প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারছেন না নওয়াজ
২৮ জুলাই ২০১৭শুক্রবার রাজধানী ইসলামাবাদে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত রায়টি ঘোষণা করা হয়৷ সুপ্রিম কোর্ট ভবনের চারপাশে প্রায় ৩,০০০ নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল৷ অধিকাংশ রাজনৈতিক ভাষ্যকার যেমন প্রত্যাশা করেছিলেন, বিচারকরা পানামা পেপার্স মামলায় নওয়াজ শরিফকে দোষী সাব্যস্ত করেন৷ গতবছর থেকে এই মামলা শরিফের মাথার উপর ঝুলছিল৷
পাঁচজন বিচারকের প্যানেল বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী শরিফ ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাগুলির উত্তরোত্তর তদন্তের জন্য বিষয়টি ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো বা জাতীয় জবাবদিহিতা কার্যালয়ে দাখিল করা হবে৷ বিচারকদের প্যানেল সর্বসম্মতিক্রমে শরিফকে ‘ডিসকোয়ালিফাই' করার সিদ্ধান্ত নেন৷
‘পানামাগেট'
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে তথাকথিত পানামা পেপার্সের সূত্রে প্রকাশ পায় যে, শরিফের সন্তানদের মধ্যে তিনজনের এমন কিছু অফশোর কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, যাদের লন্ডনে স্থাবর সম্পত্তি আছে৷ শরিফ এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন৷
অতঃপর শরিফের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যে পিটিশন দাখিল করা হয়, তার ফলশ্রুতি স্বরূপ সর্বোচ্চ আদালত গত এপ্রিল মাসের রায়ে শরিফকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডিসকোয়ালিফাই, অর্থাৎ অযোগ্য ঘোষণা করতে অস্বীকার করলেও, একটি জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশান টিম (জেআইটি) বা যৌথ তদন্ত গোষ্ঠী গঠনের নির্দেশ দেন৷ উদ্দেশ্য: এই জেআইটি শরিফ সংক্রান্ত অভিযোগগুলির তদন্ত চালিয়ে যাবে৷
এ বছরের ১০ই জুলাই তারিখে সুপ্রিম কোর্টকে প্রদত্ত রিপোর্টে জেআইটি বলে যে, শরিফ পরিবারের সম্পত্তি বৃদ্ধির জন্য তাঁর দুই পুত্র, হুসেইন ও হাসান নওয়াজকে প্রক্সি বা প্রতিহস্ত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে৷
জেআইটি আরো বলে যে, শরিফ পরিবার তাদের ‘‘আয়ের জ্ঞাত ও বিদিত উৎস'' সংক্রান্ত আবশ্যক নথিপত্র জমা দিতে পারেনি – অর্থাৎ শরিফ পরিবার তাদের সম্পত্তির সঙ্গে তাদের আয়ের সামঞ্জস্য দেখাতে পারেনি৷ পরিশেষে ছয় সদস্য বিশিষ্ট জেআইটি বিষয়টি জাতীয় জবাবদিহিতা কার্যালয়ে পাঠানোর সুপারিশ করে৷
শুক্রবারের রায়ের অর্থ এই যে, শরিফ সংসদে তাঁর আসন বজায় রাখতে পারবেন না৷ সম্ভবত তিনি তাঁর মুসলিম লিগ দলের অপর কোনো প্রার্থীকে আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচন অবধি প্রধানমন্ত্রী পদে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য মনোনীত করবেন – যদি তাঁর পক্ষে মধ্যকালীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য চাপ প্রতিহত করা সম্ভব হয়, বিরোধী নেতা ইমরান খান, যিনি পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের প্রধান, তিনি ইতিমধ্যেই যেমন দাবি করছেন৷
শরিফ স্বয়ং বিপুল ভোটে ২০১৩ সালের নির্বাচন জেতার পর ক্ষমতায় আসেন৷ তিনবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তিনি কোনোবারেই তার কর্মকাল পূর্ণ করতে পারেননি৷ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় কর্মকাল অসমাপ্ত থেকে যায়, কেননাজেনারেল পারভেজ মুশাররফ একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেন৷ এবারেও শরিফকে পাকিস্তানের শক্তিশালী মিলিটারি এস্ট্যাবলিশমেন্টের রোষের বলি হতে হচ্ছে, বলে কিছু বিশ্লেষকের ধারণা: সামরিক হর্তাকর্তারা নাকি বিরোধী দলগুলিকে সমর্থন করছেন৷ শরিফ যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিসাধন ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রচেষ্টা করছেন, সেটাই নাকি তাঁকে অপ্রিয়পাত্র করে তুলেছে৷
শামিল শামস/এসি