1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমলারা খেলছেন, রাজনীতিবিদেরা দেখছেন

২৮ ডিসেম্বর ২০২০

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ‘‘মাঠে খেলছেন আমলারা৷ রাজনীতিবিদরা সাইডলাইনে বসে খেলা দেখছেন৷''  এখন প্রশ্ন হলো, রাজনীতিবিদেরা কেন রাজনীতিতে নাই৷ আমলারা কেন তা দখল করছেন?

https://p.dw.com/p/3nHvJ
Bangladesch Parlament | Sheikh Hasina
ছবি: imago/Xinhua

রোববার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী অফিস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে জিএম কাদের আরো বলেন, ‘‘সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক হচ্ছেন জনগণ আর তাদের ভোটে নির্বাচিতদেরই দেশ পরিচালনার কথা৷ কিন্তু কাজকর্মে এমপি সাহেবদের খবর নেই, আর সচিব-সাহেবরা সব কাজ করেন, মন্ত্রী মহোদয়েরা শুধু জানতে চান৷''

জিএম কাদের যে পরিস্থিতির কথা বলেছেন তাতে দেশের প্রকৃত চিত্রই ফুটে উঠেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা৷ তারা এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে গণতন্ত্রের জন্য আরো দুঃখজনক পরিণতির আশঙ্কা করেন৷

অবশ্য তারা মনে করেন, আমলারাজোর করে রাজনীতিতে ঢুকছেন না৷ রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতার সুযোগ নিচ্ছেন তারা৷ তাদের মতে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যদি আমলাতন্ত্র নির্ভর হতে হয় তাহলে আমলারা সুযোগ নেবেনই৷ স্বাভাবিক নিয়মেই রাজনীতিবিদেরা তখন সাইডলাইনে চলে যাবেন৷ তারা এটাকে বলছেন, ‘‘স্যাড স্টোরি৷''

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সররকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান বলেন, ‘‘এখন প্রশাসনের সচিব বা পদস্থ কর্মকর্তারা অবসরের পরই রাজনীতিতে যোগ দিয়ে এমপি মন্ত্রী হতে চান৷ আর কাজটি শুরু করেন সরকারি চাকরিতে থাকার সময়ই৷ তারা সরকারি চাকরিতে থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন৷ সভা সমাবেশে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন৷''

‘‘আমলারা চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক বক্তব্য দেন’’: তারেক শামসুর রহমান

এই সুযোগটি তারা কেন পাচ্ছেন? সরকারি চাকরিতে থাকতেই তাদের কেন রাজনৈতিক আচরণ করতে দেখা যায়? এর জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘এর দায় রাজনীতিবিদদের৷ বিএনপিকে আর কী বলবো! ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই যা অবস্থা তাতে আমলা নির্ভর হওয়া ছাড়া তাদের আর উপায় কী থাকতে পারে৷''

তবে তিনি মনে করেন, ‘‘জিএম কাদেরের ভাই( এইচএম এরশাদ) বেঁচে থাকলে তাকে তিনি প্রশ্ন করলে ভালো করতেন৷ এই রাজনীতিবিদদের সাইডলাইনিং-এ তার কোনো ভূমিকা আছে কিনা?''

বাংলাদেশে করোনা ব্যবস্থাপনা ও এনিয়ে নানা কাজে মন্ত্রী এমপিসহ মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিবিদদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই৷ ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ হয়তো কিছু করছেন৷ কিন্তু প্রশাসনিক  ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে তারা অনুপস্থিত৷ ফলে যারা জনপ্রতিনিধি তাদের কাজ চলে গেছে আমলাদের কাছে৷ আমলারা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন৷ ফলে সাধারণ মানুষ কোনো কিছু জানতে জানতে পারছেন না৷ কারুর কাছে যেতে পারছেন না৷ এটা কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়৷

আর আমলারাও রাজনীতির বাইরে এই অযাচিত ক্ষমতা পেয়ে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা৷ জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন নিজেই ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রশাসনের কমর্কর্তাদের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘কর্মকর্তাদের অপরাধ প্রবণতা এত পরিমাণে এখন বেশি যে প্রতিদিন তিন-চারটি করে বিভাগীয় মোকদ্দমা শুনতে হয়  এবং বিভাগীয় মোকদ্দমায় অনেকের শাস্তি হচ্ছে৷ এটা আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক৷''

‘‘এটা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও রাজনীতির জন্য একটা স্যাড স্টোরি’’: শান্তনু মজুমদার

ড. তারেক শামসুর রহমান মনে করেন, আমলাদের প্রভাব এখন অনেক বেশি বেড়ে গেছে৷ ক্ষমতার প্রয়োজনে আমলা নির্ভরতার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে রাজনীতিবিদদের দক্ষতার অভাবেও এটা হয়েছে৷ তবে এটা হওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতি করবেন রাজনীতিবিদেরা৷ কিন্তু এখন তা করছেন আমলারা৷ তারা চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক বক্তব্য দেন ও তৎপরতা চালান৷ তাহলে রাজনীতিবিদেরা কী করবেন?''

এর ফলেসরকার ও রাজনীতি এখন আমলাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে৷ অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘এটা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও রাজনীতির জন্য একটা স্যাড স্টোরি৷''