1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌কলকাতা বইমেলা আবার ঠাঁইনাড়া?‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শোনা যাচ্ছে, সংস্কার এবং সম্প্রসারণের জন্য দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকতে পারে মিলন মেলা প্রাঙ্গণ, এখন যেখানে বইমেলা হয়৷ ফলে আবার অন্যত্র সরে যেতে হতে পারে বইমেলাকে৷

https://p.dw.com/p/2WthA
Indien Buchmesse in Kalkutta 2017
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

এক ঠিকানায় বেশিদিন থাকা বা পাকাপাকি থেকে যাওয়া কলকাতা বইমেলার ইতিহাসে নেই৷ একাধিকবার, নানা কারণে ঠাঁইনাড়া হয়েছে কলকাতা বইমেলা৷ রবীন্দ্র সদনের সামনের মাঠ থেকে সরে বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের সামনে, সেখান থেকে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড, ফের সেখান থেকে সরে পার্ক স্ট্রিটের মোড়ের মাঠ৷ একবার বইমেলা হলো সল্ট লেক স্টেডিয়ামের বাইরের মাঠে৷ এক বছর তো মেলা হলোই না৷ অবশেষে, ২০০৯ সাল থেকে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসের ধারে ‘‌মিলন মেলা'‌র স্থায়ী মেলা প্রাঙ্গনে জায়গা হলো বইমেলার৷ কলকাতা ময়দান থেকে বইমেলা সরে যাওয়ায় যাঁরা দুঃখিত হয়েছিলেন, তাঁরাও আস্তে আস্তে মানিয়ে নিলেন মিলন মেলার বইমেলার সঙ্গে৷ বইপ্রেমীদের অভ্যেস তৈরি হয়ে গেল মিলন মেলায় যাতায়াতের৷

কিন্তু এখন আবার শোনা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে বইমেলা এই মিলন মেলা প্রাঙ্গনে না-ও হতে পারে৷ কারণ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিলন মেলার পরিকাঠামো উন্নয়নের৷ এখন যেসব অস্থায়ী কাঠামো আছে, সেগুলিকে ভেঙে আবার নতুন করে স্থায়ী প্যাভেলিয়ন তৈরি করা হবে৷ মেলার রাস্তাঘাট, শৌচালয়, ফুড কোর্ট, সেই সঙ্গে আলোর ব্যবস্থা, পানীয় জল এবং নিকাশি ব্যবস্থা নতুন করে, আরও ভালো, আরও আধুনিক করে তৈরি করা হবে৷ বিশেষ নজর দেওয়া হবে মেলার সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং আগুন নেভানোর ব্যবস্থার ওপর৷ এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সাধুবাদের যোগ্য, কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, পরের বইমেলার আগে হাতে তো মাত্র এক বছর৷ তার মধ্যে এই সংস্কারের কাজ কি শেষ হয়ে যাবে?‌

 

সরকারি তৎপরতা থাকলেও, এত বড় একটা কাজের জন্য মাত্র এক বছর কি যথেষ্ট সময়?‌ সেক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে, আগামী বছর বইমেলা সরে যেতে পারে শহরের একেবারে পূর্ব প্রান্তে, নতুন উপনগরী রাজারহাটে৷ সেখানে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নতুন কনভেনশন সেন্টার তৈরি হচ্ছে৷ সাময়িকভাবে সেখানেই সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বইমেলা৷ মিলন মেলার পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ হলে আবার ফিরে আসবে বইমেলা?‌ নাকি ফিরবে না?‌ সেই সন্দেহও জাগছে অনেকের৷

তবে এই খবরে চিন্তিত পশ্চিমবঙ্গ পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড৷ প্রকাশক এবং বই বিক্রেতাদের এই রাজ্য সংগঠনের বর্তমান সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানালেন, আন্তর্জাতিক সময়সূচি মেনে চলা যে কোনও মেলারই জায়গা বদল হওয়াটা কাম্য নয়৷ প্রথামাফিক একটি বছরের মেলা শেষ হওয়ার পরই পরের বছরের স্থান ও দিন-ক্ষণ জানিয়ে চিঠি দিতে হয় আন্তর্জাতিক বইমেলা কমিটিকে৷ প্রতি বছরই বইমেলায় কোনও একটি বিদেশি রাষ্ট্রকে ‘‌থিম দেশ'‌ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়, যে নির্বাচন চূড়ান্ত হয় আগের বছরের মেলা শেষের সঙ্গে সঙ্গেই৷ তারও একটি কূটনৈতিক বিধি আছে, যা মেনে চলতে হয়৷ হঠাৎ করে ঠিকানা বদল হয়ে গেলে সেখানেও বিস্তর অসুবিধে৷ ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানালেন, তাই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে একটি চিঠি দিয়ে অনুরোধ করছেন, যেন এবারের মেলা শেষ হওয়ার আগেই এ ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করে দেওয়া হয়৷ এবং গিল্ড মেলার জায়গা বদল না করারই পক্ষে৷

একাধিক প্রকাশনা সংস্থাও উদ্বিগ্ন বইমেলার জায়গা বদল নিয়ে৷ ‘‌লালমাটি'‌ প্রকাশনীর কর্ণধার নিমাই গড়াই ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, কলকাতা বইমেলায় বইয়ের বিক্রি প্রতি বছরই একটু করে কমছে৷ সেখানে যদি বইমেলা রাজারহাটে সরে যায়, ক'‌জন লোক দীর্ঘ পথ উজিয়ে সেখানে যাবেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়৷ এই সময়ের জনপ্রিয় সাহিত্যিক বিনোদ ঘোষাল রসিকতার সুরে জানালেন, বইমেলা তখন আর কলকাতা বইমেলা থাকবে না, বলতে হবে রাজারহাট বইমেলা৷ আর এখন যেমন প্রায় নিয়মিতই বইমেলা যান, তখনও কি যাবেন?‌ এই প্রশ্নে বিনোদের রসিক জবাব, ‘‘‌সে তো আলাস্কাতেও বইমেলা হয়, আমি কি যাই?‌'' লেখিকা ঈশানী রায়চৌধুরি এ ব্যাপারে বক্তব্য খুব স্পষ্ট৷ বললেন, বহু প্রবীণ মানুষ, অনেক বাচ্চা বইমেলায় আসে৷ রাজারহাটে যাতায়াতের ব্যবস্থা এখনও তেমন ভালো নয়৷‌ বই বিক্রির কথা ভাবা ছাড়াও এই বাস্তবিক অসুবিধার দিকগুলোও সরকারের ভাবা উচিত৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য