এ সময়ের রাজনৈতিক বুলিতে পরিণত হওয়া ‘তলে তলে' নয় প্রকাশ্যেই৷ পাঠক, আমার এরকম মনে হওয়ার কারণ একটু বিস্তারে যাই৷
মার্কিনিদের সঙ্গে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছেন, ''তারা বলেছে যে, কম্প্রোমাইজ ও অ্যাডজাস্টমেন্টের কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে কি না? তখন আমরা বলেছি, কম্প্রোমাইজ ও অ্যাডজাস্টমেন্টের স্পেস থাকতে হবে। সেই স্পেস বিএনপি রাখেনি। তারা সেই স্পেস ব্লক করে দিয়েছে। তারা (বিএনপি) প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়।''
আওয়ামী লীগের দুই নম্বর শীর্ষনেতাকে আবারও উদ্ধৃত করতে হবে আমার৷ আপাতত, পাঠক এই অনুচ্ছেদটিই আবার পড়া যাক৷ বলা হচ্ছে, কম্প্রোমাইজের ক্ষেত্রে বিএনপি কোনো স্পেস রাখেনি, ব্লক করে রেখেছে৷ স্পেস কেউ ব্লক করে রাখলে তা আনব্লক করা যায় আর যায় বলেই ব্লকের প্রসঙ্গ এলো বলেই মনে হয়৷
এদিকে মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘‘এই সরকারের অধীনে যে আন্তর্জাতিক মানের সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না সে জন্যই তারা এই নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলছে। আমরা বলেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, তারা সেভাবে বলবে না। তারা বলছে, সুষ্ঠু নির্বাচন।‘' বিএনপি নেতার বক্তব্য পরিষ্কার, আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে সাক্ষী রেখে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চান৷ বিদেশিদের কাছ থেকে, বিশেষ করে ে
অ্যামেরিকানেরা গ্যারান্টি দিলে তারা হয়তো নির্বাচনে আসবেন৷ আর এই জন্য প্রয়োজনে কিছুটা ‘কম্প্রোমাইজ'ও করবেন তারা, যদিও কাদেরের ভাষায় এই কম্প্রোমাইজ এখন ‘ব্লক‘৷
এবার আসুন দেখি, কেন এই ব্লক? কাদের বলেন, ''কম্প্রোমাইজের তো কোনো পথ বিএনপি খোলা রাখেনি। প্রথমত, তারা একটা ক্লোজড চ্যাপ্টার, ডেড ইস্যু তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সামনে নিয়ে এসেছে; সেটা ছাড়া হবে না। তাদের একদফা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকেও বাতিল করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। এসব দাবির মুখে কী করে কম্প্রোমাইজ হবে?''
কেউ কেউ বলছেন, বিএনপির দাবি আসলে একটাই৷ সেটা হলো নির্বাচনকালে শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী পদে না থাকা৷ আমীর খসরুও বেশ জোর দিয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়৷ পরে এই সরকারের কথা বললেও, অনেকের মতে শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান না থাকলেই বিএনপি নির্বাচনে আসবে৷ রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এক শেখ হাসিনা সরে গিয়ে ক্ষমতায় থাকলেও পুলিশ বা প্রশাসনের উপর আওয়ামী সরকারের সেরকম প্রভাব থাকবে না৷ আর এ কথা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কম বেশি জানেন এবং মানেন৷
তাই সরকারের সেতুমন্ত্রী বলেন, ''আমরা প্রতিনিধি দলকে জিজ্ঞাসা করেছি, প্রধানমন্ত্রী কেন পদত্যাগ করবে? কী কারণ? সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে নাকি রাস্তায় জনগণের উপচে পড়া ঢল?'' কাদের জানান, শেখ হাসিনার পক্ষে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো অসম্ভব৷ তবে জনগণের ঢল নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন তিনি, যে প্রশ্নের মধ্যে দুই রকম ইঙ্গিতই পাওয়া যায়-জনগণের ঢল নেই তাই পদত্যাগ নয় অথবা জনগণের ঢল নামলে পদত্যাগ৷
উপসংহারে বলতে চাই, পাশে ও পেছনে দলের গুরুত্বপূর্ণদের নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে আলেচনার যে ‘স্পেস নেই' বলছেন কাদের, চার নিয়ামক, অর্থাৎ সময়-গতি,-তাপ-চাপের বদলে সেই স্পেস কিছুটা তৈরি হলেও হতে পারে৷