আর্জেন্টিনাকে নিয়ে খেললো ক্রোয়েশিয়া
২১ জুন ২০১৮ম্যাচের ফলেও মিললো তার প্রমাণ৷ ফিফার ২০ নম্বর র্যাংকিংয়ের ক্রোয়েশিয়া, অনায়াসে ৩-০ গোলে হারিয়ে দিলো ৫ম স্থানে থাকা আর্জেন্টিনাকে৷
টিভি স্ক্রিনে মাঠে উপস্থিত মারাদোনাকে দেখানো হচ্ছিল। এতটা বিমর্ষ হয়ত তাঁকে কখনই দেখা যায়নি৷ বেশিরভাগ সময়ই তাঁকে দেখা গেছে উত্তেজনায় হাতের নখ কামড়াতে৷
খেলা শুরুর বাঁশি বাজার মুহূর্ত থেকেই আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারদের ব্যাপক চাপের মুখে রাখে ক্রোয়েশিয়া৷ একের পর এক আক্রমণ কোনোরকমে ঠেকিয়ে সময় পার করাই যেন ছিল আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারদের একমাত্র লক্ষ্য৷
অন্যদিকে, দুর্দান্ত ডিফেন্স তৈরি করে সফলভাবে আর্জেন্টিনার প্রতিটি আক্রমণ রুখে দেয় ক্রোয়াটরা৷ কয়েকবার মেসি একক প্রচেষ্টায় বিপজ্জনকভাবে ডিবক্সে ঢুকে পড়লেও, তাঁকে শট নিতে দেননি বিপক্ষের ডিফেন্ডাররা৷
বল দখলে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও প্রথমার্ধে কার্যকর কোনো আক্রমণ রচনা করতে পারেননি মেসিরা৷ পরিসংখ্যান বলছে, প্রথমার্ধের শেষ ২১ মিনিটে সার্জিও আগুয়েরো একবারের জন্যও বল স্পর্শ করতে পারেননি৷
প্রথমার্ধে ক্রোয়েশিয়ার সব ঠেকিয়ে দিলেও দ্বিতীয়ার্ধে আর ডিফেন্সের দুর্বলতা ঢাকতে পারেনি আর্জেন্টিনা৷ ৫৩ মিনিটে মারাত্মক ভুল করে বসেন গোলকিপার উইলি কাবায়েরো৷
গ্যাব্রিয়েল ম্যার্কাদোর ব্যাকপাস ধরতে গিয়ে গোলপোস্ট ছেড়ে এগিয়ে আসেন কাবায়েরো৷ কিন্তু বল এসে পড়ে আন্টে রেবিচের পায়ে৷ কোনো ভুল করেননি রেবিচ৷ দারুণ এক ভলিতে গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন জালে৷
এরপর গোলশোধ থেকে আর্জেন্টিনাকে ঠেকাতে মরিয়া হয়ে ওঠে ক্রোয়েশিয়া৷ মাঠে আক্রমণাত্মক ট্যাকলের জন্য ৩টি হলুদ কার্ড দেখতে হয় ক্রোয়াট খেলোয়াড়দের৷
মাঠে খেলোয়াড়দের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা৷ বেশ কয়েকবার খেলা বাদ দিয়ে দুই দলের খেলোয়াড়দের দেখা যায় তর্কে জড়িয়ে পড়তে৷ স্বাভাবিক শান্ত স্বভাবের মেসিকেও একবার দেখা গেছে মেজাজ হারাতে৷
তবে মেজাজ হারিয়ে গোল শোধ তো হয়ইনি, বরং ৮০ মিনিটে আবার গোল খেয়ে বসে আর্জেন্টিনা৷ এবারের নায়ক লুকা মোদ্রিচ৷ ডিবক্সের ভেতর থেকে অসাধারণ বাঁকানো শট বারের পাশ ঘেঁষে চলে যায় জালে৷ গোলরক্ষক কাবায়েরো ডাইভ দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও বল শুধু স্পর্শই করতে পারেন তিনি৷ বলের গতির তাতে কোনো হেরফের হয়নি৷
খেলার ইনজুরি টাইমে ৯১ মিনিটে আবারো ফুটে ওঠে আর্জেন্টাইন ডিফেন্সের ফাটল৷ ইভান রাকিতিচের একটি জোরালো শট আর্জেন্টিনার গোলকিপার কোনোরকমে ঠেকালেও তা ফিরে আসে কোভাচিচের কাছে৷ কোভাচিচ আবার বল পাস দেন রাকিতিচকে৷ এবার আর ভুল করেননি তিনি৷ সোজা বল জালে৷ ফল ৩-০৷
প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের সাথে ড্র, এবং দ্বিতীয় ম্যাচে এই পরাজয়ের ফলে গ্রুপ ডি-এর পয়েন্ট টেবিলে তৃতীয় স্থানে চলে গেছে আর্জেন্টিনা৷ দুই ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ক্রোয়েশিয়া৷ এক ম্যাচ কম খেলায় দ্বিতীয় স্থানে আছে আইসল্যান্ড৷
গ্রুপের শেষ ম্যাচে ২৬ তারিখ নাইজেরিয়ার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা, একই দিনে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে খেলবে আইসল্যান্ড৷
সে ম্যাচে নাইজেরিয়াকে অবশ্যই হারাতে হবে আর্জেন্টিনার৷ শুধু তাই নয়, প্রার্থনা করতে হবে, পরের ম্যাচে যাতে আইসল্যান্ড কোনোভাবেই জিততে না পারে৷
ফ্রান্স-পেরু
খেলার ৫৭% সময় বল দখলে রেখেছিল পেরু৷ তবে ফল হলো উলটো, ম্যাচ গেলো ফ্রান্সের ঘরে৷
বেশ কয়েকবার গোলের সুযোগ তৈরি করলেও সফলতা পায়নি পেরু৷ তবে প্রথমার্ধের বেশিরভাগ সময় একের পর এক আক্রমণে পেরুর ডি বক্স কাঁপায় ফ্রান্স৷ দারুণ গতির ফুটবলে গ্যালারিতেও ছিল ব্যাপক উত্তেজনা৷
প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে ১৬ মিনিটে ফ্রান্সের ব্লাইসে মাতুইদি এবং ২৩ মিনিটে পেরুর পাওলো গুয়েরেরো হলুদ কার্ড দেখেন৷
অবশেষে খেলার ৩৪ মিনিটে আসে ফ্রান্সের সাফল্য৷ এর আগে কয়েকবার ব্যর্থ হলেও এবার আর ভুল করেননি কাইলিয়ান এমবাপে৷ গিরোদের পাস গোলকিপারকে ফাঁকি দিলে বলে পা ছুঁইয়ে গোল নিশ্চিত করেন তিনি৷
ফ্রান্সের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে বড় কোনো টুর্নামেন্টে গোল করার রেকর্ড করলেন এমবাপে৷ পেরুর বিপক্ষে ম্যাচে মাঠে নামার সময় তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর ১৮৩ দিন৷
দ্বিতীয়ার্ধে আরো জমাট বাঁধে ম্যাচ৷ এবার দেখা যায় গেল পরিশোধে মরিয়া পেরুকে৷ দারুণ সব আক্রমণে ফরাসি রক্ষণভাগকে ব্যস্ত রাখলেও জালে বল জড়াতে পারেনি পেরু৷ ৮১ মিনিটে পেদ্রো সানচেজ এবং ৮৬ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন ফ্রান্সের পল পগবা৷
তবে একের পর এক দুর্দান্ত আক্রমণ উপহার দিলেও গোল আর পরিশোধ করা হয়ে ওঠেনি পেরুর৷ টানা দুই ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হলো দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশটির৷
অস্ট্রেলিয়া-ডেনমার্ক
বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম দেখায় কেউ কাউকে ছাড় দিলো না অস্ট্রেলিয়া-ডেনমার্ক৷ ১-১ গোলে ড্র করায় গ্রুপ সি থেকে এখনও শেষ ষোলতে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখলো অস্ট্রেলিয়া৷
এর আগে তিনবার প্রীতি ম্যাচে দেখা হয়েছে দুই দলের৷ সবগুলোতেই এসেছে ফলাফল৷ ডেনমার্ক জয় পেয়েছে দুটিতে, অস্ট্রেলিয়া অপরটিতে৷ কিন্তু ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরে ফল আনতে পারলো না কেউই৷
খেলা শুরুর ৭ মিনিটেই ডি বক্সের ভেতর থেকে নেয়া এক শটে ডেনমার্ককে এগিয়ে দেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন৷ এরপর অস্ট্রেলিয়ার ওপর চাপ আরও বাড়ায় ডেনমার্ক৷
খেলার ৩৭ মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর ইচ্ছাকৃত হ্যান্ডবলের কারণে হলুদ কার্ড দেখেন ডেনমার্কের ইউসুফ পোলসেন, ভিএআর প্রযুক্তির কল্যাণে পেনাল্টি পায় অস্ট্রেলিয়া৷ দুই ম্যাচে দুই হলুদ কার্ড দেখায় ফ্রান্সের বিপক্ষে পরের ম্যাচে খেলতে পারবেন না পোলসেন৷
ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচে ভিএআর ব্যাবহারে এমন একটি পেনাল্টি থেকেই পয়েন্ট হারায় অস্ট্রেলিয়া৷ এবার সুয়োগ নিজেদের পক্ষে আসায় তা আর হাতছাড়া হতে দেননি মাইল ইয়েদিনাক৷ সেই সাথে থামে আন্তর্জাতিক ম্যাচে ডেনমার্কের ৫৭১ মিনিট গোল না খাওয়ার রেকর্ড৷
দ্বিতীয়ার্ধে আর কোনো গোল করতে পারেনি কোন দলই৷