আবার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প: সতর্ক অপেক্ষায় জাতিসংঘ
১০ নভেম্বর ২০২৪প্রথমবার ক্ষমতায় এসে বিশ্বের বেশ কয়েকটি সংস্থা এবং চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ জাতিসংঘে বাৎসরিক চাঁদা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বোঝা- বলেছিলেন এমন কথাও৷
এমন পরিস্থিতিতে দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার বিষয়টি জাতিসংঘসহ বিশ্ব রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে চলছে আলোচনা৷ এদিকে বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং কার্যক্রম থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে গেলে তা চীনের জন্য নিজেকে বিশ্বমঞ্চে উপস্থিত করার সুযোগ হয়ে উঠতে পারে৷
১৯৩টি দেশের জোট জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা বলছেন, ‘‘এক ধরনের উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা, তো আছেই৷'' প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে জাতিসংঘের সম্পর্ক বিবেচনায় নিয়েই হয়তো এমন কথা বলছনে তিনি৷
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন৷ রাষ্ট্রপুঞ্জে সবচেয়ে বেশি আর্থিক অবদান যুক্তরাষ্ট্রের৷ জাতিসংঘের মূল বাজেটে দেশটির অবদান ২২ ভাগ আর শান্তিরক্ষী মিশনের খরচের ২৭ ভাগ প্রদান করে দেশটি৷
খুব কঠিন
যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতি খাতের এবং সহায়তা খাতের বাজেট এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়ে সর্বশেষ ক্ষমতায় এসেছিলেন ট্রাম্প৷ এরমধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের বাজেট ব্যপকমাত্রায় কমিয়ে আনা৷ যদিও এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ট্রাম্পকে চাপে রেখেছিল কংগ্রেস৷
জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ডাইরেক্টর রিচার্ড গোয়ান বলেন, জাতিসংঘ দপ্তর জানতো যে, ট্রাম্প আবার ফিরে আসতে পারে৷ আর তাই যুক্তারাষ্ট্রের সম্ভাব্য বাজেট কমানোর পরিস্থিতি সামলাতে এক ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল৷
‘‘আর তাই, আন্তনিও গুতেরেস (জাতিসংঘের মহাসচিব) ও তার দল অপ্রস্তুত নয়৷ তবে তারা জানেন যে, আগামী দিনগুলো খুব কঠিন হতে পারে৷''
ক্ষমতা গ্রহণের পর জাতিসংঘ বিষয়ে তাদের নীতি কী হবে তা নিয়ে ট্রাম্পের দলের কেউ কোনো মন্তব্য করেনি৷
প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের খরচের একটি অন্যায্য ব্যয় বহন করছে৷'' এ সময় তিনি এর সংস্কারেরও দাবি জানিয়েছিলেন৷ ট্রাম্প ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসংঘে বকেয়ার পরিমাণ ছিল- মূল বাজেটে ছয়শ মিলিয়ন এবং শান্তিরক্ষী মিশনে দুই বিলিয়ন ডলার৷
অবশ্য জো বাইডেন প্রশাসনও দেনার দায়ে আটেক আছে৷ এখন পর্যন্ত বাইডেনের প্রশাসনের দেনা, মূল বাজেটে ৯৯৫ মিলিয়ন ডলার এবং শান্তিরক্ষী মিশনে ৮৬২ মিলিয়ন ডরার৷
গুতেরেসর মুখপাত্র স্টেফান ডয়ারিক বলেন, ‘‘কোনো নীতি নেওয়া হতে পারে বা না-ও হতে পারে এমন কোনো বিষয়ে আমরা কথা বলতে চাই না৷ তবে সদস্যরাষ্ট্রেগুলোর সাথে ওভাবেই কাজ করি, যা আমরা সবসময় করে আসছি৷''
‘চীনের জন্য সুসংবাদ'
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, ‘‘ট্রাম্পের জয় চীনের জন্য একটি বিশাল খবর৷ ট্রাম্পের প্রথম আমলে জাতিসংঘে চীনের প্রভাবের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটি তখন ছিল চীনের জন্য একটি খোলা বার৷''
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কূটনীতিক আরো বলেন, ‘‘ট্রাম্প যদি জাতিসংঘের আর্থিক অনুদান কমিয়ে দেয় এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো থেকে সরে আসে তাহলে এটি বহুজাতিকতাবাদের সমর্থক হিসেবে নিজেকে উপস্থিত করতে চীনের জন্য একটি বড় সুযোগ৷''
আরআর/এসিবি (রয়টার্স)