আফগানিস্তানের নারী কোডারদের কথা
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮‘ফাইট অ্যাগেন্সট ওপিয়াম' গেমটিতে এক আফগান সেনা নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে৷ ২০ বছরের খাতেরা মোহাম্মদি এই গেম তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ এই গেম তরুণদের মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন হতে সহায়তা করবে৷
মোহাম্মদি জানান, তাঁর এক ভাই মার্কিন সেনাদের সঙ্গে অনুবাদক হিসেবে কাজ করেছিলেন৷ ভাইয়ের কাছ থেকে তিনি প্রতিদিন পপি চাষ, ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ, মাদক পাচারকারী ইত্যাদি সম্পর্কে শুনেছেন৷ গেম তৈরির সময় সেই বিষয়গুলো তাঁর কাজে লেগেছে বলে জানান মোহাম্মদি৷ তাইতো গেমটি তৈরি হওয়ার পর প্রথম ভাইকেই সেটি খেলতে দিয়েছিলেন তিনি৷ নিরাপত্তার খাতিরে ভাইয়ের পুরো নামটি প্রকাশ করেননি মোহাম্মদি৷
জাতিসংঘের হিসেবে, বিশ্বে পপি চাষে আফগানিস্তান শীর্ষে রয়েছে৷ এমনকি বাকি অন্যসব দেশে যে পরিমাণ পপি চাষ হয়, আফগানিস্তানে হয় তার চেয়ে বেশি৷ পপি থেকে পরে আফিম ও হেরোইন উৎপাদিত হয়৷ জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবান পপি চাষের সঙ্গে জড়িত৷
হেরাত শহরের কম্পিউটার কেন্দ্রটির নাম ‘কোড টু ইন্সপায়ার' বা সিটিআই৷ প্রায় ৮০ জন নারী সেখানে ভিডিও গেমস তৈরি, অ্যাপস তৈরি, ওয়েবসাইট বানানো, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি নানান বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷ ফেরেশতে ফরগ নামে হেরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষক শুধু মেয়েদের জন্য এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফরগ ইরানে জন্ম নেয়া আফগান শরণার্থী ছিলেন৷
সিটিআই এর প্রোজেক্ট ম্যানেজার হাসিব রাসা জানান, ‘‘আফগানিস্তানে মেয়েদের জন্য চাকরি পাওয়া এবং ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করা সহজ নয়৷ কিন্তু এখানে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর মেয়েরা ঘরে বসে ল্যাপটপে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবো৷'' পুরো আফগানিস্তানে এমন স্কুল ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি৷
কেন্দ্রের প্রশিক্ষক অজিতা আজিমি বলেন, ‘‘মেয়েদের জন্য প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করার ভালো সুযোগ এটি৷ এখানে এসে মেয়েরা তাঁদের দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে পারে৷''
বিশ বছরের আরেক প্রশিক্ষণার্থী ফ্রাহনাজ ওসমানি ঠিক সেই কাজটি করছেন৷ তিনি গ্রাফিক ডিজাইন শিখছেন৷ তাঁর ইচ্ছা আফগান নারী চরিত্রের স্টিকার বানানো৷ ‘‘আমরা যখন বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করি তখন বাইরের স্টিকার ব্যবহার করি৷ এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা নিজেদের স্টিকার বানাবার আশা করছি৷ তাহলে আমরা সেগুলো দিয়ে চ্যাট করতে পারব৷ এর ফলে বিশ্বও দেখবে যে, আফগান মেয়েরাও কিছু করতে পারে,'' বলেন ওসমানি৷
১৮ বছরের সামিরা আনসারি প্রথম যখন কোডিং এর কথা শোনেন তখন অবাক হয়েছিলেন৷ কিন্তু এখন তিনি কোডিং শিখে ওয়েব ডিজাইনার হতে চান৷ আনসারি বলেন, ‘‘যখন জানলাম কোডিং শেখার পরই মানুষ ওয়েবসাইট ডিজাইনের মতো সৃষ্টিশীল কাজ করতে পারে , তখন আমিও এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি৷''
এ বিষয়ে আপনার কোন মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷
জেডএইচ/ডিজি (এপি)