গন্ডারের শিং
৭ মে ২০১২গন্ডার বাঁচানোর চেষ্টা চলছে গত কয়েক দশক ধরে৷ এক্ষেত্রে সাফল্যও আছে, কিন্তু চোরা শিকারিদের উৎপাতও থেমে নেই৷ এশিয়ার বুনিয়াদি ওষুধ প্রস্তুত করতে বাড়ছে গন্ডারের শিং-এর চাহিদা৷ তাই শিকারিরা সুযোগ পেলেই হত্যা করছে গন্ডার৷
সারা বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় গন্ডারের বসতি সবচেয়ে বেশি৷ এই প্রাণী রক্ষায় সেদেশে চেষ্টারও কমতি নেই৷ কিন্তু কিছুতেই যেন থামানো যাচ্ছে না চোরা শিকারিদের৷ বরং শিকারির হানায় গন্ডার নিহতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ ২০০৭ সালে ১৩টি গন্ডার চোরা শিকারিদের কবলে পড়েছিল৷ গত বছর এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪৮ এবং চলতি বছর ইতিমধ্যে দুই শতাধিক গন্ডার প্রাণ হারিয়েছে৷ কেনিয়া, জিম্বাবোয়েসহ অন্যান্য দেশে চোরাশিকারের সংখ্যা বাড়ছে বটে কিন্তু সেটা এত দ্রুত নয়৷
অবশ্য গন্ডার সংরক্ষণেও আফ্রিকার সাফল্য কম নয়৷ আফ্রিকায় বর্তমানে সাদা গন্ডারের সংখ্যা ২০,৭০০ অন্যদিকে কালো গন্ডারের সংখ্যা ৪,৮০০৷ কিন্তু চোরা শিকারিরা আফ্রিকার এই সাফল্যকে ক্রমশ ম্লান করে দেওয়ার চেষ্টায় মত্ত৷ এশিয়ার বুনিয়াদি ওষুধ শিল্পে গন্ডারের শিং-এর চাহিদা ব্যাপক৷ কালোবাজারে এই শিং-এর মূল্য সোনার চেয়ে বেশি৷ এক কেজি শিং সেখানে বিক্রি হয় ৫০ হাজার ইউরোতে৷
চীন একসময় ছিল এই শিং-এর মূল ক্রেতা দেশ৷ কিন্তু গন্ডারের শিং বিক্রির উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা মানতে শুরু করেছে সেদেশ৷ ট্রাফিক নামক একটি মনিটরিং সংস্থার মুখপাত্র লু আনান-এর মতে, ‘‘চীনে এখন ওষুধ তৈরিতে শিং-এর ব্যবহার দূর্লভ৷ ১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পর থেকে সেদেশে এই শিং ব্যবহার কমে গেছে''৷
প্রশ্ন আসতে পারে, গন্ডারের শিং তাহলে এখন কোথায় বিক্রি হয়? উত্তর হচ্ছে ভিয়েতনাম৷ সেদেশে শিং-এর গুঁড়ো ব্যবহার করা হয় জ্বরের ওষুধ হিসেবে৷ শুধু তাই নয় যৌবন ধরে রাখতে এবং ক্যান্সার নিরাময়েও নাকি এই গুঁড়ো কার্যকর৷ বলাবাহুল্য গন্ডারের শিং-এর এই ব্যবহার বিজ্ঞানসম্মত নয়৷ এই শিং-এ রয়েছে বিপুল পরিমাণ কেরাটিন, যা মানুষের হাতের নখেও পাওয়া যায়৷ কিন্তু যুগ যুগ ধরে প্রচলিত এসব ওষুধের চাহিদা এখনো কমছে না৷ তাই বাড়ছে গন্ডারের শিংয়ের চাহিদা৷ চলছে চোরা শিকারিদের উৎপাত৷ এভাবে চলতে থাকলে একসময় পৃথিবীর বুক থেকে যে গন্ডার হারিয়ে যেতে পারে, এই শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম/এএফপি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ