আধুনিক নৃত্য জগতের প্রতীক পিনা বাউশ মৃত
১ জুলাই ২০০৯মাত্র পাঁচ দিন আগে ক্যান্সার ধরা পড়ে এই বিশ্বখ্যাত নৃত্য নির্দেশক ও নৃত্যশিল্পী পিনা বাউশ-এর৷ মঙ্গলবার জার্মানির পশ্চিমে অবস্থিত ভুপারটাল শহরে ৬৮ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি৷ মারা গেলেন সেই শহরে, যেখানকার থিয়েটারে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে প্রধান পরিচালিকার কাজ করছিলেন বাউশ৷ একরকম নীরবেই৷
কারণ, কথা নয়, বরং অভিব্যক্তি, অঙ্গ-ভঙ্গিই তাঁকে বরাবর আকর্ষণ করেছিল৷ বাউশ বলতেন, ‘‘মানুষ যে ভাবে নড়া-চড়া করে, তা নয়, বরং তার শরীরের যা যা নড়ে-চড়ে - তাই আমাকে মুগ্ধ করে''৷ তাঁর সৃষ্ট ডান্স-থিয়েটার বা জার্মান ভাষায় টান্স-থিয়াটারের অর্থ বোঝাতে গিয়ে তিনি একবার বলেছিলেন : শিল্প নয়, শিল্প করতে পারা নয়৷ এর মূলে রয়েছে জীবন৷ কারণ, জীবন যা বলতে চায়, বোঝাতে চায় - সেটা তুলে ধরাই তো আসল৷ আর এ তো আমরা শুধু বাড়িতে নয়, আমাদের চারপাশে, সর্বত্র অনুভব করি, প্রত্যক্ষ করি৷ তাই আমার এই নাচের মাধ্যমেও এই জীবনবোধটাকেই দেখাতে চাই৷ আমাদের অনুভূতি, স্বপ্ন, আকাঙ্খা, বেদনা - যা সব মানুষের মধ্যে আছে, সেটাকে তুলে ধরতে চাই৷
আর এভাবেই নাচের তালে তালে, তার ছন্দে অবাক করা সব গল্প বলতেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত এই নৃত্যশিল্পী৷ কিন্তু এতো খ্যাতি, এতো পুরস্কার - কোন কিছুই যেন বাউশের কাছ থেকে সৃষ্টির আনন্দকে কেড়ে নিতে পারে নি৷ তাই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে গেছেন তিনি৷ শুধু দেশে নয়, বিদেশের মাটিতেও, জানালেন জার্মান প্রেসিডেন্ট হর্স্ট ক্যোলার৷ এই যেমন মাত্র তিন সপ্তাহ আগে চিলি থেকে ফিরে আসেন বাউশ৷ সৃষ্টি করেন তাঁর সর্ব শেষ সৃষ্টি - পালেরমো৷
বাউশের নাচের পর, করতালিতে ফেটে উঠত থিয়েটার গৃহ৷ লোকে বলতো - ম্যাজিক জানেন তিনি৷ মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করার ম্যাজিক৷ ভুপারটাল থিয়েটারের কর্মকর্তা মাটিয়াস নকের কথায় : একমাত্র পিনা বাউশের জন্যই বিশ্বের বহু মানুষ আমাদের ভুপারটাল শহরের নাম শুনেছেন৷ তাই তাঁর মৃত্যু শুধু জার্মানির ডান্স-থিয়েটারের জগতে নয়, গোটা বিশ্বের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি৷ তিনি আমাদের, সারা শহরের পিনা বাউশ৷
তবে শুধু পাশ্চাত্য নয়, প্রাচ্যের নৃত্যশৈলীও আকৃষ্ট করেছিল পিনা বাউশকে৷ পাড়ি দিয়েছিলেন ইন্দোনেশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত৷ যা বাউশের শিল্পকে আরো উদার, আরো বহুমুখী করে তুলেছিল৷ এনে দিয়েছিল নতুন গতি৷ আর তাই এই নৃত্যশিল্পীকে নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে নৃত্য-ভিত্তিক একটি ত্রিমাত্রিক চলচ্চিত্র তৈরীর কাজ শুরু করতে যাচ্ছিলেন জার্মানির অন্যতম চিত্র পরিচালক ভিম ভেন্ডার্স৷ ভেন্ডার্স-এর কথায় - বাউশকে কি আর দ্বিমাত্রিক ছায়াছবিতে বেঁধে রাখা যায় ?
প্রতিবেদক: দেবারতি গুহ, সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী