1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আতঙ্কের সফরে কলকাতা মেট্রোর যাত্রীরা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৮ জুলাই ২০১৯

কলকাতা মেট্রোর ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে৷ সজল কাঞ্জিলালের মৃত্যুর পর মেট্রো সফর ঘিরে আতঙ্ক বেড়েছে যাত্রীদের৷ আশঙ্কা নিয়ে রোজই পাতাল রেলে চাপতে হচ্ছে তাঁদের৷ মেট্রোর যাত্রীদের কথা শুনল ডয়চে ভেলে৷

https://p.dw.com/p/3MFR3
কলকাতার মেট্রো স্টেশনছবি: DW/P. Samanta

নানা সমস্যায় আক্রান্ত ভারতের প্রাচীনতম ভূগর্ভস্থ রেল পরিষেবা৷ মাঝেমধ্যেই বিভ্রাটের শিকার হয় মেট্রো, দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা৷ তবে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা অতীতের সব নজির অতিক্রম করেছে৷ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, এক যাত্রীর হাত আটকে গিয়েছে ট্রেনের দরজায়, শরীর ঝুলছে বাইরে৷ এই অবস্থায় চলতে শুরু করে ট্রেন৷ ভূগর্ভেই মর্মান্তিক মৃত্যু হয় প্রবীণ সজল কাঞ্জিলালের৷ মেট্রোর সেন্সর ব্যবস্থা অনুযায়ী সব কামরার দরজা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যায় না৷ এক্ষেত্রে সেন্সরের বিভ্রাটে দরজা খোলা থাকা অবস্থায় ছেড়ে দেয় ট্রেন৷ যার জেরে এই দুর্ঘটনা৷

মাঝপথে থমকে দাঁড়ানো, রেক থেকে ধোঁয়া বেরোনোর মতো সমস্যার কথা প্রায়ই শোনা যায়৷ এতে মেট্রো পরিষেবায় দেরি হয়৷ যাত্রীরা চূড়ান্ত হয়রানির মুখে পড়েন৷ ভূগর্ভের ভেতর থেকে তাঁদের উদ্ধারও করতে হয়েছে৷ কিন্তু, এমন মৃত্যুর ঘটনা কখনো ঘটেনি৷ এতে যাত্রীদের আতঙ্ক আরও বেড়েছে৷ মেট্রোয় নিয়মিত চড়েন নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা, বেসরকারি সংস্থার কর্মী অন্নপূর্ণা ভট্টাচার্য৷ তিনি বলেন, ‘‘মেট্রোয় চড়তে ভয়ই লাগে৷ কখন যে কী হয় সেটা বলা মুশকিল৷ একের পর এক ঘটনা ঘটছে৷ সজল কাঞ্জিলালের মৃত্যুর পর যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে৷’’ গড়িয়া থেকে প্রতিদিন মেট্রোয় চেপে এসপ্ল্যানেড আসেন মাসুদুল হক৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘মেট্রোয় ভিড় রোজই বাড়ছে৷ পরিষেবা উন্নত না করলে এই ভিড়ের চাপ নেওয়া সম্ভব নয়৷ এর ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে৷ কারো কোনো হেলদোল নেই৷’’

মেট্রোয় চড়তে ভয়ই লাগে: অন্নপূর্ণা ভট্টাচার্য

২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রো রেলপথ কলকাতার লাইফলাইন হয়ে উঠেছে৷ যানজট এড়িয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ শহরতলিতে দ্রুত পৌঁছনোর মাধ্যম পাতাল রেল৷ নোয়াপাড়া থেকে কবি সুভাষ স্টেশন পর্যন্ত রোজ ৩০০টি ট্রেন চলাচল করে৷ নূন্যতম ভাড়া পাঁচ টাকা বলে মেট্রোয় অফিসের সময়ে অনেক ভিড় হয়৷ লেকটাউনের বাসিন্দা, লেখিকা রীতা চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন৷ তিনিও একবার দরজায় আটকে যাচ্ছিলেন৷ রীতার ভাষায়, ‘‘মেয়ে আগে ট্রেনে উঠে পড়েছিল৷ আমি উঠতে যাব, তখনই দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ তখন আমি গায়ের সব শক্তি দিয়ে দরজার দুটি পাল্লাকে দুপাশে ঠেলে দিয়েছি৷ এক্ষেত্রেও সেন্সর কাজ করেনি৷ তাহলে দরজার মধ্যে কেউ থাকলে তা ফের খুলে যাওয়ার কথা৷ সেদিন খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম৷’’ প্রবীর সরকার কবি নজরুল মেট্রো স্টেশন থেকে রোজ চাঁদনি চকে যাতায়াত করেন৷ তাঁরও একই ধরনের অভিজ্ঞতা৷ তিনি বলেন, ‘‘একবার আমার ব্যাগ আটকে গিয়েছিল৷ কিন্তু, দরজা খোলেনি৷ মেট্রোর ঘন্টি একটানা বেজে চলেছে৷ সহযাত্রীরা দরজা ঠেলে আমাকে মুক্ত করেন৷’’ সজলের ক্ষেত্রে যাত্রীরা দরজা ঠেলে সরিয়ে দিলে তিনি হয়তো প্রাণে বেঁচে যেতেন৷

সেদিন খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম: রীতা চক্রবর্তী

প্রবীণ যাত্রীর মৃত্যু নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে ১৮ জুলাই৷ কলকাতা মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি তদন্ত করছে৷ তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর বোঝা যাবে কী ত্রুটি ছিল৷ তবে আগেই চালক ও গার্ডকে সাসপেন্ড করা হয়েছে৷ এই ঘটনার পর রেলের সিদ্ধান্ত, সেন্সরের সঙ্গে চালকের দেখার জন্য সাধারণ গাড়ির মতো আয়না বসানো হবে৷’’ ইন্দ্রাণী জানান, স্টেশন থেকে গাড়ি ছাড়ার আগে চালক ও গার্ড দেখে নেবেন, সব দরজা বন্ধ হয়েছে কি না৷

আপাতত দুর্ঘটনা রোধে জরিমানার দাওয়াই দিচ্ছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ৷ অনেক যাত্রীই শেষ মুহূর্তে দরজার মাঝখানে হাত গলিয়ে দেন যাতে ফের দরজাটি খুলে যায় এবং তিনি ট্রেনে উঠে পড়তে পারেন৷ এই কাজ করলে এ বার থেকে ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে৷ এই নিয়ম আগে থেকেই ছিল, কিন্তু সেভাবে কার্যকর করা হয়নি৷

কিন্তু, এতে কি কলকাতা মেট্রোর ‘অসুখ' সেরে যাবে? যাত্রীরা সেই আশা করছেন না৷ বহু পুরনো রেক দিয়ে এখনও চলছে মেট্রো পরিষেবা৷ এর মধ্যে কিছু রেকের বয়স পঁচিশ বছরের বেশি বলে বিভ্রাট লেগেই আছে৷ চিন থেকে নতুন রেক না আসা পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই সফর করতে হবে কলকাতার মানুষজনকে৷