আদালতে মিয়ানমার - কিছু প্রশ্ন, কিছু উত্তর
দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যা প্রশ্নে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানি শুরু হয়েছে৷ মিয়ানমারের বক্তব্য জানাতে উপস্থিত হয়েছেন অং সান সুচিও৷ চলুন এক নজরে জেনে নেই এ বিষয়ক কিছু প্রশ্নের উত্তর৷
কেন গাম্বিয়া?
১৯৭৮ সালে গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসমর্থন করে গাম্বিয়া, ১৯৫৬ সালে কনভেনশন অনুসমর্থন করেছিল মিয়ানমারও৷ কনভেনশনের নয় নম্বর আর্টিকেল অনুযায়ী যেকোনো পক্ষই গণহত্যা প্রতিরোধে বিচার আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে৷ অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন- ওআইসির ৫৭ সদস্যের সমর্থনে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া এই মামলা দায়ের করেছে৷
গাম্বিয়ার অভিযোগ কী?
গাম্বিয়ার অভিযোগ, বিয়ে ও সন্তান নেয়া, চলাচলসহ রোহিঙ্গাদের নানা মৌলিক অধিকার পরিকল্পিতভাবে হরণ করেছে মিয়ানমার৷ রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে আটে রাখা এবং তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতেও সমর্থনের অভিযোগ আনা হয়েছে৷ গাম্বিয়া বলছে, এর সবকয়টিই ‘জেনোসাইডাল ইনটেন্ট’৷ ২০১৬ সালের অক্টোবর ও ২০১৭ সালের আগস্টে অভিযান চালিয়ে নারী ও শিশুসহ রোহিঙ্গা হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে৷
মিয়ানমার কী বলছে?
মিয়ানমারের নেতা অং সান সুচির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বিচার আদালতে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করছে৷ দেশটির সেনাবাহিনী ‘তাতমাদো’ও সরকারের সমর্থনে কাজ করার কথা জানিয়েছে৷ দেশটিতে সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সমালোচনা করা অ্যাকটিভিস্টদের প্রায়ই গ্রেপ্তার নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়৷ তারপরও বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা বিচার আদালতের প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছেন৷
কেন এ মামলা গুরুত্বপূর্ণ?
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ দীর্ঘদিনের৷ কিন্তু গাম্বিয়া মামলা করার আগ পর্যন্ত মিয়ানমারকে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি৷ এই মামলা শেষ হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে৷ এ কারণে মামলা শেষ হওয়ার অন্তর্বর্তী সময়ে রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিতে গাম্বিয়া বিচার আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছে৷ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা খুব দ্রুতই আসতে পারে৷
অন্তর্বর্তী আদেশ কী হতে পারে?
চাইলে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়া, নাগরিকত্ব দেয়া, বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন, মানবাধিকারকর্মীদের প্রবেশ নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ যেকোনো আদেশ দিতে পারে বিচার আদালত৷
বিচার আদালত কী করতে পারে?
বিচার আদালতের আদেশ মানতে সব পক্ষই বাধ্য৷ পাশাপাশি আদালতের সব আদেশের কপি পাঠানো হবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে৷ চাইলে জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থাও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে৷ অভিযোগ প্রমাণিত হলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় প্রশ্নের মুখে পডৃ়তে হতে পারে মিয়ানমারকে৷ পাশাপাশি রায় না মানলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কেও তার প্রভাব পড়তে পারে৷
বিচারক কারা?
বিভিন্ন দেশে বিচার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকা ১৫ জনকে নিয়ে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের বেঞ্চ৷ তবে মামলার কোনো পক্ষ চাইলে অস্থায়ী ভিত্তিতে একজন বিচারক নিয়োগের আবেদন করতে পারে৷ সাউথ আফ্রিকার জুরি ড. নাভানেথেম পিললায়কে বিচারক নিয়োগ দিয়েছে গাম্বিয়া৷ তিনি রুয়ান্ডা গণহত্যা ট্রাইব্যুনালের বিচারক ছিলেন৷ মিয়ানমারের নিয়োগ পেয়েছেন জার্মানির কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্লাউস ক্রেস৷
গণহত্যার আর কোন রায়?
২০০৭ সালে বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনার স্রেব্রেনিকায় সার্বিয়া গণহত্যা চালিয়েছে বলে রায় দেয়৷ একই সঙ্গে বসনিয়ার সার্ব জেনারেল রাতকো ম্লাদিচকে গ্রেপ্তার ও হস্তান্তর না করে সার্বিয়া গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে বলেও রায়ে বলা হয়৷ শেষ পর্যন্ত ম্লাদিচকে ২০১১ সালে ইয়ুগোস্লাভ ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয় সার্বিয়া৷
আর কী কী ব্য়বস্থা?
নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর অনুমতি দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত- আইসিসি৷ বাংলাদেশ ২০১০ সালে আইসিসির সদস্য হলেও মিয়ানমার সদস্য নয়৷ নভেম্বরেই আর্জেন্টিনার আদালতে রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে একটি তদন্ত দল গঠন করে৷ তবে এই দলকে সহযোগিতা না করার ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার৷
মিয়ানমার কী ব্যবস্থা নিয়েছে?
আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্য়র্থ হয়েছে মিয়ানমার৷ ২০১৮ সালের জুলাইয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করে৷ কিন্তু এরপর রোহিঙ্গা গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়াসহ গণহত্যার সব প্রমাণ মুছে ফেলার অভিযোগ আসে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে৷ ইন দিন গ্রামে গণহত্যায় জড়িত থাকা সাত সেনাসদস্যকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হলেও মাত্র সাত মাস পর তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়৷
এডিকে/কেএম (হিউম্যান রাইটস ওয়াচ) (হিউম্যান রাইটস ওয়াচ)