‘আমরা শুধু মানুষ হারাচ্ছি’
২৬ জুলাই ২০১৩১৯৫৩ সালের ২৭ জুলাই এক চুক্তির মাধ্যমে কোরীয় যুদ্ধের আপাত অবসান হয়েছিল - যার শুরু প্রায় তিন বছর আগে ,১৯৫০ সালের ২৫ জুন৷ সে সময় উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সৌল দখল করে নিয়েছিল৷ উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন জানিয়েছিল স্টালিনের সোভিয়েত ইউনিয়ন৷
এর প্রায় এক মাস পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক বয়কট করছিল বলে কোনো ভেটো ছাড়াই ঐ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় জাতিসংঘ৷ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ‘আন্তর্জাতিক সৈন্য' পাঠানো হয়েছিল কোরিয়ায়৷ সেখানে প্রায় ৮৮ শতাংশ সেনাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের৷ জাতিসংঘ বাহিনীর মুহুর্মুহু হামলায় উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা কিছুটা পেছনে সরতে বাধ্য হয়৷ ঠিক সেই সময় উত্তর কোরিয়ার পক্ষ নেয় চীন৷ তবে জাতিসংঘ বাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠছিল না তারা৷ এ অবস্থায় চীনের নেতা মাও সেতুং ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম ইল সুঙ যুদ্ধ শেষ করতে চাইলেও স্টালিন চালিয়ে যেতে আগ্রহী ছিলেন৷ তিনি আসলে কোরিয়ার মাটিতে মার্কিনিদের রক্ত ঝরাতে চাচ্ছিলেন৷ তাই মাও আর কিম ইল সুঙকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে আনতে স্টালিন বলেছিলেন, ‘আমরা তো শুধু মানুষ হারাচ্ছি যা আমাদের অনেক আছে৷' কোরীয় যুদ্ধের গবেষক, জার্মান ইতিহাসবিদ রোল্ফ স্টাইনিঙ্গার এসব তথ্য জানিয়েছেন ডয়চে ভেলেকে৷
স্টালিনের কারণেই যুদ্ধ শেষ হতে প্রায় তিন বছর লেগে গিয়েছিল৷ তাও সেটা সম্ভব হয়েছিল স্টালিনের মৃত্যুর কারণে৷ ১৯৫৩ সালের ৫ মার্চ মারা যান তিনি আর ২৭ জুলাই চুক্তি স্বাক্ষর করে দুই কোরিয়া৷
যুদ্ধে প্রায় ৩৭ হাজার মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিলেন৷
জার্মানির সংযোগ
কোরীয় যুদ্ধের কারণে জার্মানির দুটি সুবিধা হয়েছিল৷ এক, ১৯৫০ সালের ডিসেম্বরে পুনরায় অস্ত্রে সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ ফিরে পেয়েছিল জার্মানি৷ আসলে কোরীয় যুদ্ধ ছিল মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য একটা বড় দুর্যোগ, সেটাকে কাজে লাগিয়েছিলেন জার্মানির তখনকার চ্যান্সেলর কনরাড আডেনাউয়ার৷ আর দ্বিতীয় সুবিধাটা ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে জার্মানির উপর থাকা শেষ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাটাও তুলে নেয়া৷
১৯৯০ সালে সাবেক দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের পর দুই কোরিয়ার মধ্যেও একই ধরণের কিছু করা যায় কি না সেই আলোচনা উঠে এসেছিল৷ কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার অনেকেই এর পক্ষে ছিলেন না৷ তাদের আশঙ্কা ছিল জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের পর পশ্চিম জার্মানি পূর্ব জার্মানির আর্থিক অবস্থা যতটা খারাপ পেয়েছিল তার চেয়ে অনেক খারাপ অবস্থা উত্তর কোরিয়ার, ফলে সেটাকে টানতে গেলে বড় সমস্যায় পড়তে হতে পারে দক্ষিণকে৷