আবারও দাবদাহের কবলে দক্ষিণ এশিয়া
দক্ষিণ এশিয়ার বড় বড় শহরগুলো আবারও ভয়াবহ দাবদাহের কবলে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ ২০১৫ সালে গ্রীষ্মকালে ভয়াবহ দাবদাহে ভারতে অন্তত দু’হাজার এবং পাকিস্তানে ১২শ’ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল৷
মধ্য ও উত্তর ভারতে তীব্র গরম
১লা এপ্রিল ভারতের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৬ থেকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ অথচ গ্রীষ্মকাল আসতে এখনো কয়েক মাস বাকি৷ ভারতের আবহাওয়া বিভাগ বলছে, বর্তমানে সেখানে ‘তাপপ্রবাহ থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ’-এর অবস্থা বিরাজ করছে৷ এর আগেই অবশ্য বিভাগটি জানিয়েছিল, এ বছর গ্রীষ্মকালে স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা অনেক বেশি হবে৷
মহারাষ্ট্রের কিছু এলাকায় তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি
২৯শে মার্চ ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘনবসতি জেলা মহারাষ্ট্রের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ এর আগেরদিন ভিরা শহরে তাপমাত্রা ছিল ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ এছাড়া রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, মধ্য মহারাষ্ট্র, দক্ষিণ উত্তর প্রদেশ, দক্ষিণ হরিয়ানা, চণ্ডীগড় এবং উড়িষ্যায় ‘তাপপ্রবাহের’ সতর্কতা জারি করা হয়েছিল৷
পাকিস্তানেও দাবদাহ
ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের সিন্ধ প্রদেশে তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ নবাব শাহ এবং লারকানা শহরে দাবদাহে জনজীবন বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছিল৷ এছাড়া মহেঞ্জোদারো, সুকুর, দারু এবং হায়দ্রাবাদেও তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে৷
করাচিতে সতর্কতা
এ সপ্তাহের প্রথমদিকে পাকিস্তানে ঘনবসতিপূর্ণ শহর করাচিতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছিলেন৷ প্রশাসন সব বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল৷ সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ‘হিটস্ট্রোক রিলিফ সেন্টার’ খোলা হয়েছে৷ কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ২০১৫ সালের মতোই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে এ বছর৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ফল ভোগ করছে পাকিস্তান
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের অবস্থান সপ্তম৷ গত দু’দশকে ১৩৩টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে দেশটি৷ এর ফলে দেশটির ৩৮২ কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয়েছে৷
বড় বড় শহরগুলোর ঝুঁকি বেশি
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স’ তাদের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভয়াবহ তাপপ্রবাহের শিকার হবে, বিশেষ করে বড় বড় শহরগুলো, এমনকি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে রাখতে সমর্থ হলেও৷ গবেষণায় দেখা গেছে, এ বছর পাকিস্তানের করাচি এবং ভারতের কলকাতায় ২০১৫ সালের মতো ভয়াবহ দাবদাহ দেখা দেবে৷
বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে প্রাণহানি
২০১৫ সালের তাপ প্রবাহে ভারতে দুই হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল, তখন তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷ পাকিস্তানে দাবদাহে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১২০০, যদিও এটা সরকারি হিসাব, স্থানীয় পরিসংখ্যান বলছে, সংখ্যাটা প্রায় ৩ হাজার৷ করাচিতে তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷