‘আটক বাণিজ্য বন্ধ করুন’
৩০ মে ২০১৪
মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার পর স্পষ্ট হয়েছে যে আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে৷ এখানে কোনো ধরনের অবৈধ বা অন্যায় প্রভাব খাটিয়ে আইনকে পাশ কাটিয়ে চলতে দেয়া যাবে না৷ সেই যুগের শেষ হয়েছে৷’’
বৃহস্পতিবার যশোরের ঐ কর্মশালায় উপস্থিত পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘পুলিশের আটক বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত অন্তত ১২৮ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার জন্য সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে৷ আপনাদের অনুরোধ করব, আপনাদের অধীনে যাঁরা আছেন তাঁরা যেন কোনোভাবে আটক বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকেন৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এদিকে সবাইকে সজাগ এবং সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে৷ কেননা, এটা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন৷ এর কারণেই দরিদ্র মানুষ আইনের অধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷’’ তাই পুলিশকে আইনানুগ ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য অনুরোধ করেন অধ্যাপক রহমান৷ এক্ষেত্রে কোনো বাধার সম্মুখীন হলে তাঁকে জানানোর কথাও বলেন তিনি৷
বিচারকদের উদ্দেশ্যে ড. মিজান বলেন, ‘‘বিচার বিভাগকেও তাদের বিবেককে জাগ্রত করে বিচারকাজ পরিচালনা করতে হবে৷ আমাদের বিচারকেরা যদি দরিদ্রবান্ধব না হন, দরিদ্র মানুষের কান্না যদি আপনাদের হৃদয়কে স্পর্শ না করে, তাঁদের কান্না-দুঃখ-কষ্ট যদি আপনার দুয়ার পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে, তাহলে সেই আদালত, সেই বিচারক ও সেই বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা দেশে ফুরিয়ে যাবে৷ এখন কিন্তু আপনাদের ওপর যতটুকু আস্থা রয়েছে, ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি করা সম্ভব৷’’ তাঁর কথায়, ‘‘এ দেশকে আমরা নষ্ট হতে দিতে পারি না৷ সবাই নতুন যাত্রা শুরু করেছে৷ সেখানে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকতে পারে না৷’’
কর্মশালা শেষে ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে টেলিফোন মারফত পুলিশের আটক বাণিজ্যের ব্যখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘মামলার এজাহারে কয়েকজনের নাম দিয়ে অজ্ঞাত পরিচয় আরো ব্যক্তিদের কথা বলা হয়েছে৷ এই সুযোগেই নিরীহ মানুষকে আটক করে ঘুস আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে অনেকের বিরুদ্ধে৷ অর্থাৎ সাম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার পিছনে রয়েছে অবৈধ ঘুস বাণিজ্য৷ এছাড়া মামলার ভয় দেখিয়ে এবং অযথা আটক করেও বাণিজ্য করে চলেছে পুলিশের এক শ্রেণির সদস্যরা৷’’
ড. মিজান বলেন, ‘‘নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনাও প্রমাণ করে যে, আইনের বাইরে গিয়ে কতিপয় র্যাব সদস্য বেআইনি কাজে জড়িয়ে পড়েছেন৷ তাঁরা যদি আইন মানতেন এবং আইন মানার জন্য মনিটরিং ও চাপ থাকতো, তাহলে এই ঘটনা ঘটতো না৷’’
অধ্যাপক রহমানের কথায়, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনের ভিতরে থেকেই কাজ করতে হবে৷ আইনের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ সবাইকে আইনি সীমার মধ্যেই থাকতে হবে৷’’