প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের দাবি
৪ আগস্ট ২০১৭অভিবাসন ও উদ্বাস্তু সংক্রান্ত ফেডারাল কার্যালয় ‘বাম্ফ’-এর হেড অফিস নুরেমবার্গ শহরে৷ ‘বাম্ফ’ আরো জানিয়েছে যে, এ বছরের প্রথম তিন মাসে প্রত্যাখ্যাত রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের প্রায় ২৪ শতাংশ আপিল করে সফল হয়েছেন – অর্থাৎ আদালতকে বোঝাতে পেরেছেন যে, তারা বাস্তবিক আশ্রয় পাবার যোগ্য৷ সফল আপিলকারীদের অধিকাংশ যুদ্ধপীড়িত সিরিয়া থেকে এসেছেন৷ অপরাপর ক্ষেত্রে আদালত মূলত ‘বাম্ফ’-এর সিদ্ধান্তই বজায় রেখেছেন৷
২০১৫-১৬ সালে বিপুল পরিমাণ উদ্বাস্তু জার্মানিতে আসেন ও তাদের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন দাখিল করেন৷ ‘বাম্ফ’ ইতিমধ্যে সেই সব জমে থাকা আবেদনের সংখ্যা ৮০ হাজারে নামিয়ে আনতে পেরেছে, বলে জানিয়েছে৷ সব মিলিয়ে ‘বাম্ফ’ চলতি বছরের প্রথম ছ'মাসে চার লাখের বেশি আবেদনপত্র পরীক্ষা করে দেখেছে ও তার মধ্যে ১১৯,০০০ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে৷ ২০১৬ সালে গোটা বছরে ‘বাম্ফ’ মোট সাত লাখ আবেদনপত্র যাচাই করতে পেরেছিল – ‘বাম্ফ’-এর কর্মক্ষমতা বাড়ার একটা কারণ এই যে, ‘বাম্ফ’-এ আরো অনেক বেশি কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে৷
২০১৭ সালের জুলাই মাস অবধি ‘বাম্ফ’-এর কাছে নতুন আবেদন জমা পড়েছে ১৩০,০০০ – যার মধ্যে ৪৮ হাজার আবেদনের ক্ষেত্রে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি৷
সামনে নির্বাচন
সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখে জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, অর্থাৎ দু'মাসেরও কম সময় বাকি৷ ওদিকে গত সপ্তাহে হামবুর্গে এক প্রত্যাখ্যাত ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী এলোপাথাড়ি ছুরি চালিয়ে একজন ব্যক্তিকে হত্যা ও আরো কয়েকজনকে আহত করার পর, উদ্বাস্তুদের কেন্দ্র করে জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক নতুন ইন্ধন পেয়েছে৷ খুব সম্ভবত তারই পরিপ্রেক্ষিতে ‘বাম্ফ’-এর প্রধান ইউটা কর্ড বুধবার তাঁর পরিসংখ্যান পেশ করেন৷ অন্যদিকে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের একাধিক রক্ষণশীল রাজনীতিক দাবি করেছেন যে, হামবুর্গের আততায়ীর মতো ‘‘বিপজ্জনক’’ ব্যক্তিদের কোনো কিছু ঘটার আগেই আটক করা দরকার৷
সহিংসতার ঘটনার সঙ্গে উদ্বাস্তুদের (অপ্রমাণিত) বিশেষ সংযোগ যেমন এক পর্যায়ের জার্মানদের কাছে একটি বদ্ধমূল ধারণা, তেমনই ‘স্ট্যার্ন’ পত্রিকার একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে যে, ৫১ শতাংশ জার্মান আজও উদ্বাস্তুদের আগমনের উপর কোনো সর্বোচ্চ সীমা আরোপ করার বিরোধী – অর্থাৎ জার্মানদের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ আজও উদ্বাস্তু নীতির প্রশ্নে চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের অনুগামী৷ ওদিকে সিডিইউ দলের বাভেরীয় সহযোগী সিএসইউ এখনও উদ্বাস্তুদের আগমনের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া সপক্ষে৷
মানবাধিকার
‘ডি ভেল্ট’ পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী স্ট্রাসবুর্গের ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত জার্মানির ব্রেমেন শহর থেকে এক ১৮ বছর বয়সি ‘‘বিপজ্জনক’’ বিদেশির বহিষ্কারকে রুখে দিয়েছে, যদিও জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত তার আপিল নাকচ করেছিল৷
যে সব উদ্বাস্তু, বিদেশি-বহিরাগত বা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের তরফ থেকে সন্ত্রাস বা সহিংস ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে, তাদের জন্য জার্মান নিরাপত্তা বিভাগ ও রাজনীতিক মহলের নতুন পরিভাষা হল ‘গেফেয়ারর্ডার’ বা যে ব্যক্তি বিপদ ঘটাতে পারে৷ জার্মানির ফেডারাল তদন্ত কার্যালয় বিকেএ কিন্তু বলছে যে, অভিবাসীদের সঙ্গে যুক্ত অপরাধমূলক ঘটনার সংখ্যা ২০১৭ সালের প্রথম তিন মাসে কমে ৬৪,৭০০-য় দাঁড়িয়েছে৷ এ ধরনের ঘটনায় সিরীয়, আফগান অথবা ইরাকিদের সংশ্লেষ কম – সেই তুলনায় আলজেরিয়া, মরক্কো, টিউনিশিয়া, গাম্বিয়া, নাইজেরিয়া ও সোমালিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের অপরাধের সঙ্গে সংযোগ গড়ের তুলনায় বেশি৷ অপরাধীদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে; প্রসঙ্গত, এই বয়সের জার্মান তরুণদের মধ্যেও অপরাধের প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে৷
আদালত বনাম ‘বাম্ফ’
‘বাম্ফ’-এর প্রধান ইউটা কর্ড বলেছেন যে, তাঁর লক্ষ্য হল, তারা জার্মানিতে থাকতেন পারবেন কিনা, সে বিষয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ‘‘যথাশীঘ্র সম্ভব স্পষ্ট’’ জবাব দেওয়া৷ এই উদ্দেশ্যে ‘বাম্ফ’ ক্রমেই নথিপত্র থেকে ইলেকট্রনিক প্রসেসিং-এর দিকে ঝুঁকছে৷ এক্ষেত্রে যে সব আপিল আদালতে প্রত্যাখ্যাত রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আপিলের মামলাগুলির শুনানি হয়, সেখানে আজও ফাইল চালাচালিতে বহু সময় লেগে যায়, বলে ‘বাম্ফ’-এর কর্মকর্তাদের অভিযোগ৷ অপরদিকে বার্লিনের প্রশাসনিক আদালতে ১৩ হাজার আপিলের মামলা ঝুলছে; কিন্তু ‘বাম্ফ’-এর কাছে কোনো তথ্য বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়লে ‘বাম্ফ’-এর হটলাইনে যেতে হয়, যেহেতু ‘বাম্ফ’ ‘‘বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ’’ মামলা ছাড়া আদালতে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি পাঠায় না৷
এসি/ডিজি (ইপিডি, কেএনএ, ডিপিএ)