ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫বার্লিন ফ্রি ইউনিভার্সিটির গণিত বিভাগের অধ্যাপক রাউল রোখাস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘গণিতের দৃষ্টিকোণ থেকে এখানে চ্যালেঞ্জটা হল, এই পরিমাণ তথ্য৷ আমি একটা বিশেষ তথ্য খুঁজছি – সেটা তাড়াতাড়ি ছেঁকে বার করাটাই চ্যালেঞ্জ৷ আমাদের এই ডেটা ব্যাংকে লক্ষ লক্ষ ই-মেল আছে৷ আমরা একটি বিশেষ শব্দসমষ্টি খুঁজছি, যা সন্দেহভাজন৷ প্রক্রিয়াটা দ্রুত করার জন্য একটা অ্যালগোরিদম-এর দরকার৷ তখন আমি সেই অ্যালগোরিদম নিয়ে বিশেষ তথ্যটির খোঁজ করব৷ অ্যালগোরিদমে তা ধরা পড়লে অন্য কেউ কিংবা অন্য কোনো কম্পিউটার প্রোগ্রাম সেই তথ্য বিশ্লেষণ করবে৷ যেমন আমরা এখানে সন্দেহজনক কিছু খুঁজে পেয়েছি৷''
কিন্তু অ্যালগোরিদম বোমাটা খুঁজে পায় কী করে? রোখাসের ব্যাখ্যা হলো, ‘‘ডাটা রেকর্ডে বহু অক্ষর থাকে৷ তার মধ্যে হয়তো শব্দসমষ্টিটা লুকিয়ে আছে, যেমন এই কথাটা, ‘বম্বেনস্টিমুং', যাতে ‘বম্বে' বা ‘বোমা' কথাটা আছে৷ অ্যালগোরিদম এখন এভাবে কাজ করবে: সূচনায় প্রথম অক্ষরটা তার জায়গায় কিনা, সেটা পরীক্ষা করা হবে৷ তারপর দেখা যাবে, এই অক্ষরটার সঙ্গে এই অক্ষরটা মিলে যাচ্ছে৷ তারপর আমরা পরম্পরা অনুযায়ী টেস্ট করতে পারবো৷ কিন্তু শেষ অক্ষরটাকে চতুর্থ স্থানে বসালে তাড়াতাড়ি হয়৷ আর এই চতুর্থ স্থানে আমরা একটা মিল পাচ্ছি৷ এরপর অন্য অক্ষরগুলো নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব৷ কাজেই আমরা ‘বম্বে' অথবা বোমা কথাটাকে খুঁজে পেয়েছি৷''
পরের ধাপে সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি সংক্রান্ত সব ‘ডেটা রেকর্ড' একসঙ্গে করা হবে, যা থেকে তার সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে৷ তার চরিত্র বা আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে সংখ্যা হিসেবে দেখানো হবে৷ সে কি খুব ঘোরে? তার কি কোনো ক্রেডিট কার্ড আছে? নিয়মিত রোজগার আছে? লাইফ ইনসিওরেন্স আছে? অ্যালগোরিদম দিয়ে এ ভাবে ব্যক্তিবর্গকে এক পর্যায় সংখ্যায় পরিণত করা যায়৷ তারপর সেটাকে সন্ত্রাসবাদীদের প্রোফাইলের সঙ্গে মেলানো হয়৷ যতো বেশি মিলবে, বিপদ ততোই বেশি৷ এ ভাবেই সাউয়ারলান্ড গোষ্ঠীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল, যারা জার্মানিতে বোমা হামলার ষড়যন্ত্র করছিল৷
অ্যালগোরিদম অবশ্য বস্টনের বোমারুদের চিনতে পারেনি৷ ভুল তো সম্ভবই৷ অন্যদিকে অ্যালগোরিদম নিরপরাধীদের সন্ত্রাসবাদী বলেও ঘোষণা করেছে৷ যার ফলে সংশ্লিষ্টদের বিপুল হয়রানি হয়েছে৷ রোখাস বলেন, ‘‘ইন্টারনেট হল একটা সুবিশাল মেমরি, যেখানে সব কিছু ঢোকানো যায়৷ কিন্তু নেটের সেই মেমরি থেকে কোনো কিছু মুছে দেওয়া প্রায় অসম্ভব৷''
কাজেই যারা তা থেকে বাঁচতে চান, তাদের নেটে কোনোরকম চিহ্ন না রেখে অন্যভাবে খবর পাঠানোটাই বোধহয় ভালো!