আফগান জেল থেকে ফেরার ৪০০ বন্দি
৪ আগস্ট ২০২০রোবাবার আফগানিস্তানের জালালাবাদ জেলে আইএস হামলায় অন্তত ৪০০ বন্দি পালিয়েছে বলে সরকারি ভাবে জানালো আফগান প্রশাসন। একই সঙ্গে তাদের দাবি, ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে ১০ জন আইএস জঙ্গি। গুরুতর আহতের সংখ্যা ৪০।
ঘটনার সূত্রপাত রোবার দুপুরে। জালালাবাদ জেলের মূল ফটকের সামনে প্রথমে একটি বিধ্বংসী গাড়িবোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। পুলিশ এবং নিরাপত্তবাহিনীর সন্দেহ, ওই গাড়ির ভিতরে মানববোমা ছিল। বিস্ফোরণ হওয়া মাত্রই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যত্রতত্র ছুটোছুটি শুরু হয়। এই সুযোগে জেলের মূল দরজা লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে জঙ্গিরা। প্রাথমিক ভাবে দিশেহারা হয়ে পড়ে রক্ষীরা। গুলি ছুড়তে ছুড়তেই জেলের ভিতর ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা। কারাগারের একটি ব্লকের দখলও নিয়ে নেয়। কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় জেল। পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের যখন এই গুলিযুদ্ধ চলছে, তখন একের পর এক লক আপ খুলে দেওয়া হয়। পালাতে শুরু করে বন্দিরা। শুধু জেলের ভিতরেই নয়, জেলের অদূরে একটি বাড়িতেও ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা। সেখান থেকেও তারা লাগাতার আক্রমণ চালাতে থাকে।
জালালাবাদের প্রভিন্সিয়াল প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোববার সারা রাতই দুই পক্ষের মধ্যে গুলিযুদ্ধ চলে। সোমবার সকালেও তা চলতে থাকে। ইতিমধ্যেই এলাকায় পৌঁছয় নিরাপত্তবাহিনীর জওয়ানরা। তাদের সাহায্যে শেষ পর্যন্ত গুলিযুদ্ধ বন্ধ হয়। ১০ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়। তবে সব মিলিয়ে কতজন আইএস জঙ্গি এসেছিল, সে বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেনি প্রশাসন।
সোমবার গুলিযুদ্ধ বন্ধ হওয়ার পরে ফের জেলের দখল নেয় পুলিশ। তখনই দেখা যায় প্রায় ৪০০ বন্দি পালিয়েছে। তাদের খোঁজে সার্চ অপারেশনও শুরু হয়েছে। জেল সূত্র জানিয়েছে, ওই ৪০০ বন্দির মধ্যে বেশ কিছু আইএস এবং তালেবান যোদ্ধা রয়েছে। আইএস জঙ্গিরা বিশেষ ব্যক্তিকে মুক্ত করতে এসেছিল কি না, সে বিষয়ে অবশ্য কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
সোমবারেই এই ঘটনায় তাদের হাত নেই বলে জানিয়েছিল তালেবান। পরে আইএস ঘটনার দায় স্বীকার করে। খোরাসান প্রভিন্সের আইএস সংগঠন বিবৃতি দিয়ে দায় স্বীকার করেছে।
বছরখানেক আগেই আফগান সরকার জানিয়েছিল, দেশ এখন আইএস মুক্ত। প্রতিটি প্রভিন্স থেকেই আইএস জঙ্গিরা পালিয়েছে। কিন্তু জালালাবাদের ঘটনা প্রমাণ করে দিল, আফগানিস্তানে আইএস কেবল সক্রিয় নয়, যথেষ্ট শক্তিশালী। এই ঘটনার পরে আরও একটি প্রশ্ন সামনে চলে আসছে। তালেবানের সঙ্গে আফগান সরকারের যে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, ঈদের পরে ফের যে শান্তি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা কি ভেস্তে গেল? তালেবান এবং আফগান প্রশাসন, কেউই এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, ডিপিএ)