আবার ভিডিও কেলেঙ্কারি, অ্যামেরিকার ভাবমূর্তির আরও ক্ষতি
১৪ জানুয়ারি ২০১২ইরাকের কুখ্যাত আবু গ্রেইব কারাগারে তোলা কিছু ভয়ংকর ছবি গোটা বিশ্বে অ্যামেরিকার ভাবমূর্তির মারাত্মক ক্ষতি করেছিল৷ তাতে দেখা গেছে, মার্কিন সৈন্যরা কীভাবে ইরাকি বন্দিদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে, তাদের চরম অপমান করছে৷ স্বৈরচারী নায়ক সাদ্দাম হুসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পেছনে নৈতিক ভিত্তির মূলে আঘাত করেছিল সেই সব ছবি৷ তবেই সেটাই একমাত্র ঘটনা নয়৷ তার আগে গুয়ান্তানামোর কারাগারে তোলা একই রকমের কিছু ছবি ফাঁস হয়ে গিয়েছিল৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবন্দিদের প্রতি কী আচরণ করে, তা নিয়ে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছিল৷
লাশের অবমাননা আসলে যুদ্ধাপরাধ
অ্যামেরিকা যখন গোটা বিশ্বে নিজস্ব ভাবমূর্তির উন্নতির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তখন নিহত তালেবান যোদ্ধাদের লাশের এমন ইচ্ছাকৃত অবমাননা সেই উদ্যোগের মারাত্মক ক্ষতি করলো, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্য এটা যেন একটা ব্যক্তিগত আঘাত, যিনি তাঁর কার্যকালের প্রথমেই ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সেতুবন্ধের আন্তরিক উদ্যোগ নিয়েছেন৷ যারা এতদিন দাবি করে এসেছে, যে পশ্চিমা দেশগুলি আফগানিস্তানে তাদের সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে মানবাধিকারের পরোয়া করে না, তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়ে উঠলো৷ লাশের অবমাননা করে শুধু জেনিভা কনভেনশন ভাঙা হচ্ছে না, গোটা বিশ্বের ধর্ম ও সংস্কৃতি নির্বিশেষে এমন আচরণ সভ্যতার সব মানদণ্ডের বিরোধী৷
তালেবানের প্রচারণার হাতিয়ার
এই জঘন্য আচরণ শুধু মার্কিন সৈন্যদের প্রকৃত রূপ তুলে ধরে না৷ সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বের জন্যই এটা বড় দুর্বলতার একটা পরিচয়৷ কারণ সামরিক অভিযানের মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলি আফগানিস্তানে এমন এক সমাজ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছিল, যেখানে প্রতিটি মানুষের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকতে পারে৷ আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে ভিডিওটি ঠিক এই সময় কেন প্রকাশ্যে তুলে ধরা হলো? বর্তমানে তালেবানের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে যখন আফগানিস্তানে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা চলছে, ঠিক তখনই কেন এমন বিস্ফোরক ঘটনা ঘটলো? উল্লেখ্য, জার্মানিও এই কূটনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত৷
যে সব শক্তি এই ধরণের আলোচনার বিরোধী, তারা এখন নিজেদের শক্তিশালী মনে করছে৷ অশ্লীল এই ভিডিও তালেবানের এই গোষ্ঠীর হাতে অ্যামেরিকার প্রতি আরও ঘৃণা ছড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ তুলে দিয়েছে৷ এর মাধ্যমে তারা নিজেদের সংগ্রামের জন্য আরও যোদ্ধা আকর্ষণ করতে পারবে৷ জঘন্য আচরণের এই দৃষ্টান্ত দেখিয়ে বিদেশি সৈন্যদের রক্ষাকর্তা নয়, শত্রুভাবাপন্ন দখলদার হিসেবে তুলে ধরা তাদের পক্ষে আরও সহজ হয়ে যাচ্ছে৷
স্থায়ী শান্তি অর্জনের পথে ব্যর্থতা
সবার অলক্ষ্যে বিদ্রোহীদের সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়ার উদ্যোগ মূলেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ এত বড় ঘটনার পরেও তালেবান নেতৃত্ব এখনো পর্যন্ত যে সংযম দেখিয়ে চলেছে, তা সত্ত্বেও এমনটা ঘটতে পারে৷ বিদ্রোহীদের মধ্যে নরমপন্থী শিবিরও বিলক্ষণ জানে, যে ভিডিওর দৃশ্যের নিজস্ব শক্তি রয়েছে, যার চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে তা আন্দাজ করা মোটেই সহজ নয়৷
এই বিস্ফোরক ঘটনার প্রভাব সমগ্র অঞ্চল ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ জিহাদিরা এই ভিডিওর দোহাই তুলে নিজেদের সন্ত্রাসী হামলার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে পারে৷
ভিডিওতে যাদের সনাক্ত করা গেছে, তাদের চরম শাস্তি দিলেও তেমন কোনো ফল হবে না৷ ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে তোলা সম্ভব নয়৷ অ্যামেরিকা ও আফগানিস্তান – দুই দেশের জন্যই আবু গ্রেইবের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে৷ মার্কিন সেনাবাহিনী অতীতের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছে, এমনটা মনে করার কোনো কারণ দেখা যাচ্ছে না৷ বিদেশে মোতায়েন করা সৈন্যদের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতার অভাব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে৷ প্রেসিডেন্ট ওবামাকেও সেটা বুঝতে হবে৷ তিনি হয়তো ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন৷ কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয়৷ যত দ্রুত সম্ভব, তাঁকে আফগানিস্তানের জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে৷
প্রতিবেদন: ডানিয়েল শেসকেভিৎস / সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক