আটক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে ইরান
২৯ নভেম্বর ২০২২এর মধ্যে দুজন হলেন নিলুফার হামেদি ও এলাহে মোহাম্মদি৷
৩০ বছর বয়সি হামেদি ইরানের সবচেয়ে বেশি প্রচারিত সংবাদপত্র ‘শার্ঘ'-এ কাজ করেন৷ মাহসা আমিনির মৃত্যুর খবর তিনি প্রথম প্রকাশ করেছিলেন৷
চুল হিজাবে ঠিকভাবে ঢাকা না হওয়ার অভিযোগে আমিনিকে আটক করেছিল ইরানের নীতি পুলিশ৷ এর কদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর ঘোষণা দেয়া হয়৷ এর আগে আমিনি হাসপাতালে কোমায় ছিলেন৷
আমিনির মৃত্যুর চারদিন পর হামেদিকে আটক করা হয়৷ তখন থেকে তিনি বন্দি আছেন৷ যদিও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি৷
এদিকে ইরানের কুর্দি অঞ্চল সাকেজে অবস্থিত আমিনির বাড়িতে তাকে কবর দেয়ার খবর প্রকাশ করেছিলেন মোহাম্মদি৷ এই খবর প্রকাশের পর বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, যেটা পরবর্তীতে বেড়ে বড় আকার ধারণ করেছিল৷ এই খবর প্রকাশের দুই সপ্তাহ পর মোহাম্মদিকেও আটক করা হয়৷
অক্টোবরের শেষদিকে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা ও রেভুলেশনারি গার্ডের গোয়েন্দা বিভাগ যৌথ এক বিবৃতিতে হামেদি ও মোহাম্মদির সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ আনে৷
ইরানের রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমে কাজ করা আমেনেহ সাদাত জাবিহপুর বলেন, হামেদি সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিনল্যান্ড, তুরস্ক, সাউথ আফ্রিকায় ‘হাইব্রিড ওয়ারফেয়ারের' উপর প্রশিক্ষণ পেয়েছেন৷ হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার হচ্ছে এক ধরনের যুদ্ধকৌশল, যা সাধারণ সামরিক যুদ্ধ, অর্থনৈতিক চাপ, ভুয়া তথ্য ও প্রতারণার একটি সংমিশ্রন৷
জাবিহপুর সাধারণত রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে ‘স্বীকারোক্তিমূলক সাক্ষাৎকার' নিয়ে থাকেন৷ ১৬ নভেম্বর তাকেসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র৷ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা সাধারণ মানুষের উপর নিপীড়ন ও সেন্সরশিপ বাস্তবায়নে ইরান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে কাজ করেন৷
ইরান সরকারের সমর্থকরা জাবিহপুরের মতো ব্যক্তির পরিবেশন করা ভুল তথ্য সহজে গ্রহণ ও প্রচার করেন৷
ইরানের ‘কমিটি অফ হিউম্যান রাইটস রিপোর্টার্সের' সদস্য শিভা নজর আহারি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অনলাইনে যে ভুল অভিযোগ প্রচারিত হয় তা পরবর্তীতে আদালতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷'' আহারিকে বেশ কয়েকবার আটক করা হয়েছে৷ ২০১৭ সাল থেকে স্লোভেনিয়ায় বাস করছেন তিনি৷
তবে সরকারের এসব কর্মকাণ্ড অনেক নারীকে ভয় দেখাতে পারছে না৷ যেমন সাংবাদিকতার ছাত্রী নাজিলা মারুফিয়ান৷ তিনি একজন কুর্দি৷ আমিনি মারা যাওয়ার একমাসেরও বেশি সময় পর ১৯ অক্টোবর তার নেয়া একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷ সেখানে তিনি আমিনির বাবার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছিলেন৷ আমিনির বাবা জানান, তার মেয়ের এমন কোনো শারীরিক অসুস্থতা ছিল না যা থেকে মৃত্যু হতে পারে৷ মারুফিয়ান তার রিপোর্টের শিরোনাম দিয়েছিলেন, ‘‘তারা মিথ্যা বলছেন৷''
খবর প্রকাশ হওয়ার কিছুক্ষণ পর টুইটারে ২৩ বছর বয়সি মারুফিয়ান লেখেন, ‘‘আমার নিজেকে মেরে ফেলার কোনো ইচ্ছা নেই৷ আমার কোনো অসুস্থতা নেই৷ আমি এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করতে পেরে খুশি৷''
৩০ অক্টোবর মারুফিয়ানকে আটক করা হয়৷
শবনম ফন হাইন/জেডএইচ