আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করছেন এর্দোয়ান
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১তুরস্ক এখন আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য, শিক্ষা, কূটনৈতিক, পরিকাঠামো, রাজনৈতিক, সামাজিক সম্পর্ক আরো বাড়াচ্ছে৷ তারা এখন নিজেদের ইউরেশিয়ান নয়, আফ্রো-ইউরেশিয়ান দেশ বলছে৷
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক আরো ভালো করাকে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷ গত ১০ বছরে আফ্রিকায় তুরস্কের কূটনীতিকদের সংখ্যা চারগুণ বাড়ানো হয়েছে৷ ২০০৯ সালে আফ্রিকার দেশগুলিতে মাত্র ১২টি দূতাবাস ছিল৷ ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪২৷ আরো দুইটি দূতাবাস খোলা হচ্ছে৷
২০০২ সালে সাব-সাহারান আফ্রিকার সঙ্গে তুরস্কের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল একশ কোটি ডলার। ২০১৯-এ তা হয়েছে ৭৬০ কোটি ডলার। বিদেশে তুরস্কের সব চেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি হলো সোমালিয়া। তুরস্কের সেনা সেখানে সোমালিয়ার সেনাকে প্রশিক্ষণ দেয়। সুদান, নাইজার, চাড, জিবুতি, গিনির মতো দেশগুলির পাশাপাশি সোমালিয়া তুরস্কের কাছ থেকে ঢালাও সাহায্য পেয়ে থাকে।
আরো বড় শক্তি হওয়ার লক্ষ্যে
বছর কুড়ি আগে এর্দোয়ান ক্ষমতায় আসার পর থেকে তুরস্ক বিশ্বে আরো বড় শক্তি হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। তাই প্রতিবেশী দেশগুলির বাইরে তাদের নজর পড়েছে।
জেনোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তুরস্কের আফ্রিকা নীতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ শিক্ষাবিদ ফেডরিকো ডনেলি ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ২০০৪-০৫ সালে এর্দোয়ান সরকার ঠিক করে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তুরস্ক নতুন করে অগ্রণী ভূমিকা নেবে।
তুরস্কের দাবি ছিল, তারা বিশ্বের অবদমিত মানুষের হয়ে কথা বলছে। প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের বক্তব্য, বিশ্ব পাঁচ দেশের থেকে অনেক বড়। পাঁচ দেশ মানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য। এই নীতিকে সামনে রেখেই এগোচ্ছে এর্দোয়ানের তুরস্ক।
দক্ষিণ আফ্রিকায় তুরস্কের রাষ্ট্রদূত এলিফ উলগেন ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘তুরস্ক বিশ্বের ভুলে যাওয়া গোষ্ঠীদের হয়ে কথা বলে। জতিসংঘে এর্দোয়ান নির্ভয়ে অবদমিত মানুষ ও দেশের হয়ে কথা বলেছেন। তাই তুরস্কের নেতৃত্বের দিকে এই দেশগুলি তাকিয়ে আছে।’’
ঔপনিবেশিক অতীত নেই
আফ্রিকার দেগুলির কাছে তুরস্ক নিজেদের ভাইয়ের মতো এবং সাহায্যকারী দেশ হিসাবে তুলে ধরেছে। ইউরোপের দেশগুলির অতীত ইতিহাসের তুলনায় এটা একেবারে উল্টো মেরুর অবস্থান। ইউরোপের দেশগুলি আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করেছিল।
ডনেলির মতে, তুরস্কের একটা সুবিধা আছে। অতীতে তারা ঔপনিবেশিক শক্তি ছিল না। অটোমান সাম্রাজ্যের সময় আফ্রিকার অনেক দেশের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক ভালো ছিল। পশ্চিমা দেশগুলির ক্ষেত্রে তা বলা যাচ্ছে না। তারা ছিল ঔপনিবেশিক শক্তি।
কূটনীতিক উলগেনও জানিয়েছেন, তুরস্কের কোনো কলোনিয়াল-অতীত নেই। আর এই দেশগুলিকে উপনিবেশ হিসাবে থাকার স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়।
তুরস্কের কৌশল
২০১১ সালে এর্দোয়ান মোগাদিসু গিয়েছিলেন। গত ২০ বছরের মধ্যে তিনিই প্রথম আফ্রিকার বাইরের দেশের নেতা যিনি মোগাদিসু গেলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘এখানে যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, তা হলো সভ্যতা ও সাম্প্রতিক মূল্যবোধের পরীক্ষা৷’’ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘সোমালিয়ার ভাই ও বোনেদের পাশে থাকতে এসেছি। এটা একদিনের জন্য নয়। আমরা পাশে থাকব। একদিনের জন্যও ভাই, বোনেদের ছাড়ব না৷’’ তাঁদের এই সফরের পর সোমালিয়া আবার গুরুত্ব পেল।
সোমালিয়াকে তুরস্ক একশ কোটি ডলার সাহায্য করেছে পরিকাঠামো বানানোর জন্য। তুরস্কের সব চেয়ে বড় দূতাবাস সোমালিয়াতেই।
২০২০ সালে সেনেগালের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের সময়ও এর্দোয়ান বলেছেন, আফ্রিকার মানুষদের আমরা নিজেদের ভাই-বোন মনে করি। আমরা মানবিকভাবে তাঁদের কষ্টকে দেখি।
মিশন সফল?
তুরস্কের এই আফ্রিকা নীতির ফলে সেদেশের মানুষের মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে। তুরস্ক এখন যে নীতি নিয়েছে, তা কাজে এসেছে। ডিডাব্লিউর সোমালিয়ার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, সোমালিয়ার মানুষদের তুরস্কের জনগণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তাঁরা বলবেন, ওরা আমাদের ভাই ও বোন।
ডনেলির মতে, আফ্রিকা সম্পর্কে তুরস্কের মানুষের ধারণাও বদলেছে।
সুপারপাওয়ার নয়
তুরস্ককে বলা যেতে পারে আফ্রিকায় নতুন শক্তি, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপারপাওয়ার নয়।
লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আফ্রিকার রাজনীতি বিষয়ক অধ্যাপক উলফ এঙ্গেল বলেছেন, আফ্রিকায় তুরস্ক সব চেয়ে বড় শক্তি নয়। তুরস্ককে আমিরাত, কাতার, সৌদি আরব বা ইরানের সমগোত্রীয় বলা যেতে পারে। তারা সীমাবদ্ধ অঞ্চলে নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।
ডনেলি মনে করেন, তুরস্কের আসল ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেখা ঠিক হবে না। তারা চীন বা ফ্রান্সের মতো শক্তি নয়।
তুরস্ককে বলা যেতে পারে আফ্রিকায় নতুন শক্তি, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপারপাওয়ার নয়।
লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আফ্রিকার রাজনীতি বিষয়ক অধ্যাপক উলফ এঙ্গেল বলেছেন, আফ্রিকায় তুরস্ক সব চেয়ে বড় শক্তি নয়। তুরস্ককে আমিরাত, কাতার, সৌদি আরব বা ইরানের সমগোত্রীয় বলা যেতে পারে। তারা সীমাবদ্ধ অঞ্চলে নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।
ডনেলি মনে করেন, তুরস্কের আসল ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেখা ঠিক হবে না। তারা চীন বা ফ্রান্সের মতো শক্তি নয়।