‘আদিবাসী এলাকায় রোহিঙ্গা পরিবারের চার সদস্য খুন'
২৯ মে ২০১৫বান্দরবান শহর থেকে অন্তত ৫ কিলোমিটার দূরে ক্যামলং এলাকায় নির্জন একটি খামারে যারা খুন হয়েছেন, তাদের মধ্যে দু'জন আপন ভাইবোন ও অপর দু'জন তাঁদের সন্তান৷ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশের একজন কর্মকর্তা টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, এই রোহিঙ্গা পরিবারটি কয়েক বছর আগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসে৷ কুহালং ইউনিয়নের বান্দরবান-চন্দ্রঘোনা সড়কের নির্জন ওই খামার বাড়িতে গিয়ে তিনি দেখেছেন, পাহাড়ের ঢালুতে ধাপ কেটে নির্মিত ছোট বাড়ির ভেতরে দুই শিশুসহ তিনজনকে ও বাইরে একজনকে হত্যা করা হয়েছে৷ নিহতরা হলেন – মোহাম্মদ আমিন (৪০) ও তাঁর ছেলে জুনায়েদ (১২), আমিনের বোন সামিরা বেগম (৪৫) ও সামিরার মেয়ে সৈয়দ নূর (৬)৷ আমিনের স্ত্রীর স্বজনরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত৷
কুহালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানু প্রু মারমা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আবু বক্কর নামে চট্টগ্রামের একজন ব্যবসায়ী ওই খামারের মালিক৷ এই খামার দেখাশোনা করতেন আবদুল করিম ও তার স্ত্রী সামিরা বেগম৷ কয়েক বছর আগে স্ত্রীকে নির্যাতন করে করিম পালিয়ে গেলে সামিরা তার ভাই মোহাম্মদ আমিনের পরিবারকে এখানে নিয়ে আসে৷ সেই থেকে মোহাম্মদ আমিন, তাঁর তৃতীয় স্ত্রী হাসিনা আক্তার ও বোন সামিরা বেগম এখানে থাকতেন৷ দিনে পাশের খামারের লোকজনের আনাগোনা থাকলেও রাতে তাঁরা ছাড়া কেউ ওই নির্জন এলাকায় থাকতেন না৷ তাই কারা কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি৷
স্থানীয় সাংবাদিক মিলন চক্রবর্তী টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় ওই খামারের পার্শ্ববর্তী খামারের তত্ত্বাবধায়ক গোপাল দাশ ও হ্লাথুই মারমা তাকে জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরে আমিনের সঙ্গে তার স্ত্রী হাসিনা আক্তারের দাম্পত্য কলহ চলছিল৷ গত ১৫ দিন আগে হাসিনা পারিবারিক কলহের জের ধরে চট্টগ্রামের দোহাজারী বার্মা কলোনিতে ভাইদের ওখানে চলে যায়৷ বৃহস্পতিবার বিকেলে মোহাম্মদ আমিনের শ্যালক এসেছিলেন৷ সঙ্গে আরো দু'একজন অপরিচিত লোক ছিলেন৷ শুক্রবার সকালে কারও কোনো সাড়া-শব্দ না পাওয়ায় খামারে গিয়ে চারজনকে মৃত পড়ে থাকতে দেখা যায়৷ এরপর তাঁরা পুলিশকে খবর দেন৷ কিন্তু আমিনের স্ত্রী বা শ্যালককে কোথাও দেখা যায়নি৷ গোপালের ধারণা, তারাই (আমিনের স্ত্রী ও শ্যালক) এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন৷ তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮টার মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে৷ কারণ রাতে খাওয়ার জন্য তারা যা রান্না করেছিল তা ঘরের মধ্যে পড়ে ছিল৷
জায়গার মালিক ব্যবসায়ী আবু বক্কর সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, ‘‘বান্দরবানে আমার ১২০ একর জায়গা রয়েছে৷ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেয়ারটেকার হিসাবে গোপাল দাশ নামে একজনকে দায়িত্ব দেই৷ পরে জানতে পারি গোপাল দাশ আমার জায়গাতে একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে থাকতে দিয়েছে৷ তারাই খামারটি দেখাশোনা করছে৷ তবে এতে কোনো সমস্যা হচ্ছিল না৷ আর এই জায়গা নিয়ে কারো সাথে আমার কোন বিরোধ নেই৷''
বান্দরবান সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে আমিনের স্ত্রী ও শ্যালকরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তাঁদের গ্রেফতারে সম্ভাব্য জায়গাগুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে৷ পুলিশের একটি টিম চট্টগ্রাম গেছে বলেও জানান তিনি৷ পাশাপাশি এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে কিনা সে বিষয়েও পুলিশ তদন্ত করছে৷ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে বহুবিবাহ প্রবণতা বেশি৷ সেই প্রবণতার কারণেই এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড৷