আফ্রিকায় পরিবেশ সংরক্ষণে জার্মান ফুটবলাররা
৩১ মে ২০১৩নামিবিয়ার উপকূলে ছোট্ট শহর ওয়ালভিস বে'র হাই স্কুল৷ ‘গ্লোবাল ইউনাইটেড'-এর প্রতিষ্ঠাতা লুৎস ফানেনস্টিল ছিলেন পেশাদারি ফুটবলার৷ এলাকাটা তাঁর চেনা৷ ‘অপচয় কোরো না, অভাবে পড়ো না', ‘আমরা আবর্জনা চাই না' – স্কুলটি এই পরিবেশ উদ্যোগে সামিল হয়েছে৷ লুৎস সেটাকেই তার মটো করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা ফুটবল ভালোবাসি, আমরা আমাদের গ্রহকেও ভালোবাসি৷''
পেশাদারি ফুটবলাররা হাত লাগিয়েছেন৷ আবর্জনা রিসাইক্লিং'এর স্থানটি এখন থেকে স্কুলের প্রাঙ্গণেই থাকবে৷ পেশাদারি ফুটবলাররা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আবর্জনা বাছাই সম্পর্কে সচেতন করেছেন৷ তারপর হাতে-কলমে কাজটা করে দেখানো হয়েছে৷ কাগজ আর পিচবোর্ড যেখানে লেখা রয়েছে, সেখানে ফেলতে হবে৷ কিশোর-কিশোরীরা বাড়িতেও তাই করবে৷
স্কুলের পরিচালক নিজেও হাত লাগিয়েছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে বিশ্বাস করেন বলে৷ আবার যে স্কুল সবচেয়ে ভালোভাবে আবর্জনা বাছাই করতে পারবে, তারা ৫০০ ইউরো পুরস্কার পাবে৷ সেটা স্কুল লাইব্রেরির কাজে লাগবে৷ ওয়ালভিস বে'র ডিউনসাইড হাই স্কুলের পরিচালক আনসি ফান ভুরেন বলেন, ‘‘রিসাইকেল করা যে প্রয়োজন, সেটা ওদের বার বার মনে করিয়ে দিতে হয়৷ কিন্তু যে দেশে ফুটবল একটা বিরাট ব্যাপার, সেখানে যদি পেশাদারি ফুটবলাররা সঙ্গে থাকেন, তাহলে ওরা আরো বেশি প্রেরণা পাবে বলে আমার ধারণা৷''
আনসি ঠিকই বলেছেন৷ পুরনো দিনের ফুটবল স্টারদের শো দেখে সবাই মুগ্ধ৷ এককালে বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের খেলোয়াড় লোটার সিপেল'কে ছোটোরা চেনে না বটে, কিন্তু তারা জার্মানির সেরা ফুটবল ক্লাবগুলোকে চেনে ঠিকই৷
শহরের বাইরে দৃশ্যটা একটু আলাদা৷ ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিচ' হল এই এলাকার সবচেয়ে বিখ্যাত সমুদ্রসৈকত৷ ছাত্রছাত্রীরা ফুটবলারদের সঙ্গে একসঙ্গে ময়লা কুড়িয়ে সেই সৈকতকে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করছে৷ অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের তীরে এই সৈকত পাঁচ কিলোমিটার লম্বা৷ সাগরের জল যে কী পরিমাণ আবর্জনা বয়ে নিয়ে আসে, তা বিশ্বাস করা সত্যি বেশ কঠিন৷
কিশোর-কিশোরীরা প্লাস্টিক, ফয়েল, ভাঙা গেলাস, বোতলের ছিপি কুড়িয়ে পেয়েছে৷ তাদের মতে, এটা একটা খুব ভালো উদ্যোগ৷ কারণ এর মাধ্যমে সমাজসেবা করা হচ্ছে৷
‘রেন্ট এ ড্রাম' সংস্থা নামিবিয়ার রিসাইক্লিং প্রণালী গড়ে তুলেছে৷ তারা স্কুলগুলোকেও সাহায্য করে থাকে৷ সংস্থাটি আবর্জনা তুলে নিয়ে গিয়ে আলাদা করে৷ তা থেকে আবার নতুন পদার্থ তৈরি হয় প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায়৷ এখনও আবর্জনা ঠিক জায়গায় ফেলার, কিংবা তার প্রকৃতি অনুযায়ী আলাদা করা, এ সবের বিশেষ চল নেই৷ ‘রিসাইকেল নামিবিয়া ফোরাম' পরিবেশ উদ্যোগের ভল্ফগাং শেংক বলেন, ‘‘যেটা এখনও আরো ভালোভাবে করা সম্ভব, সেটা হলো আবর্জনা সংগ্রহের কার্যকারিতা বাড়ানো৷ যেমন আমরা দেখেছি, পুরানো কাগজের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি, কিন্তু টিনের ক্যানের পরিমাণ বড়ই কম৷ আরো অনেক বেশি প্লাস্টিক ফেরত আসতে পারে৷''
সন্ধ্যায় স্টেডিয়ামে আসল খেলা৷ বুন্ডেসলিগার সাবেক খেলোয়াড়দের সঙ্গে নামিবিয়ার একটি দলের ম্যাচ, যার শিরোনাম ‘ক্লাইমেট-কিক ২০১৩'৷ নীল জার্সি পরা ‘গ্লোবাল ইউনাইটেড' দল শীঘ্রই ৩-০ গোলে এগিয়ে৷ প্রায় ৫০০ দর্শক এসেছে এই ক্লাইমেট ইন্টারন্যাশনাল খেলাটি দেখতে৷
নামিবিয়ার দলও কম যায় না৷ হাফটাইমে স্কোর ৩-২৷ তারপর নামিবিয়ার দল কয়েকটা সুযোগ নষ্ট করেছে৷ সাবেক বুন্ডেসলিগা কিকার শন ডান্ডি দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ৷ একাই তিনটে গোল করেছেন৷ হাততালিও পেয়েছেন৷ বুন্ডেসলিগার সাবেক তারকারা জিতলেন ৭-৩ গোলে৷ এটা ছিল নামিবিয়ায় তাদের চতুর্থ খেলা৷
গোল করা যতো সহজ, স্থায়ী পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি করা ততোটা সহজ নয়৷ তাই ২০১৪ সালেও গ্লোবাল ইউনাইটেড'এর প্রাক্তন ফুটবল তারকারা আবার মাঠে নামবেন৷
এসি / এসবি