আফ্রিকায় সমকামীরা যেমন আছেন
২ আগস্ট ২০১৪ক্যামেরুনে ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই সাংবাদিক ও সমকামী অ্যাক্টিভিস্ট এরিক লেমবেমবেকে তাঁর বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়৷ সারা দেহে মারাত্মক নির্যাতনের চিহ্ন৷ পুলিশ তদন্ত শুরু করে৷ এক বছর পর ফলাফল ‘কিছুই না' – ক্ষোভের সাথে এ কথা জানান ক্যামেরুনস্থ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংঘের উপপ্রধান ড্রিসা৷ তাঁর কথায়, ‘‘সম্ভবত এব্যাপারে কোনো জিজ্ঞাসাবাদই করা হয়নি৷ আজ পর্যন্ত কোনো অগ্রগতিই লক্ষ্য করা যায়নি৷''
যৌন সংখ্যালঘুরা ঝুঁকির মুখে
আফ্রিকায় যৌন সংখ্যালঘুদের সময়টা ভাল নয় এখন৷ এবছরের প্রথম দিকে নাইজেরিয়া ও উগান্ডার প্রেসিডেন্ট একটি আইনে স্বাক্ষর করেছেন, যার আওতায় সমকামিতাকে দণ্ডণীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হয়৷ এরফলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে৷
সরকারি পর্যায়ে এই ধরনের ‘সমকামী আতঙ্ক' সমকামীদের প্রতি বৈরিতাকে সাহস জোগাচ্ছে৷ আর তাই তো লেমবেমবের মতো অ্যাক্টিভিস্টদের হত্যা করেও পার পেয়ে যাচ্ছে খুনিরা৷ ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকা ও আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে সমকামীরা আত্মগোপন করে থাকতে বাধ্য হন৷
পুলিশ নির্বিকার
এক্ষেত্রে পুলিশের সাহায্য পাওয়া যায় খুব কমই, বলেন কেনিয়াস্থ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কর্মী নীলা ঘোষাল৷
সমকামী, উভলিঙ্গ কিংবা যৌন সংখ্যালঘুরা প্রায়ই নির্যাতনের শিকার হন৷ পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে গেলে হাস্যাস্পদ হতে হয় তাঁদের৷ এমনকি কারাবন্দি হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷
সমকামিতাকে অবৈধ করার ফলে অনেক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও ঘটছে৷ যেমন এইডস দমনে সাফল্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ উগান্ডার নতুন আইনের কারণে চিকিত্সকরা এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন৷ সমকামীদের সংস্পর্শে এলেও কারাদণ্ডের ঝুঁকি থাকে৷ একারণে এইডস দমনে প্রচারণা ও পরামর্শদান অসম্ভব হয়ে পড়ছে৷
উগান্ডার সাফল্য এখন স্তিমিত
এইডস প্রতিরোধে উগান্ডা একসময় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল৷ এই সাফল্য এখন মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করছে জাতিসংঘ৷ পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, যেসব দেশ সমকামীদের অপরাধী হিসাবে গণ্য করে, সেসব দেশে এইচআইভি সংক্রমণের হারও বেশি৷
সম্প্রতি জাম্বিয়াস্থ ‘আফ্রিকান কমিশন অন হিউম্যান রাইটস'-এর পক্ষ থেকে একটি নীতিমালা গ্রহণ করা হয়৷ এতে বলা হয়, সমকামীরা অন্য আফ্রিকানদের মতোই সমান সুরক্ষা ভোগ করার দাবি রাখেন৷ এই নীতিমালায় সমকামীদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আফ্রিকার দেশগুলির প্রতি আহ্বান জানানো হয়৷ বলা হয় মানবাধিকার কর্মীরা যাতে তাদের কাজকর্মের জন্য বৈষম্যের শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে৷
নীলা ঘোষাল এই নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটা এক বিরাট অগ্রগতি৷ এই প্রথম আফ্রিকান কমিটি আফ্রিকাব্যাপী সমকামীদের বিরুদ্ধে সহিংস আচরণের নিন্দা জানালো৷
আশার আলো
আফ্রিকান সমকামী আন্দোলনগুলি এই নীতিমালা প্রণয়নে চাপ সৃষ্টি করেছে, তৈরি করেছে খসড়া, বলেন নীলা ঘোষাল৷
এক্ষেত্রে পশ্চিমের কোনো প্রভাব ছিল না বলে জানান আফ্রিকান কমিশনের সদস্য বেনিনের রেইনে আলাপিনি গানসু৷ তাঁর কথায়, ‘‘কেউ বলতে পারে না যে, সমকামিতা পশ্চিমের আবিষ্কার, আফ্রিকা এর ব্যতিক্রম৷ সবার জানা উচিত, সমকামিতা একটি মানবিক দিক৷ আফ্রিকান দেশগুলির দায়িত্ব নাগরিকদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা দেওয়া, নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করা৷ যা প্রযোজ্য হবে সকলের জন্যই৷''