আর্কটিকের সমুদ্রতল থেকে বের হচ্ছে বিষাক্ত গ্যাস
১৭ মে ২০০৯জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে দিন দিন পরিবেশবাদীরা আরো সোচ্চার হয়ে উঠছে৷ একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশও আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন৷ কিন্তু এরপরও জলবায়ু পরিবর্তন অব্যাহত রয়েছে৷ বিশেষ করে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন না কমার ফলে উত্তর মেরুর বিশাল এলাকার বরফ গলতে শুরু করেছে৷ সম্প্রতি উত্তর মেরু বা আর্কটিক এলাকার একটি বিশাল আকারের বরফ খণ্ড মূল ভুখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে গেছে যার আয়তন গোটা নিউইয়র্ক শহরের সমান৷ তাই পরিবেশ নিয়ে বিশ্ববাসীর চিন্তা ক্রমেই বাড়ছে৷ আর্কটিকের ওপর নজরদারী করার জন্য আটটি দেশের সমন্বয়ে গঠিত আর্কটিক কাউন্সিল রয়েছে৷ এ দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক এবং আইসল্যান্ড৷ এসব দেশ আর্কটিক অঞ্চলের পরিবেশ নিয়ে নানা গবেষণা ছাড়াও এর সংরক্ষণের বিষয়টিও দেখাশোনা করে থাকে৷
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্কটিকের বিশাল বরফ খণ্ড গুলো গলে যাচ্ছে৷ এতে করে কিছু উপকার যে হচ্ছে না তা নয়৷ যেমন বরফ গলে যাওয়ার কারণে নতুন নতুন নৌপথের সৃষ্টি হচ্ছে ফলে জাহাজ আগের চেয়ে সহজে চলাচল করতে পারছে৷ সাগরের নিচে তেল গ্যাস সহ নানা খনিজ পদার্থ অনুসন্ধান করাটাও আগের চেয়ে সহজ হয়ে পড়ছে৷ কিন্তু এ উপকারের পরিবর্তে যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে গোটা পরিবেশ তার মাত্রা কিন্তু ভয়াবহ৷ প্রথমেই আসবে বরফ গলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার বিষয়টি৷ জাতিসংঘ মনে করছে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বরফ গলার কারণে এ শতকে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ৭ থেকে ২৩ ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়বে৷ তবে অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন এক মিটার পর্যন্ত উচ্চতা বাড়তে পারে যা আমেরিকার ফ্লোরিডা কিংবা বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র উপকূল এলাকাকে তলিয়ে দেবে৷
উত্তর মেরুর বিশাল বরফ খণ্ড গলে যাওয়ার ফলে যে কেবল সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার আশংকা আছে তা-ই নয়৷ এ বিশাল বরফ খণ্ডের তলদেশে আটকে আছে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ সহ গ্যাস৷ এসব গ্যাস ও রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে ছড়িয়ে পড়লে তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ ২০০১ সালে জাতিসংঘের একটি চুক্তিতে ১২ প্রকারের রাসায়নিক পদার্থ চিহ্নিত করা হয় এবং এসব পদার্থ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ তবে আর্কটিক মনিটরিং এন্ড এ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম এএমএপি জানিয়েছে আর্কটিকের বরফ গলে যাওয়ার কারণে বরফের তলদেশ থেকে জমে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ এবং গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে৷ এসব পদার্থ মেরু অঞ্চলে বসবাসকারী জনগণের জন্য খুবই ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে৷ ডার্টি ডজন নামে ১২ প্রকারের নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে ছড়িয়ে পড়লে তা ক্যান্সার ও মস্তিষ্কে ক্ষতি করে৷ এছাড়া নারীদের বাচ্চা জন্মদানের সময় জটিলতারও সৃষ্টি হয়৷ পরিবেশবাদীরা বলছেন, মানুষের সৃষ্ট এ বিপর্যয় কেবল মানব জাতির জন্যই বিপজ্জনক নয় মেরু অঞ্চলের প্রাণীকুলের অস্তিত্বের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
প্রতিবেদক: রিয়াজুল ইসলাম, সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার