আউশভিৎস: ১০ লাখ মানুষকে হত্যা যেখানে
২৭ জানুয়ারি ২০২০১৯৪৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সোভিয়েত সেনাবাহিনী সেই কুখ্যাত ক্যাম্প আউশভিৎস মুক্ত করেছিল৷ সোমবার সেই ঘটনার ৭৫ বছর পূর্তি পালিত হচ্ছে৷
এই উপলক্ষ্যে হলোকস্ট থেকে মুক্তি পাওয়া দুশো'র বেশি মানুষসহ ৫০টির বেশি দেশের প্রতিনিধিরা আউশভিৎসে জড়ো হচ্ছেন৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার ও ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট রুভি রিভলিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন৷
এদিকে, ইহুদিবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে লড়তে জার্মানিকে আরও সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইহুদিদের বিভিন্ন গোষ্ঠী৷ বিশ্ব ইহুদি কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড লাউডার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুধু বক্তব্য দিয়ে ইহুদিবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করা সম্ভব নয়৷'' ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ হেট ক্রাইম ঠেকাতে আরও নীতি প্রণয়নের আহ্বান জানান রোনাল্ড লাউডার৷ ‘‘আমাদের এসব ঠেকাতে হবে৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেশিরভাগ সরকার শুধু কথা বলে, তারা কিছু করে না,'' বলেন তিনি৷
গণহত্যার কারখানা
পোল্যান্ডের আউশভিৎসে প্রায় ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে আউশভিৎস-বির্কেনাউ নিধন শিবির গড়ে তুলেছিল নাৎসিরা৷ পোল্যান্ডসহ যেসব দেশ নাৎসিদের দখলে ছিল সেসব দেশ ও জার্মানি থেকে নিরপরাধ মানুষদের সেখানে গবাদি পশুর মতো মালগাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হতো৷
সংখ্যায় ইহুদিরা বেশি হলেও অনেক রাজনৈতিক বন্দি, অসুস্থ, সমকামী ইত্যাদি মানুষকে নাৎসিদের রোষের শিকার হতে হয়েছিল৷ প্রথমেই তাদের মধ্য থেকে কর্মক্ষম মানুষদের আলাদা করা হতো৷ মা ও শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, অসুস্থ মানুষদের তাঁদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে গ্যাস চেম্বারে পাঠিয়ে দেওয়া হতো৷ নারকীয় সেই নিধনযজ্ঞের পর আউশভিৎসের মধ্যে অবস্থিত চারটি শ্মশানে লাশের গণদাহ করা হতো৷ নাৎসিদেরই সূত্র অনুযায়ী, দিনে প্রায় চার হাজার ৭০০ দেহ এভাবে পোড়ানো হতো৷ যাঁরা আরও কিছুদিন জীবিত থাকার সুযোগ পেতেন, তাঁদের কঠিন পরিশ্রম করতে হতো৷ এভাবে পরিশ্রম করতে গিয়ে তাঁরা অর্ধ-মৃত হয়ে যেতেন৷ আউশভিৎস ক্যাম্পের কাছে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানায় বন্দিদের দাস হিসেবে কাজ করানো হতো৷
১৯৪৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সোভিয়েত সৈন্যরা যখন আউশভিৎস মুক্ত করেন তখন সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ মৃত্যুর দিন গুনছিলেন৷
নাৎসিরা অনেকগুলো ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করলেও আউশভিৎসই নাৎসিদের অপরাধের প্রতীক হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে৷
জেডএইচ/কেএম (রয়টার্স, ডিপিএ)