আর নিউজ করব না: নির্যাতিত সাংবাদিকের উপলব্ধি
২ নভেম্বর ২০২০অপহরণের পর উদ্ধার চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারের যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে তাতে তাকে শুধু বলতে শোনা গেছে, ‘‘আমি আর নিউজ করব না প্লিজ, আমি আর নিউজ করব না প্লিজ৷’’ সারোয়ার এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷
চিকিৎসাধীন গোলাম সরোয়ারের সঙ্গে কথা বলা না গেলেও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, ‘‘গোলাম সরোয়ারকে অপহরণ করা হয়েছিলো পেশাগত কারণেই৷ তিনি নিউজের কারণেই অপহৃত হন৷’’
গোলাম সরোয়ার ‘আজকের সূর্যোদয়ের’ স্টাফ রিপোর্টার এবং সিটি নিউজ নামে একটি অনলাইন পোর্টালের নির্বাহী সম্পাদক৷ গত ২৯ অক্টোবর তাকে চট্টগ্রামের ব্যাটারি গলি থেকে অপরহরণ করা হয়৷ রোববার তাকে সীতাকুণ্ড এলাকার কুমিরা ইউনিয়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়৷ উদ্ধারের পর তিনি সংবাদ মাধ্যমকে তার ওপর নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন৷
অপহরণকারীরা বার বার যখন অজ্ঞাত ব্যক্তির সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলছিল তখন তারা স্যার স্যার বলছিলো৷ তারা আরো বলছিল, ‘‘সাংবাদিকদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য সরোয়ারকে তুলে এনেছি, হত্যার জন্য নয়৷’’ তারা তাকে নির্যাতনের সময় বার বার বলছিল, ‘‘আর নিউজ করবি’’?
সরোয়ার কী সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন?
এখন প্রশ্ন তিনি কী নিউজ করেছিলেন যার জন্য তাকে অপরহণের পর নির্যাতন করা হলো৷ সেটা শুধু গোলাম সরোয়ারই বলতে পারবেন বলে জানান, চট্টগ্রাম কেতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মোহসীন৷ অপহরণের পর জিডি করেছিলেন আজকের সূর্যোদয়ের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান জুবায়ের সিদ্দিকী৷ তিনিও একই কথা বলেন৷ তবে আলোচনায় আছে ২৩ অক্টোবর সিটি নিউজ নামের নিউজ পোর্টালে জমি দখলের একটি খবর৷ আর ওই খবরে বলা হয়, চট্টগ্রামে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি সরকারি জমি দখল করেছেন ৷ সিইউজে সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘‘এটা নিশ্চিত যে তাকে খবর প্রকাশের কারণেই অপহরণ করা হয়েছিল৷ আমরা পুলিশকে বলেছি এখন তারা অপহরণকারী ও এর নেপথ্যের গডফাদারদের চিহ্নিত করতে৷ এই ঘটনায় আমরা চট্টগ্রামের সাংবাদিকেরা ভয়ের মধ্যে আছি৷ সুস্থ হলে তার কাছ থেকেই আমরা জানতে পারব কোন নিউজের কারণে তাকে অপহরণ করা হয়,’’ বলেন এই সাংবাদিক নেতা৷
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মোহসিন জানান, ‘‘এখন আমরা তার সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় আছি৷ তবে চাইলে তার পরিবারের কেউ মামলা করতে পারেন৷ তার শরীরের বাইরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নাই৷ আশা করছি তিনি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন৷’’
সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র:
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের(আসক) হিসেবে এই বছরেরই প্রথম ৯ মাসে ২০৯ জন সাংবাদিক হুমকি, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ১৯ জন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের হাতে এবং ৩৫ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে৷ খবর প্রকাশের জন্য ৮১ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরপত্তা আইনসহ অন্য আইনে মামলা হয়েছে৷ হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে ২৩ জনকে৷ নিহত হয়েছেন একজন সাংবাদিক৷
এই বছরের প্রথম ছয় মাসে ৫৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে৷ ২০১৯ সালে ৬৩ জনের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়৷ জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এই আট মাসে ৩৮ জন সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে৷
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ বলেন, ‘‘এই ধরনের অনাকঙ্খিত ঘটনা আমাদের স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে চরম অন্তরায়৷ সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নির্যাতনকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি৷’’
সংবাদ প্রকাশের কারণে কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও মুক্ত মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে তিনি মনে করেন৷ তার মতে, ‘‘এইসব ঘটনা একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে৷’’ তিনি বলেন, সাংবাদিকদের অপহরণ, নির্যাতন, নিপীড়ন সাংবাদিকতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেল দিয়েছে৷ তবে তিনি সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল আচরণেরও আহ্বান জানিয়েছেন৷
৪ অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...