1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আলোচনায় আবার কিশোর গ্যাং

১ অক্টোবর ২০২০

সাভারে স্কুল ছাত্রী নীলা রায় হত্যার পর আবারো আলোচনায় এসেছে কিশোর গ্যাং৷ এমন গ্যাং ঢাকাসহ সারাদেশে সক্রিয়৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ উদ্বিগ্ন অভিভাকরা৷

https://p.dw.com/p/3jHvM
ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় ৪০টির মতো কিশোর গ্যাং রয়েছেছবি: bdnews24.com

নীলা হত্যার মূল আসামি মিজানুর রহমান ও তার দুই সহযোগীকে পুলিশ এরই মধ্যে আটক করেছে৷ মিজানুরের নেতৃত্বে ওই এলাকায় একটি কিশোর গ্যাং অপরাধ করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে৷ তারা মাদক ব্যবসায়ও যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে৷ এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতো তারা৷ মোটর সাইকেলে মহড়া দিতো৷তাদের মূল গডফাদার স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা৷ মূলত তার মাদক ব্যবসা এবং নানা অপরাধকর্মে সহযোগিতার জন্যই মিজানুর এই গ্যাংটি গড়ে তোলে৷

বরগুনার নয়ন বন্ড গ্রুপও একটি কিশোর গ্যাং৷ তারাও মাদকসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিল৷ তাদের আলাদা ফেসবুক গ্রুপও ছিল৷ সেই গ্রুপে আহ্বান জানিয়েই তারা রিফাতকে হত্যা করেছিল৷ তাদেরও গডফাদার বা পৃষ্ঠপোষকদের নাম প্রকাশিত হয়েছে৷ কিন্তু তারা কেউ আইনের আওতায় আসেননি৷

জানা গেছে, শুধু ঢাকায়ই বিভিন্ন এলাকায় ৪০টির মতো কিশোর গ্যাং রয়েছে৷ পুলিশ সূত্র জানায়, গত এক বছরে তারা ঢাকায় অন্তত পাঁচটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে৷ এর মধ্যে উত্তরার কিশোর গ্যাং সবচেয়ে আলোচিত৷ সেখানে একাধিক গ্যাং রয়েছে৷ ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে উত্তরায় ডিসকো এবং নাইন স্টার গ্রুপের দ্বন্দ্বে নিহত হয় কিশোর আদনান কবির৷ তার পরের মাসে তেজকুনি পাড়ায় দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে খুন হয় কিশোর আজিজুল হক৷ ঢাকার বাইরে থেকেও প্রায়ই কিশোর গ্যাং-এর দ্বন্দ্বে খুনখারাবির খবর পাওয়া যায়৷

পরিবার ও সমাজের সঙ্গে রাষ্ট্রেরও দায় আছে: নূর খান

এই গ্যাংগুলোতে উচ্চবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত সব ধরনের পরিবারের সন্তানরাই রয়েছে৷ হিরোইজম, আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্খা থেকে গ্যাংগুলো গড়ে ওঠে এবং নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে৷ তাদের ফেসবুক গ্রুপ থাকে, আলাদা নাম, বিশেষ পোশাকও থাকে৷ মোটর সাইকেলে মহড়া দেয়৷ ব্যবহার করে আগ্নেয়ান্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র৷ কোনো কোনো কিশোর যে পরিবার থেকেও প্রশ্রয় পায় সাভারের ঘটনায় তা স্পষ্ট৷

বিশ্লেষকরা মনে করেন, কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার নানা উপাদান এখন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে বিদ্যমান৷দেশের সামাজিক অবস্থা, দুর্নীতি, অপরাধ, রাষ্ট্রীয় এবং পরিবারের মধ্যে যে অপরাধের বীজ রয়েছে কিশোররা তার বাইরে নয়৷

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘কিশোররা দেখে অপরাধীরা হিরো৷ তারা দেখে বড়রা নানা অপরাধ করে ক্ষমতাবান হচ্ছে৷ ফলে তারাও সেই পথে যায়৷ তারা গ্যাং গঠন করে৷ নিজেকে ক্ষমতাবান করতে চায়৷ হিরো হতে চায়৷ গড়ে তোলে কিশোর গ্যাং৷''

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘‘এখানে পরিবার ও সমাজের সঙ্গে রাষ্ট্রেরও দায় আছে৷ রাষ্ট্র ও সমাজে ঘুস, দুর্নীতি থাকলে আপনি ভালো সমাজ আশা করতে পারেন না৷ যেখানে ন্যায় বিচার নেই, সেখানে আপনি কিশোরদের কাছে আলাদাভাবে কীভাবে মূল্যবোধ আশা করেন, ভালো আচরণ আশা করেন?''

তবে তারা মনে করেন, এসব ক্ষেত্রে পরিবারেরও একটি বড় ভূমিকা আছে৷ কিন্তু চারপাশের পরিবেশ ঠিক না থাকলে শুধু পারিবারিক মূল্যবোধ দিয়ে কাজ হয় না৷ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবখানে মূল্যবোধ, সতততা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷

এই কিশোর গ্যাং-এর পিছনে গডফাদার আছে, অপরাধী চক্র আছে, তাদের সবার আগে আইনের আওতায় আনতে হবে৷