নারী কর্মীদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি
২০ অক্টোবর ২০১৫সোমবার বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ইমেলে পাঠানো এক বার্তায় এই হুমকি দেয়া হয়৷ আর এই ইমেল বার্তার একটি কপি ডয়চে ভেলে'র ঢাকা প্রতিনিধির কাছেও পৌঁছেছে৷
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে পাঠানো ওই ইমেল বার্তায় সংবাদমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা লক্ষ্য করছি অধিকাংশ পত্রপত্রিকায় আমাদের নামে আজেবাজে কথা লেখা হয়৷ তাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আহ্বান করছি, আপনারাও যদি নাস্তিকদের সহায়তাকারী হন তবে কাউকে ছাড়া হবে না৷''
তারা নারী কর্মীদের সংবাদমাধ্যম থেকে চাকরিচ্যুত করার দাবিসহ সংবাদমাধ্যমের কাছে ছয় দফা দাবি জানিয়েছে৷ তাতে বলা হয়েছে, ‘‘কোনো নাস্তিকের মৃত্যুর পরে পত্রিকায় কোনো প্রকার জিহাদ বিরোধী সংবাদ করা যাবে না৷ করলে সে পত্রিকায় চাকরিরত এবং মালিকপক্ষকে নাস্তিক, নাস্তিকতাবাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে গণ্য করে সমুলে উপড়ে ফেলা হবে৷''
তারা বলেছে, ‘‘যেহেতু নারীদের ঘরের বাইরে চাকরি করা, বেপর্দা হয়ে ঘোরাঘুরি করা ইসলামি শরিয়া মতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাই যাঁরা এদের চাকরি দিচ্ছেন, করাচ্ছেন, তাঁরাও সমানভাবে দোষী৷ সকল সংবাদমাধ্যমের প্রতি আহ্বান করছি নারীদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিন৷''
তারা তাদের ইমেল বার্তায় তাদের ভাষায় বেশ কয়েকজন নাস্তিক, ব্লগার, সাংস্কৃতিক কর্মীর নাম উল্লেখ করে হুঁশিয়ারিও জানিয়েছে৷ আর দাবি করেছে, ‘‘আমাদের কোনো হিটলিস্ট নাই৷ তবে এই মর্মে হুঁশিয়ারি প্রদান করা যাচ্ছে যে, দেশ কিংবা বিদেশে পালিয়ে থাকা নাস্তিকদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে কেউ যেন নাস্তিকতার দিকে ঝুঁকে না পড়েন৷ তাহলে পরিণতি হবে নিলয় নীল কিংবা ওয়াশিকুর বাবু, অভিজিৎ রায়ের মত৷ একটি নাস্তিককেও বেঁচে থাকতে দেয়া হবে না৷ এদের হত্যা করা আল্লাহ রাসুলের বিধান মতে ওয়াজিব৷''
এই বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা গণমাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নতুন এই হুমকির কথা জেনে ইমেলটি সংগ্রহ করেছি৷ ইমেলটি কারা পাঠিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷ এর আগেও তারা এ ধরনের ইমেল পাঠিয়েছে৷'' আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন তাহলে পুলিশকে জানালে তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে৷''
আর মৌলবাদীদের হাতে নির্যাতিত নারী সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘সরকার ও পুলিশ প্রশাসন চাইলে এই ইমেল বার্তা কারা পাঠিয়েছে তা চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব৷ কিন্তু সরকার সেটা করতে চায় কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন৷''
তিনি বলেন, ‘‘২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ কভার করতে গিয়ে আমি হামলা এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম, থানায় মামলাও করেছি৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ আটক বা গ্রেপ্তার হয়নি৷ আমি বিচার পাইনি৷ বিচার পাব বলে আশাও করিনা৷''
নাদিয়া আরো বলেন, ‘‘আমাদের নিজেদেরই এই জঙ্গি মৌলবাদীদের মোকাবেলা করতে হবে৷ এধরণের হুমকি তারা দিচ্ছে মিডিয়া কভারেজ পাওয়ার জন্য হয়তো৷ কিন্তু সামনে এলে আমরাও প্রতিরোধ করব৷ তাদের হুমকির কারণে আমরা নারীরা কাজকর্ম ছেড়ে দেব এমন ভাবার কোন কারণ নেই৷''
আনসারুল্লাহর নতুন হুমকি সম্পর্কে আপনার কী মত? জানিয়ে দিন নীচে মন্তব্যের ঘরে..