আতঙ্কের মাঝেও উন্মাদনা
৯ জুলাই ২০১৪এমনই একটি ক্যাফেতে শনিবার রাদ আব্দুল হুসেইনকে দেখা গিয়েছিল টিভি থেকে চোখ না সরাতে৷ অথচ ক্যাফের বাইরে চলছে গোলাগুলি, বোমা হামলা৷ কিন্তু তাঁর কাছে এ সবের চেয়ে ফুটবল ম্যাচ দেখাটাই বেশি আকর্ষণের৷ অর্থাৎ আতঙ্কের চেয়েও আনন্দের মাত্রাটা বেশি তাঁর জন্য৷ ফেসবুক ক্যাফেতে তাই প্রায়ই নিজ বন্ধুদের নিয়ে প্রতিটি ম্যাচ দেখেন রাদ৷
৩০ বছর বয়সি এই ট্যাক্সি চালক বলেন, ‘‘ফুটবল আমাদের একত্রিত করেছে৷ এই একটা মাত্র সময় যখন দুশ্চিতা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে আমরা একটু আনন্দে সময় কাটাই৷ এই ক্যাফেতে যে কোনো মুহূর্তে বোমা হামলা হতে পারে, কেউ আত্মঘাতী হামলা চালাতে পারে৷ কিন্তু তারপরও আমরা প্রতিটা ম্যাচ এখানে বসে দেখি৷''
ইরাক এখন একটা নিরাপত্তাহীন দেশ, যেখানে প্রতিনিয়তই চলছে সংঘর্ষ৷ এর মধ্যেও আব্দুল হুসেইনের মতো মানুষরা খেলা দেখার সুযোগ হাতছাড়া করছেন না৷ কেননা বিশ্বকাপ আসে চার বছর পরপর৷ আর ইরাক তো ফুটবলপাগল একটি দেশ৷
২০০৭ সালে এশিয়ান কাপ জিতে তার প্রমাণ দিয়েছেন ইরাকিরা৷ সেই জয়ের পর সুন্নি, শিয়া, কুর্দি – সব সম্প্রদায়ের মানুষই রাস্তায় নেমে এসেছিলেন৷ তাই তো চরম অস্থিরতা, অনিরাপত্তার মধ্যেও বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখছেন ইরাকের ফুটবলপাগল মানুষ৷
বাগদাদের ঐ ক্যাফের একজন কর্মকর্তা ওসামা সালেম বলেন, ‘‘বাড়ির চেয়ে ক্যাফেতে খেলা দেখা অনিরাপদ৷ কিন্তু বিশ্বকাপ আসে চার বছর পর৷ তাই ভয় পেয়ে ঘরে বসে খেলা দেখবো না তা কি হয়?'' সেই সঙ্গে সালেম আরো জানালেন যে, তিনি সব সময়ই বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের সমর্থক৷
ফেসবুক ক্যাফের ২১ বছর বয়সি কর্মী আলী হুসেনের মতে ফুটবল ইরাকিদের জীবন৷ আর ইরাক যদি এবার বিশ্বকাপে খেলতে পারত, তবে পুরো জাতি একজোট হতো, কোনো দ্বন্দ্ব সংঘাত হতো না৷ এমনই বক্তব্য তাঁর৷
এমন একটা সময় বিশ্বকাপ চলছে যখন ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ৷ আইসিস-এর হামলা থেকে বাঁচতে ঘরছাড়া ইরাকিরা চরম বিপদগ্রস্ত৷ সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ তাদের হামলা শুরুর পর থেকেই সে সব এলাকা থেকে পালাতে শুরু করে শিয়া মুসলমানরা৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি)