আফগানিস্তানের নারী
৬ এপ্রিল ২০১৪২০০১ সালে তালিবানদের পতনের পর আফগানিস্তানে নারী অধিকারের ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি হয়েছে৷ সংবিধানে নারী পুরুষের সমানাধিকার সংরক্ষিত হয়েছে৷ ২.৮ মিলিয়নের বেশি মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে৷ জাতীয় সংসদে প্রায় ৩০ শতাংশ সাংসদ নারী৷
কারজাই সরকার লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে৷ ২০০৯ সালে নারী নির্যাতন রোধক একটি আইন পাস হয়েছে৷ এই আইনে শুধু ধর্ষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধেই শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়নি৷ বাল্যবিবাহ, জোর করে বিয়ে দেওয়া, নারী ব্যবসা ইত্যাদিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়৷ কিন্তু আইন থাকলেও দৈনন্দিন জীবনে তা কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ৷
আইনকানুনের শ্লথ গতি
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনর নাভি পিল্লাই সমালোচনা করে বলেন, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধক আইনকানুন খুব শ্লথ গতিতে অগ্রসর হচ্ছে৷ পুলিশ, সরকারি প্রসিকিউটর, আদালত মেয়েদের রক্ষা করার জন্য সরকারি হাতিয়ারগুলি কাজে লাগানোর ব্যাপারে গড়িমসি করছে৷ অপরাধ সংঘটিত হলে শাস্তির চেয়ে সমঝোতার মাধ্যমে মিটমাট বা মীমাংসা করতে আগ্রহী আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ৷ বলেন ‘আফগানিস্তান অ্যানালিস্টস নেটওয়ার্ক'-এর সারি কুভো৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘সঠিক সংযোগ ও টেলিফোন নম্বর থাকলে অপরাধীরা সেই ‘ন্যায়বিচারই' পায়, যা তারা নিজেরা সঠিক বলে মনে করে৷''
দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থা
বিশেষজ্ঞরা একে রাজনীতি প্রভাবিত দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থা বলে অভিহিত করেন৷ সম্প্রতি সংসদে একটি আইনের খসড়া পেশ করা হয়, যাতে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আদালতে হাজির আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়৷ আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে আইনের এই খসড়ায় পরিবর্তন আনা হয়৷
তালেবানের পতনের পর আফগানিস্তানে নারী অধিকার সুরক্ষিত হবে বলে আশা করা হয়েছিল৷ কিন্তু আজও পিতৃতান্ত্রিক সমাজের ঘেরাটোপেই রয়ে গেছে দেশটি – বলেন সারি কুভো৷ তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েদের যে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হলে বাবা কিংবা স্বামীর ওপর নির্ভর করতে হয়৷''
জাতিসংঘের নারী সংস্থা ‘ইউএন উইমেন'এর নির্বাহী পরিচালক ফুমজিলে ম্লামবো এনচুকা-ও মনে করেন, আফগানিস্তানের নারীরা শিক্ষা, চাকরি, রাজনীতি সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছেন৷ বৈষম্যমূলক সাংস্কৃতিক রীতিনীতি এর মূল কারণ৷ তাঁর মতে, ৯০ শতাংশ আফগান নারী সহিংসতার শিকার৷ সহিংসতা বলতে শারীরিক, মানসিক, যৌন, অর্থনৈতিক কিংবা সামাজিক ক্ষেত্রে সব ধরনের দমনমূলক কর্মকাণ্ডই বোঝায়৷ ইদানীং উচ্চপদস্থ নারী-সরকারি কর্মচারীদের হত্যার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে৷
অগ্রগতি বিনষ্ট হতে পারে
আশঙ্কা করা হচ্ছে, ‘‘গত কয়েক বছরের অগ্রগতি আইনকানুন ও রাজনীতির ফাঁকফোকরে বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে৷'' বলেন সারি কুভো৷ আফগানিস্তান থেকে ন্যাটোর সেনা প্রত্যাহার করা হলে এই সম্ভাবনা আরো বেড়ে যেতে পারে৷ সেনাবাহিনীর একটা অংশ ছোট আকারে প্রশিক্ষণকারী হিসাবে থাকবে কিনা, উন্নয়ন সাহায্যই বা কী ভাবে চলবে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়৷
কারজাই পরবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তালিবান তাদের হামলা আরো তীব্র করবে কিনা সেটাও দেখার বিষয়৷ নারী অধিকারের বিষয়টিতে নতুন সরকারের ভূমিকা কীরকম হবে, সেটাও অস্পষ্ট৷
সারি কুভো মনে করেন, আন্তর্জাতিক মহলের উচিত হবে মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক দায়দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে আফগানিস্তানের নতুন সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা৷