1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আল জাজিরা কি বন্ধ হবে?

২৭ জুন ২০১৭

কাতারের সঙ্গে পারস্য উপসাগরীয় কয়েকটি দেশের চলমান দ্বন্দ্বের কারণে আল জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলের নাম আলোচনায় উঠে এসেছে৷ চ্যানেলটি বন্ধ করার শর্ত দিয়েছে আরব রাষ্ট্রগুলো৷

https://p.dw.com/p/2fTpy
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Ulmer

চলতি মাসের পাঁচ তারিখে সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয়৷ এরপর সেই সম্পর্ক উন্নয়নে ১৩ দফা শর্ত দেয় চার আরব রাষ্ট্র৷ এর মধ্যে আল জাজিরা বন্ধের দাবিও রয়েছে৷ চ্যানেলটি সন্ত্রাসবাদ প্রসারে ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ ঐ রাষ্ট্রগুলোর৷ তবে কাতার সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ কুয়েতের মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার এই দাবিগুলো কাতারকে জানায় ঐ চার আরব দেশ৷ ১০ দিনের মধ্যে এসব শর্ত পূরণ করতে বলা হয়েছে৷

তবে এসব শর্তকে ‘বেশ উসকানিমূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল৷ সোমবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বয়কট উঠিয়ে নেয়ার শর্ত হিসেবে চার আরব রাষ্ট্র কাতারকে যে ১৩ দফা দাবি দিয়েছে তা ‘বেশ উসকানিমূলক’, কারণ কয়েকটি দাবি দোহা’র সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করে৷ অবশ্য কয়েকটি দাবি আলোচনার যোগ্য বলেও মনে করেন তিনি৷

গাব্রিয়েল বলেন, কোন দাবিগুলো কাতার গ্রহণ করতে পারবে আর কোনগুলো সমস্যামূলক, তা নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনও রবিবার এমন আভাস দেন৷ মঙ্গলবার কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টিলারসনের বৈঠক হওয়ার কথা৷

চ্যানেলটি কি বন্ধ হবে?

পুরোপুরি না হলেও তাদের সম্পাদকীয় নীতিমালায় পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক৷ মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ সুলতান সুদ আল কাশেমি বলেন, ‘‘এর আগে আল জাজিরাকে ঘিরে পারস্য উপসাগরীয় দেশ ও মিশরের সঙ্গে কাতারের সম্পর্কে বেশ কয়েকবার চিড় ধরেছিল৷ ২০০২ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে সৌদি আরবের নেয়া শান্তি পরিকল্পনা বিষয়ে আল জাজিরার কভারেজ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিল সৌদি আরব৷ ফলে কাতার থেকে সৌদি রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল দেশটি৷ এছাড়া ২০১৪ সালে সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিষয়ে ‘নাক গলানো’ বন্ধের অঙ্গীকার করেছিল৷’’ আল জাজিরা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাতারের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো কাতারের উপর চাপ দিয়ে যাবে বলেও মনে করেন তিনি৷

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছিল আল জাজিরা৷ আরব রাষ্ট্রের চ্যানেলগুলোর মধ্যে আল জাজিরাই প্রথম তাঁর সাক্ষাৎকার প্রচার করে৷ সেখানে সৌদি আরবে জন্ম নেয়া লাদেন সৌদি আরবের সমালোচনা করে দেশটিতে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছিলেন৷ এতে সেই সময় ক্ষিপ্ত হয়েছিল সৌদি আরব৷

খোলা চিঠি

সোমবার এক খোলা চিঠিতে আল জাজিরা জানিয়েছে, আল জাজিরা বন্ধের চেষ্টার অর্থ হচ্ছে অত্র অঞ্চলে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে নীরব করার চেষ্টা, এবং সকলের তথ্য পাওয়ার স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করা৷ এটা অবশ্যই ঘটতে দেয়া উচিত নয়৷ ‘‘আমরা সততার সঙ্গে আমাদের কাজ চালিয়ে যাব৷ সত্যের সন্ধানে আমরা সাহসি মনোভাব দেখিয়ে যাব৷ এবং আমরা মানুষের তথ্য জানার অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে যাব,’’ খোলা চিঠিতে লিখেছে আল জাজিরা৷

সাফল্যের পেছনে সৌদি আরব?

ব্রিটেনের ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকার চিঠিপত্র কলামে প্রকাশিত এক চিঠিতে আয়ান রিচার্ডসন লিখেছেন, সৌদি আরবের একটি সিদ্ধান্তের কারণে আল-জাজিরা সাফল্য পেয়েছে৷ নব্বই দশকের মাঝামাঝি তিনি বিবিসি আরবি টিভি চ্যানেলের ম্যানেজিং এডিটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলে লিখেছেন৷ তিনি বলেন, বিবিসি টিভির কন্টেন্ট নিয়ে সৌদি আরবের আপত্তি থাকায় তারা তাদের মালিকানাধীন স্যাটেলাইট থেকে বিবিসিকে সরিয়ে দিয়েছিল৷ ফলে চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ আর এর সুবিধা পেয়েছিল আল জাজিরা৷ কারণ, বিবিসির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রায় দেড়শ’ সাংবাদিক, ক্যামেরাম্যান, ভিডিও এডিটরসহ অন্যান্য কলাকুশলীদের নিয়োগ দিয়েছিল আল জাজিরা৷ এ কারণেই সাফল্য পেয়েছিল আল জাজিরা৷

আল জাজিরার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বিক্ষোভ

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা তিন থেকে পাঁচ লাখ উল্লেখ করায় ২০১৪ সালের নভেম্বরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতিবাদ হয়েছিল৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ আনা হয়েছিল ঐ টিভির চ্যানেলটির বিরুদ্ধে৷

জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স, এপি, ডিপিএ)