আবেগ-অনুভূতি দেখাচ্ছে ‘সেক্স রোবট'
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮এমন রোবটের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক যে, আবেগ-অনুভূতি দেখাতে পারে৷ স্যার্শি সান্টস সেই স্বপ্ন দেখেন৷ বার্সেলোনা শহরের এই ইঞ্জিনিয়ার এমন ‘সেক্স রোবট' তৈরির কাজ করছেন, যারা মানুষের ভাবাবেগ নকল করতে পারবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে আবেগ-অনুভূতির কাঠামো রয়েছে৷ সেটাই আমার মৌলিক ভিত্তি৷ আমার কাছে মস্তিষ্কের স্থাপত্য বা কাঠামো রয়েছে, যা আবেগ প্রকাশ করতে পারে৷ যেমনটা ভেবেছিলাম, বিষয়টা তা থেকে ভিন্ন৷ তারপর হিউম্যানয়েড সিস্টেমের খোঁজ করে সেক্স ডল শিল্পে তার খোঁজ পেলাম৷ এবার আমার সহজলভ্য কম্পিউটার চাই, যা দ্রুত তৈরি করা যেতে পারে৷ সবকিছু জোড়া দেবার জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তিও প্রয়োজন৷''
তাঁর তৈরি রোবট কথা শুনে ও সেন্সরের মাধ্যমে স্পর্শ অনুভব করে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে৷ সেন্সরগুলি কৃত্রিম মস্তিষ্কের মধ্যে কাজ করে৷ তারপর রোবট বিভিন্ন আবেগের পরিস্থিতি ফুটিয়ে তোলে৷ বন্ধুত্বপূর্ণ, রোমান্টিক ও যৌন আবেদন প্রকাশ করে যন্ত্র৷
সান্টোসের তৈরি রোবটের মূল্য প্রায় ৬,০০০ ডলার৷ অনেকেই সেগুলি কিনতে আগ্রহী৷ সেন্ট গ্যালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টোমাস বেশর্নার বলেন, ‘‘ইউরোপে প্রায় ৪০ শতাংশ পুরুষ রোবটের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে খোলামনে ভাবতে পারেন৷ নারীদের সংখ্যা কম হলেও সে ক্ষেত্রে সম্ভাবনা রয়েছে৷''
বার্সোলানায় যৌনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত শিল্পক্ষেত্র এই সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেখেছে৷ সেখানে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম রোবটদের যৌনপল্লি যাত্রা শুরু করে৷ ঘণ্টায় ১০০ ইউরোর বিনিময়ে গ্রাহকরা পুতুল দিয়ে নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারেন৷
কিন্তু রোবটের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক আমাদের প্রেম-ভালোবাসা কতটা বদলে দেবে? লিনৎস প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবট মনস্তত্ববিদ মার্টিনা মারা মনে করেন, এর ফলে প্রকৃত সম্পর্কে সমস্যা হতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে বাজারে যে সেক্স রোবট রয়েছে, সেগুলির মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ নারীদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার প্রতিফলন ঘটায়৷ অর্থাৎ, নারী মানেই পরোক্ষ ভূমিকা পালন করবে৷ একদিকে মানুষ, অর্থাৎ নারীর শরীরকে বস্তু হিসেবে আরো তীব্রভাবে তুলে ধরা হচ্ছে৷ অন্যদিকে রোবটের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের পার্থক্য সম্পর্কে বদ্ধমূল ধারণাগুলি আসল সম্পর্কের উপরেও প্রভাব রাখছে৷''
সেক্স রোবট কিন্তু কাজেও লাগতে পারে৷ ‘ফাউন্ডেশন ফর রেসপন্সিবল রোবটিক্স' এর মাধ্যমে সেই সব মানুষের থেরাপির সম্ভাবনা দেখছে, যৌনতা নিয়ে যাদের সমস্যা রয়েছে৷ এথিক্সের অধ্যাপক টোমাস বেশরর্মার এমনকি মনে করেন যে, সেক্স রোবটদের প্রতি আমাদের মনে প্রকৃত অনুভূতি জাগতে পারে৷ টোমাস বলেন, ‘‘এইসব যন্ত্রের সঙ্গে দ্রুত ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠবে বলে আমার জোরালো অনুমান রয়েছে৷ এমন রোবটের মালিক দ্রুত তার নাম রাখবে৷''
এমন সম্পর্ক শুধু একতরফা হোক, ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে স্যার্শি সান্টস তা চান না৷ তাই তিনি তাঁর পুতুলগুলিকে যতটা সম্ভব মানুষের মতো আবেগময় করে তুলতে চান৷ আমরা মানুষরা ঠিক কী কারণে ভিন্ন, এমন প্রেক্ষাপটে তাঁর মনে সেই প্রশ্ন জাগে৷ স্যার্শি বলেন, ‘‘নিজের সত্ত্বা নিয়ে প্রশ্ন জাগে৷ আমি আসলে কে? নিজের সম্পর্কে কী ভাবি? এটা যে আমি, সেই সিদ্ধান্ত কীভাবে আসে? এইসব বিষয় সম্পর্কে আমার চিরকাল আগ্রহ ছিল৷ তার ফলে আমার মস্তিষ্কের কাঠামো নিয়ে ভেবেছি৷''
ডিজিটাল প্রযুক্তি ও রোবটিক্স আমাদের প্রেম-ভালোবাসার মধ্যেও প্রবেশ করছে৷ স্বপ্ন বা সমস্যা, বিষয়টিকে যেভাবেই দেখা হোক না কেন, এমন পুতুলের সঙ্গ মেনে নেওয়া সহজ নয়৷
অ্যালিস কোন/এসবি