‘আমাদের শান্তিনিকেতন, সে যে সব হতে আপন’
২২ নভেম্বর ২০১১প্রায় ত্রিশ বছর যাবৎ তিনি শান্তিনিকেতনের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ নিবিড় সম্পর্ক তাঁর৷ শান্তিনিকেতন প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই শুরুতে শমীন্দ্র ভৌমিক তাই বলেন, রবি ঠাকুরের ছুটি গল্পের কথা৷ যে গল্পে গ্রামের একটি ছেলে ফটিক কলকাতা শহরে এসে ইঁট কাঠের প্রাচীর আর নাগরিক অনুশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে৷ পরিশেষে তার মৃত্যুর মাধ্যমে ফটিক এমন এক কল্পরাজ্যে চলে যেতে চায়, যেখানে অভিভাবকের চোখ রাঙানি, ইঁটের প্রাচীর আর নিয়মের বন্ধন তার স্বাধীনতা হরণ করতে পারবে না৷ রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিজের শৈশবে বন্ধনের অনুভব বোধ করেছিলেন, ঠাকুরবাড়ির ধরাকাটের জীবনে৷ পরবর্তী জীবনে শিশুদের মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন তিনি সেই বন্ধন থেকে৷ মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তাদের প্রকৃতির সঙ্গে নিঃশর্তে৷ সেই তাগিদ থেকেই শান্তিনিকেতনের জন্ম ১৯০১ সালে৷ রবীন্দ্রনাথ সেখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন নন্দলাল বসু, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জগদানন্দ রায়, নিতাইবিনোদ গোস্বামীর মত মহান শিক্ষকদের৷ যাঁদের প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক সবটাই ছিল মাটির কাছাকাছি৷ শতাব্দ পেরিয়ে গেলেও তার বহমানতা আজও অম্লান৷
শান্তিনিকেতনের রয়েছে এক আশ্চর্য মায়া৷ যে জীবনধারার সঙ্গে একবার মিলে গেলে আর সেখান থেকে ফেরা যায়না৷ শমীন্দ্র ভৌমিক রবি ঠাকুরের আমাদের শান্তিনিকেতন গানটির উল্লেখ করে বলেন, এ গানে যে বলা হয়েছে, ‘আমাদের শান্তিনিকেতন, সে যে সব হতে আপন / মোদের প্রাণের সঙ্গে প্রাণে সে যে মিলিয়েছে একতানে / মোদের ভাইয়ের সঙ্গে ভাইকে সে যে করেছে আপন, সে যে শান্তিনিকেতন..৷'
এই প্রাণের সঙ্গে প্রাণ, আর ভাইয়ের সঙ্গে ভাইকে একসঙ্গে, একতানে আনতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ৷ কিন্তু সেই সৌহার্দ্য আজও বজায় রয়েছে কী? আজকের শান্তিনিকেতনে সেই সৌহার্দ্যের অভাব দেখা যায়৷ বলছেন শমীন্দ্র৷ বলছেন, নানা কারণ রয়েছে তার৷ অর্থনৈতিক কারণ তো রয়েইছে৷ রয়েছে মানুষের পারস্পরিক স্পর্শকাতরতা৷ সেদিনের সেই আত্মীয়তা এখন আর সেভাবে তার ডালপালা মেলে ধরতে পারেনা৷ আর যে বিষয়টি শমীন্দ্র বলতে চান, তাহল, শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন সব রকমের মানুষ আসুক৷ বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসুক ছাত্ররা৷ আজকের দিনে শহর কিন্তু শান্তিনিকেতনে ঢুকে পড়েছে৷ তার আচরণে এসে গেছে ভোগবাদের ছায়া৷ যা কাম্য নয় নিশ্চয়ই৷
তবু তার মধ্যেও নতুন করে কবির স্বপ্নের শান্তিনিকেতনকে সেই আশ্রমিক চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সচেষ্ট হচ্ছেন আবারও শিক্ষক থেকে শুরু করে ছাত্রেরা সকলেই৷ তার জন্য সময় লাগতে পারে৷ কিন্তু আশাবাদকে বাদ দিতে রাজি নন শমীন্দ্রের মত যাঁরা শান্তিনিকেতনের শুভাকাঙ্খী৷
বহুধা প্রবাহিত ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা৷সার্ধশতবর্ষ পার করেও সেই প্রতিভার স্ফূরণ নতুন করে প্রাণিত করে সব প্রজন্মের মানুষকে৷ শান্তিনিকেতনে যে আনন্দধারা তিনি প্রবাহিত করেছিলেন, সেই ধারাকে বহমান রাখতে হবে৷ সেটাই প্রত্যাশা৷ সে প্রত্যাশা বজায় থাকুক৷ কাম্য সেটাও৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক