে একত্রে দেখতে চান তিনি। 

তিনি বলছেন, থানায় বসার জায়গা পর্যাপ্ত নেই, যতটুকু আছে, সেটা অনেক্ষেত্রে দখল করে রাখে সোর্স ও দালালরা। কলম-কাগজ অনুপস্থিত। শৌচাগারে এতটা গন্ধ বা পরিস্থিতি এতটা খারাপ যে, সেটা ব্যবহার করা যায় না।

তিনি বলেন, থানায় যাওয়ার সাথে সাথে দালালরা এ রকম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেবে যে, আপনার মনে হবে, এ ধরনের সেবা না নেয়াই ভালো। অনেক ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতাদের নিকট থেকে পুলিশ সরাসরি বা দালালের মাধ্যমে উৎকোচ গ্রহণ করে। 

"পুলিশের ব্যবহারও আরেকটা জিনিস। অনেকক্ষেত্রে এই আচরণ প্রভু দাসের মত হয়ে যায়। নাগরিকের সাথে শ্রদ্ধাসহ যে আচরণ করার কথা, সেটি কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাওয়া যায় না।”

 "আমাকে যদি কোন কারণে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বা আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আমার পরিবারের লোক যদি আমার খোঁজ খবর নিতে যান, তাদের সাথে কিন্তু আচরণটা ভালো করা হয় না। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের রেকর্ড করতে গেলে যে আচরণ করা হয়, সেটা কিন্তু সেবামূলক হয় না। এমন আচরণ করে যেন আমিই একটা অপরাধ করে ফেলেছি।”

"রাস্তায় একটা দুর্ঘটনার খবর নিয়ে গেলেও তার সাথে অপরাধীর মত করে কথা বলে পুলিশ।”

কোনো আইনে এটার বৈধতা দেয়ার সুযোগ আমি দেখি না: নুর খান লিটন

সমাধান কোন পথে

বাহিনীগুলোতে অব্যবস্থাপনার কারণ হিসাবে সংস্কৃতি, রাজনীতিকীকরণ ও দুর্নীতির দায় দেখছেন নুর খান লিটন।  তার মতে, বাহিনীগুলোকে যখন দলকানা বানিয়ে দিচ্ছি। তখন চেইন অব কমান্ড কাজ  করে না। 

তিনি বলেন, দলীয়করণ না হলে দুর্নীতিমুক্ত করা যেত। 

লিটন বলেন, আমাদের সাংস্কৃতিক সংগ্রাম, আদর্শিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা হওয়া দরকার। এটি করতে ব্যর্থ হলে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হতে বেশি সময় লাগবে না। নীতিহীন রাজনীতির চর্চা হতে হতে এমন জায়গায় গেছে যে, ক্ষমতাসীন দলের একটি সংগঠনের পদ পেতে কোটি টাকা বিনিময় হতেও আমরা শুনি।  

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বলেন, পুলিশ যখন অপরাধ করে, সেটা দেখার জন্য আইন আছে। খুব বেশি যে শক্ত আইন আছে, তাও বলবো না। তবে যতটুকু আছে, সেটার আসলে প্রয়োগ নেই। ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন দিয়েও চেক অ্যান্ড ব্যালেন্ড তৈরি করা সম্ভব।

"এই আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে আইন মানার সংস্কৃতি তৈরি করা উচিত। আমি কেবল একা পুলিশকে দোষারোপ করবো, বিষয়টা তা না। আমাদের সাধারণ মানুষের মধ্যেও আইন না মানার এক ধরনের সংস্কৃতি তৈরি হয়ে গেছে। কোন পরিস্থিতিতে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ম মানে, ক্যান্টনমেন্টের বাইরে আসলে উল্টাপাল্টা করে, সেটাও মনে রাখা উচিত।” 

"রাষ্ট্র যদি যথাযথভাবে অপারেট করতে না পারে তাহলে নিয়ম না মানার সংস্কৃতিই তৈরি হবে। আইন না মানার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায় বেশি।”

আটক-গ্রেপ্তার-রিমান্ডে মানুষের অধিকার নিশ্চিতে উচ্চ আদালতের সেই রায় বাস্তবায়নে কী করা উচিত-এমন প্রসঙ্গে জেড আই খান পান্না করেণ, সবার জন্য এই রায়ের সুবিধা নিশ্চিত করা যেতে পারে কেবল আদালত ও স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। আদালত যদি আরেকটু কঠোর হয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেভাবে বলে। তাহলে অবশ্যই মানবে। এখন যদি সেভাবে ব্যাকবোন না থাকে, তাহলে বানাবো কেমনে?

১৯৪৪ সালে দায়ের করা একটা মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি-পত্রিকায় প্রকাশিত এমন খবরের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা কি কোন আইন না এটা বিচারালয়? নাকি মকারির জায়গা নাকি রঙ্গমঞ্চ? তিন জেনারেশন কেটে যাচ্ছে। 

"আমাদের মাইন্ড সেটও এমন জায়গায় চলে গেছে যে, সব অস্বাভাবিক, সব অসঙ্গতিকে ধরে নিয়েছি যে, এটাই স্বাভাবিক।”

তিনি বলেন, কোরআন শরীফের সূরার যেমন প্রেক্ষাপট আছে। আমাদের আইনগুলোরও  এরকম একটা প্রেক্ষাপট আছে। 

তার মতে, সিপাহী বিদ্রোহের পর শাসন শোসনের জন্য তৈরি আইনগুলোর পাশাপাশি একই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল সিকিউরিটি ল, সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল, সাইবার ক্রাইম অ্যাক্ট তৈরি হয়েছে। চূড়ান্ত সমাধান করতে হলে এগুলোও বদলাতে হবে।    

কারাগারে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে বেকসুর খালাস পাওয়ার পর বিষয়টা সেখানেই ছেড়ে না দেয়ার পক্ষে এই আইনজীবী।

তিনি মনে করেন, ওই ব্যক্তির জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া সময়ের জন্য কেবল ক্ষতিপূরণও যথেষ্ট নয়। বরং এর জন্য যারা দায়ী-তাদেরকে সাজার আওতায় আনতে হবে।