আমাজনের সোনার খনি: ইয়ানোমামি আদিবাসীদের দুঃখ
ব্রাজিলের আমাজনের আদিবাসী গোষ্ঠী ইয়ানোমামি৷ একদিকে ম্যালেরিয়া, অপুষ্টির কারণে তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত, অন্যদিকে স্বর্ণের অবৈধ খনির কারণে হারাচ্ছেন বাস্তুভিটাও৷ আশার কথা- লুলা ডি সিলভার সরকার তাদেরকে রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছে৷
বিপদে ইয়ানোমামিরা
বছরখানেক আগে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা ইয়ানোমামি আদিবাসীদের পরিস্থিতিকে মানবিক সংকট হিসেবে উল্লেখ করে অবৈধ খনির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেন৷ ব্রাজিলের সরকারের হিসাবে গত বছর রোগ, অপুষ্টি ও সহিংসতায় ইয়ানোমামি গোষ্ঠীর ৩০৮জন প্রাণ হারান৷ খনির মানুষদের নিয়ে আসা ম্যালেরিয়ার কারণে তাদের মৃত্যু এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে৷
বনের বুক চিড়ে খনি
স্বর্ণের খোঁজে ইয়ানোমামিদের বসতভিটায় অবৈধভাবে চালানো হচ্ছে খননের কাজ৷ গত ডিসেম্বরে ব্রাজিলের ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড রিনিউয়েবল ন্যাচারাল রিসোর্সেস-এর (ইবামা) অভিযানের সময় এই চিত্র ধরা পড়ে৷ খননকারীদের সশস্ত্র উপস্থিতির কারণে ভীত থাকেন নিরীহ ইয়ানোমামিরা, যার প্রভাব পড়েছে তাদের জীবন যাত্রায়৷
সশস্ত্র বাহিনীর অসহযোগিতা
সশস্ত্র বাহিনী গত বছরের মাঝামাঝি থেকে ইবামার অভিযানে সহযোগিতা দেয়া বন্ধ করে দেয়৷ ইবামার হেলিকপ্টারের জন্য জ্বালানি পরিবহণ বন্ধ করে সামরিক বাহিনী৷ এপ্রিলে লুলা ডি সিলভার নির্দেশের পরও এলাকাটিতে ‘নো ফ্লাই জোন’ কার্যকর করেনি বিমান বাহিনী৷ অন্যদিকে খনির সরঞ্জাম পরিবহণের নৌপথ বন্ধেও ব্যবস্থা নেয়নি নৌ বাহিনী৷ রয়টার্সকে এমনটাই জানিয়েছেন ইবামার তিন কর্মকর্তা৷ এ ব্যাপারে কোনো উত্তর দেয়নি সশস্ত্র বাহিনী৷
অসম লড়াই
রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ায় অবৈধ খনির কারবারিদের বিরুদ্ধে অসম লড়াই চালাতে হচ্ছে ইবামার বিশেষ বাহিনীকে৷ রয়টার্সের এক আলোকচিত্রী এক সপ্তাহ তাদের অভিযানে সাথে ছিলেন৷ ইবামার হেলিকপ্টারের আওয়াজ শুনে পালিয়ে যান খনির কর্মীরা৷ তাদের ধরতে বনের ভেতরেও অভিযান চালান ইবামার বিশেষায়িত বাহিনীর সদস্যরা৷
খনির সোনা
অভিযানের সময় ফেলে যাওয়া অবৈধ খনি থেকে এই স্বর্ণ জব্দ করেছেন ইবামার সদস্যরা৷ এই সোনার লোভেই আমাজন আর ইয়ানোমামিদের জমি ধ্বংস করা হচ্ছে৷
খনির সরঞ্জাম ধ্বংস
ইবামার অভিযানের সমন্বয়ক হুগো লস একটি খনির ক্যাম্প জ্বালিয়ে দিয়েছেন৷ অভিযানে খনিতে কাজ করা কয়েকজনকে তারা আটকও করেন৷
আবার ফিরে আসবে ওরা
এক ইয়ানোমামি মা শিশুদের জন্য প্রিয় খাবার পিঁপড়া সংগ্রহ করছেন৷ আপাতত হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন সংরক্ষিত ইয়ানোমামি ভূখণ্ডে বসবাসকারীরা৷ ‘‘বেশিরভাগ খনির কারবারি চলে গেছে, কিন্তু ওরা আবার ফিরে আসবে,’’ শঙ্কা নিয়ে বললেন তাদের নেতা ডেভিড কোপেনাওয়া৷
অপুষ্ট শিশু
অসুখে ভোগা ইয়ানোমামিদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভেনেজুয়েলা সীমান্তের কাছে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে৷ অপুষ্টিতে তাদের শিশুদের পেট ফুলে গেছে৷
সরকারের হাতে ভবিষ্যৎ
গত ডিসেম্বরে লুলা ডি সিলভার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অবৈধ খনি উচ্ছেদে সরকারের অগ্রাধিকার ঘোষণা করেন৷ ইয়ানোমামিদের নিরাপত্তা ও সহায়তার জন্য তার সরকার সাড়ে ২৪ কোটি ডলারের তহবিল দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করছে ইয়নোমামি ও তাদের বসতভিটার ভবিষ্যৎও৷