আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে
২ মার্চ ২০১৪২০১২ সালে ভারতে প্রতি এক লাখ মানুষেরর মধ্যে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় গড়ে ১২ জন৷ জাতীয় ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যানের হিসেব অনুযায়ী, মোটামুটিভাবে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ১৫ জন এবং দৈনিক গড়ে ৩৭১ জন আত্মহত্যা করেছেন৷ এর মধ্যে ২৪২ জন পুরুষ এবং ১২৯ জন মহিলা৷ এই হিসেবে ২০১২ সালে গোটা দেশে আত্মহত্যাকেই মুক্তি বলে মনে করেছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪৪৫ মানুষ৷ এর মধ্যে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গকে ধরা হয়নি৷ কারণ পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৫ হাজার আত্মহত্যার যে পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে, তাতে প্রকৃতিগত বিন্যাসে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে৷
এই চরমপন্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে শীর্ষে আছে দক্ষিণী রাজ্য তামিলনাড়ু৷ এক বছরে সেখানে আত্মহত্যা করেছে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ৷ দ্বিতীয় স্থানে আছে মহারাষ্ট্র, আত্মহত্যার সংখ্যা সেখানে ১৬ হাজারেরও বেশি৷ পশ্চিমবঙ্গের স্থান তৃতীয় এবং অন্ধ্রপ্রদেশ চতুর্থ৷ ২৮টি রাজ্যে মোট আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৬৭ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ২৭৭৮৷ কেন্দ্রশাসিত লাক্ষাদ্বীপ হলো একমাত্র অঞ্চল যেখানে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে মাত্র একটি৷ কেন্দ্রশাসিত দিল্লিতে এই সংখ্যা প্রায় ১৯০০৷ আত্মহত্যার পথ হিসেবে সবথেকে বেশি পছন্দ গলায় দড়ি ৩৩ শতাংশ, বিষ খাওয়া ২৯ শতাংশ, গায়ে আগুন লাগানো ৮.৫ শতাংশ৷ জানা গেছে, ২০১২ সালে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ গলায় দড়ি দেয়, যার মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার পুরুষ৷ আর বিষ খেয়ে মারা যায় ১৯ হাজার ৪৪৫ জন, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার মহিলা৷
মানুষ কেন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়? মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এর প্রধান কারণ আর্থ-সামাজিক, পারিবারিক হিংসা, দাম্পত্য কলহ, জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা, নিঃসঙ্গতা, মাদকাসক্ত, দুরারোগ্য রোগে অসুস্থতা, প্রেম-ভালোবাসায় ব্যর্থতার মতো আবেগজনিত কারণে মানসিক সুস্থিতি বা ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে মানুষ তখন এই চরম পথেই মুক্তি খোঁজে৷ দিল্লির নামি-দামি গঙ্গারাম হাসপাতালের মনোচিকিৎসক ডা. মেহতা বলেন, বিবাহিত মহিলাদের তুলনায় বিবাহিত পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি৷ মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা আবেগের দিক থেকে দুর্বলচিত্ত যেটা প্রচলিত ধারণার বিপরীত৷ এই হার পুরুষদের ক্ষেত্রে যেখানে ৭১ শতাংশ, মহিলাদের ক্ষেত্রে ৬৮ শতাংশ৷ আত্মহত্যার প্রাথমিক লক্ষণ হলো, হাবভাব, আচার-আচরণে পরিবর্তন, মানসিক অবসাদ, নিজেকে গুটিয়ে রাখা, বৈষয়িক জিনিস-পত্র বিলিয়ে দেয়ার ইচ্ছা ইত্যাদি৷ বলেন ডা. মেহতা৷ তাঁর কথায়, এক্ষেত্রে কাউন্সিলিং হলো প্রধান প্রতিষেধক৷
কোনো কোনো মনোবিদের মতে, এই নব্য-উদার যুগের প্রতিযোগিতার ঘোড়দৌড়ে অনেকেই সাফল্যকে জীবনের বীজমন্ত্র হিসেবে ধরে নেন৷ বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম অন্ধের মতো সাফল্যের পেছনে ছুটতে ছুটতে এক সময় থই না পেয়ে মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত৷ হারিয়ে ফেলে ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি৷ ব্যর্থতা থেকে আসে অবসাদ৷ গভীর অবসাদ আর হতাশা থেকে জাগে আত্মহত্যার প্রবণতা৷
মেয়েদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, পারিবারিক তথা দাম্পত্য হিংসা তাঁদের আত্মহত্যার দিকে টেনে নিয়ে যায়৷ এই প্রবণতার প্রতিষেধক হিসেবে মনস্তাত্ত্বিকরা জীবনের প্রতি একটা ইতিবাচক সুস্থ মানসিকতা বা দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার কাজে মিডিয়া, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী এবং স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনগুলির বড় ভূমিকার কথা বলেন৷