আতশবাজি নিষিদ্ধ দীপাবলীতে
৬ নভেম্বর ২০২০আতশবাজি পুড়িয়ে উৎসব করার ঝোঁক এই উপমহাদেশের সর্বত্র৷ ভোটের পর বিজয় মিছিল হোক, বা প্রিয় ক্রিকেট, ফুটবল দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খুশি, শবেবরাতের পরব হোক, বা পুজোর বিসর্জন, আতশবাজি না পোড়ালে যেন ফুর্তিতে ঘাটতি থেকে যায়৷
কিন্তু এই বছর করোনা সংক্রমণের আবহে আসন্ন শীতের মরসুমে কোভিড ভাইরাসের আরও শক্তিশালী হয়ে হামলা চালানোর আশংকা৷ ফলে দীপাবলীর উৎসবে এবার যাতে আতশবাজি পুড়িয়ে বাতাসে দূষণের মাত্রা না বাড়ানো হয়, সেই অভিমত দিয়েছিলেন অনেকে৷ চিকিৎসকেরা বিশেষত বার বার সতর্ক করেছিলেন, যে দূষণ বাড়লে কোভিড সংক্রমণও বাড়বে৷
অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে স্বস্তি, যে এবার আতশবাজির কেনা-বেচা এবং বাজি পোড়ানো আইনত নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে৷ আদালতের নির্দেশে পুলিশ নজর রাখবে, যাতে কোথাও বাজি বিক্রিই না হতে পারে৷
বাজির পাইকারি ও খুচরো বিক্রেতারা এই নতুন ব্যবস্থায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন৷ যেহেতু সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বাজি তৈরি এবং মজুত করা শুরু হয়ে যায়, এবং আদালতের নির্দেশ এল প্রায় শেষ মুহূর্তে, অনেকেই আগাম টাকা দিয়ে বায়না করে বসে আছেন, যে টাকা তাদের আটকে থাকবে হয়ত আগামী বছর পর্যন্ত৷ ফলে বাজি বিক্রেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ৷
দক্ষিণ কলকাতার বাজি ব্যবসায়ী রতন বোস বললেন, ‘‘হিউজ লস হলো৷ লাইসেন্স ফি জমা দিয়ে দিয়েছি, ফায়ার ব্রিগেড লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে, স্থানীয় থানার ইন্সপেকশনও হয়ে গিয়েছিল৷ একেবারে শেষে, সাত দিন আগে যে পারমিশনটা দেয় (স্থানীয় থানা), সেটা আর দেয়নি৷ তার পর তো সব ক্যানসেলই হয়ে গেল৷’’
রতন বোস জানাচ্ছেন, ‘‘হোলসেলারদের ক্ষতি সবথেকে বেশি হলো৷ কারণ ম্যানুফ্যাকচারার অগাস্ট–সেপ্টেম্বরেই সব বেচে দেয়৷ হোলসেলাররা সেটা মজুত করে রাখে, বাজার বুঝে, দরের ওঠানামা দেখে মাল ছাড়ে৷ প্রচুর রিটেলারের কাছে মাল চলে গেছে৷ তাদের খুব ক্ষতি হলো৷’’
কিন্তু বাজি বন্ধের এই নির্দেশে খুশি পরিবেশবিদরা, যারা বহু বছর ধরে আতশবাজির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন৷ পরিবেশ আন্দোলনকারী সুভাষ দত্ত সরাসরিই বললেন, ‘‘আমরা এতদিন ধরে চেষ্টা করে এই নিষেধাজ্ঞা আনতে পারিনি৷ এবার এল৷ তবে আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে, যে করোনা তো আর সারা জীবন থাকবে না, তখন কী হবে? এটা চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া উচিত৷ করোনা থাকুক কি না থাকুক৷’’
দ্বিতীয় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বললেন সুভাষ দত্ত যে ৮০ শতাংশ আতশবাজিই বেআইনিভাবে তৈরি এবং বিক্রি হয়, যে বাজিগুলি আগে থেকেই নিষিদ্ধ৷ কিন্তু কেউ সেটা মানে না৷ এই নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে যেন সেরকমটা না হয়৷ আর তৃতীয় কথা, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে কেউ ভয় পাবে না৷ তার কারণ, বাজি যারা ফাটায়, তারা একটা অন্য মানসিকতার লোক৷ শাস্তিবিধান না হলে এদের ঠেকানো যাবে না৷
তবে এই অনিশ্চয়তার মধ্যে স্বস্তির বিষয় একটাই৷ কলকাতা শহরে এবার কোনও বাজির দোকান বসেনি৷ বাজি ফাটালে পুলিশ যে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে, তাও ঘোষণা করা হচ্ছে৷ লোকে সে'সব কতদূর মেনে চলে, সেটাই এখন দেখার৷