আট হাজার গাছ দিয়ে মণ্ডপ করে পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা
মণ্ডপ তৈরি হয়েছে আট হাজার গাছ দিয়ে। উষ্ণায়ণের বিশ্বে গাছ লাগিয়ে প্রাণ বাঁচানোর, গাছ বাঁচানোর বার্তা দিচ্ছে এই পুজো।
লালাবাগানের পুজোর থিম পরিবেশরক্ষা
কলকাতার মানিকতলার ঘিঞ্জি ও জনবহুল এলাকায় আট হাজার গাছ দিয়ে তৈরি হয়েছে একটা সবুজ পুজো। লালাবাগানে এই পুজোর বার্তা একটাই, নিজে বাঁচতে গেলে, বিশ্বকে বাঁচাতে গেলে গাছ লাগান, তাকে সন্তানের স্নেহে যত্ন করুন।
প্রতিমাতেও গাছের ব্যবহার
এই পুজোর প্রতিমাও অভিনব। দেবী মূর্তি ও তার পাশে পাতার ব্যবহার করা হয়েছে শৈল্পিকভাবে। উদ্দেশ্য মানুষকে সচেতন করা। নান্দনিক বোধের সঙ্গে পরিবেশ সচেতনতা এখানে মিশে গেছে।
আট হাজারের বেশি গাছ
লালাবাগানের পরিবেশবান্ধব এই পুজোয় আট হাজারের বেশি গাছ দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। ১৫টিরও বেশি প্রজাতির গাছ রয়েছে। মেদিনীপুরের গ্রামে এই গাছগুলিকে যত্ন করে বড় করা হয়েছে। তারপর নিয়ে আসা হয়েছে মণ্ডপে।
পাঁচমাস ধরে
গত পাঁচমাস ধরে তৈরি হয়েছে এই অভিনব মণ্ডপ। ধীরে ধীরে তা রূপ পেয়েছে। গত দুই মাস ধরে গাছগুলিকে মণ্ডপে আনা হয়েছে। সেগুলিকে রক্ষা করাও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। পুজো শেষ হওয়ার পর সেগুলিকে বাঁচিয়ে রাখাও বড় দায়িত্ব।
নানা ধরনের গাছ
নানান ধরনের গাছ ব্যবহার করা হয়েছে এই মণ্ডপসজ্জায়। ফার্ন, মস, পান, বিভিন্ন ধরনের পাতাবাহার সবই আছে। এত গাছের উপস্থিতিতে মণ্ডপ সবুজ ও সুন্দর হয়েছে তাই নয়, তা দৃষ্টিনন্দনও হয়েছে।
প্রবল ভিড়
সকাল থেকেই লালাবাগানের এই পুজোয় থাকছে ঠাসা ভিড়। মায়ের মোহময়ী রূপ ক্যামেরাবন্দি করছেন দর্শনার্থীরা। কলকাতার হাজারো থিমের মাঝে লালাবাগানের সবুজায়নের থিম আকর্ষণ করছে মানুষকে। মণ্ডপ দেখতে এসে ক্যামেরায় তা ধরে রাখছেন দর্শকেরা। যেমন এই যুগলও মণ্ডপ ও প্রতিমার সঙ্গে নিজেদের ছবি তুলছেন। তবে এই ছবিতে একটা মুহূর্ত ধরা থাকে। আসল কথা হলো, এই সচেতনতাকে হৃদয়ে ধরে রাখা।
কেন এই থিম?
এই পুজোর উদ্যোক্তা লালাবাগান নবাঙ্কুরের সুমন মালাকার বলেন, ''আমাদের বার্তা বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপক্ষে। গাছকে সন্তানের মত লালন পালন করতে হবে। এই গাছগুলো আমরা গত চার-পাঁচ মাস ধরে লালন পালন করেছি। গাছ যদি ঠিকভাবে প্রতিপালন করা হয় তা আমাদের জন্যই ভালো।''
দর্শক কী বলছেন?
মুচিপাড়ার বাসিন্দা তথা মণ্ডপ পরিদর্শনকারী বিতান ঘোষ বলেন, ''ইকো সিস্টেমের জন্য গাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গাছ দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে। তাই পরিবেশ রক্ষা করতে আমাদেরও গাছ লাগানো উচিত।''
বার্তা যাবে
আরেক দর্শক শ্রীজা চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, ''আবাসন তৈরি ও শিল্পায়নের জন্য এখন গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এই থিম থেকে সবুজ বাঁচানোর বার্তা যাবে।''
৬৫ বছরের পুজোয়
লালাবাগান নবাঙ্কুরের সম্পাদক তাপস রায় বলেন, ''আমাদের এবছর ৬৫ বছরের পুজো। আমাদের শিল্পী প্রশান্ত পাল। আমাদের ভাবনা 'লালাবাগানে নবাঙ্কুর'। প্রায় আট হাজার গাছ দিয়ে আমাদের মাতৃ মন্ডপ তৈরি হয়েছে। গাছকে সন্তানের মত লালন পালন করতে হবে এই বার্তা আমরা দিতে চেয়েছি। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভালো থাকবে।''
দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই
পুজো কমিটির সদস্য সৌমিত্র সাহা জানিয়েছেন, ''উন্নয়নের জন্য মানুষ দূষণ সৃষ্টি করছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য উৎসবের মাধ্যমে এই বার্তা দিতে চেয়েছি। গাছ লাগানো ও তা বাঁচিয়ে রাখাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মণ্ডপের মাথায় পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। গাছের জন্য যে জল,আলো দরকার তা এখানে পাচ্ছে। এটা আমাদের এক বছরের পরিশ্রমের ফসল।''