আইসল্যান্ডের অনবদ্য প্রকৃতির মধ্যে অভিনব বাড়ি
২৫ জুলাই ২০১৮প্রকৃতি ও স্থাপত্যের মেলবন্ধন
নিসর্গের সঙ্গে প্রায় মিশে যায় আইসল্যান্ডের ওয়েস্টফিয়র্ডস এলাকার এই বাড়ি৷ আঞ্চলিক স্থাপত্যশৈলি থেকে প্রেরণা পেয়েই সেটি নির্মাণ করা হয়েছে৷ জার্মানির বাভেরিয়া অঞ্চলের পেটার ভাইস এই বাড়ির মালিক৷
পেটার ভাইস ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আইসল্যান্ডে বসবাস করছেন৷ ওয়েস্টফিয়র্ডস বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে তিনি কাজ করেন৷ ২০১২ সাল থেকে তিনি সস্ত্রীক এই বাড়িতে থাকেন৷ বাড়ির নক্সার সময়ে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ তাঁদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷ ভিতরে সাদা কাঠ ও চক রংয়ের দেওয়াল বাইরের প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটায়৷ পেটার বলেন, ‘‘এখান থেকে অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়৷ বাড়িটা আসলে সেই দৃশ্যকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে৷''
দক্ষিণ পশ্চিম দিকে মুখ করে বাড়িটি দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ দক্ষিণের বিশাল প্যানোরামা জানালা দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে গোটা বাড়ি আলোকিত করে৷ বসার ঘর, কাজের ঘর, খাবার জায়গার প্রতিটি কোণে সেই আলো পৌঁছে যায়৷ পেটার ভাইস বলেন, ‘‘এটাই হলো দক্ষিণ দিক৷ অর্থাৎ এমনকি শীতকালেও বিস্তৃত এই উপত্যাকার কারণে সূর্যের আলো পাওয়া যায়৷ আইসল্যান্ডের অনেক অঞ্চলের মতো ওয়েস্টফিয়র্ডেও শীতকালে দু'মাস সরাসরি সূর্যের আলো পাওয়া যায় না৷ এখানে কিন্তু ১১ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং তারপর ১লা জানুয়ারি থেকে সূর্যালোক আসে৷ তার মাঝের সময়ে মাত্র আধ মিনিট সূর্যের মুখ দেখা যায়৷''
ঋতুর সঙ্গে মানানসই
আইসল্যান্ডে শীতকাল মানে শুধু অন্ধকার নয়৷ প্রবল বাতাস ও বিশাল পরিমাণ বরফের কারণে জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ে৷ পেটার বলেন, ‘‘এই সব ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন, সব জানালা পুরোপুরি বরফ ঢেকে গেছে৷ উপরে উঠে দুই মিটার বরফ কোদাল দিয়ে সরাতে হয়৷ তারপরই ঘরে একটু আলো ঢুকতে পারে৷''
আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনের বিষয়টি মনে রেখে এমন সব উপকরণ দিয়ে বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে, যা সব পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে পারে৷ মূল কাঠামো সিমেন্ট দিয়ে তৈরি৷ তার উপর লার্চ গাছের কাঠ ও অ্যালুমিনিয়াম৷ আর ছাদের উপর ঘাস রয়েছে৷
বাড়ির ১৫০ বর্গ মিটার এলাকা দুটি ভাগে বিভক্ত – মাঝে প্রবেশদ্বার৷ পেটার ভাইস বলেন, ‘‘এই ঘরটি শীতকালে সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা হয়ে যায় আর গ্রীষ্মে সবচেয়ে গরম৷ গ্রীষ্মে এখানে যে উত্তাপ সৃষ্টি হয়, তা কাজে লাগানো সম্ভব৷ তা বাকি ঘরগুলিতে প্রবেশ করতে দেওয়া যায়, অথবা মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা এড়াতে দরজা বন্ধ করে তা আটকে দেওয়া যায়৷''
সূর্যোদয়ের দিকে শোবার ঘরগুলি অবস্থিত৷ একটি বিছানা পুরানো কাঠ পুনর্বব্যবহার করে তৈরি৷ তার অবশিষ্ট সাদা রং পাহাড়ের উপরে জমা সাদা বরফের মতো দেখতে৷
ঐতিহ্য ও আধুনিকতা
প্রতিটি ঘর থেকে সেই অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়৷ এমনকি বাথরুম থেকেও বাইরে বের হওয়া সম্ভব৷ পেটার বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন, ‘‘বাড়ির আকার ও শৈলি আইসল্যান্ডের চিরায়ত ঐতিহ্য মেনে তৈরি করা হয়েছে৷ সেখানকার কোনো স্কুলপড়ুয়া যেভাবে কোনো খামারবাড়ি আঁকে, বাড়িটি তেমন দেখতে৷ তবে যেভাবে ঢোকা আর বের হওয়া যায়, সেই বৈশিষ্ট্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বাড়ির মতো৷''
এভাবে ঘরে-বাইরের মধ্যে সীমানা মিলেমিশে যায়৷ একদিকে সাজানো জীবনযাত্রা, অন্যদিকে জংলি প্রকৃতির মধ্যে ব্যবধান দূর হয়৷ পেটার ভাইস প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটিয়ে থাকতে চান৷ আইসল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলিতেও মানুষ এভাবেই বসবাস করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এমন জায়গায় বাড়ি তৈরির অনুমতি পেয়ে, এখানে থাকার সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি৷ যাঁরা পাশের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যান, তাঁদেরও যেন কিছু ফিরিয়ে দিতে পারছি৷ এই বাড়ির কোনোভাবে নিসর্গের সঙ্গে মানানসই হওয়া উচিত৷''
বাভেরিয়ার পেটার ভাইস ইউরোপের উত্তরপশ্চিম প্রান্তে আইসল্যান্ডের ওয়েস্টফিয়র্ডস অঞ্চলের এই সব খাড়া পাহাড়ে নিজস্ব এক নীড় খুঁজে পেয়েছেন৷
হালা ওলাফসডোটির/এসবি