আলোকে ‘কথা বলিয়ে’ তথ্যের আদান-প্রদান করা হবে
৪ এপ্রিল ২০১১ইন্টারনেটের এই যুগে তথ্য আদান প্রদানের গতি অনেক বেড়ে গেছে৷ কিন্তু এরপরও মাঝে মধ্যে দেখা যায়, টিভিতে ছবি ঝাপসা আসছে, কিংবা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের গতি অনেক কমে গেছে৷ একসঙ্গে অনেকে মোবাইল ফোনে কথা বললে কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করলেই এই সমস্যাটি দেখা দেয়৷ এই সমস্যা সমাধানে আসছে এলইডি তারবিহীন অপটিক্যাল কমিউনিকেশন৷
কোন মাধ্যম নয়, একেবারে সরাসরি আলো ব্যবহার করেই ডাটা আদান প্রদানের নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এখন বিভোর জার্মানির গবেষক হারাল্ড হাস৷ এক্ষেত্রে তিনি ব্যবহার করছেন এলইডি৷ স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক তাঁর নতুন প্রযুক্তি নিয়ে ব্যস্ত৷
একপাশে একটি সাদা বাক্সে রাখা এলইডি ল্যাম্প, অন্যদিকে একটি রিসিভার, মাঝখানে কিছু নেই৷ হারাল্ড হাস জানালেন, ‘‘এই পাশে একটি এলইডি রাখা যেটি এই সংগীত বহন করছে৷ এটার প্রমাণ হলো যখন আলোর কিরণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে, তখনই শব্দ থেমে যাচ্ছে৷ যখন আবার বাধা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে তখন আবারও এই শব্দ শোনা যাচ্ছে৷ অর্থাৎ এলএইডি ল্যাম্পের সাহায্যে আওয়াজ বহন করা হচ্ছে৷''
প্রফেসর হাস বিষয়টি বোঝানোর জন্য তাঁর হাতটি কয়েকবার আলোর সামনে আনা নেওয়া করেন৷ এবং প্রতিবারই তাঁর কথা প্রমাণিত করে শব্দটি থেমে যায় এবং বেজে ওঠে৷
নতুন এই আবিষ্কার এখন প্রফেসর হাসকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে৷ শুধু বাসা-বাড়ির আলো নয়, রাস্তার আলোকেও তিনি তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে সকলের সামনে তুলে ধরতে চান৷ অর্থাৎ আলো থেকেই একজন তার মোবাইলে ইন্টারনেটের সংযোগ পেয়ে যাবে, কিংবা শুধু আলো দিয়েই কেউ তার রেডিওটি চালু করতে পারবে৷ অর্থাৎ যে আলোকে আমরা এতদিন ধরে নির্বাক বলেই জানতাম, সেই আলোকেই এবার কথা বলাতে যাচ্ছেন জার্মানির এই বিজ্ঞানী৷ তিনি বললেন, ‘‘একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, আমাদের আশেপাশে আলোর বহু উৎস রয়েছে৷ এবং যখন এসব আলোর উৎস ডাটা আদান প্রদানে ব্যবহার করা সম্ভব হবে, তখন কী পরিমাণ সম্ভাবনা আমাদের সামনে খুলে যাবে, আমাদের গোটা তারবিহীন তথ্য আদানপ্রদান পরিমাণ কত বেশি বেড়ে যাবে!''
তবে এই পরীক্ষা শুধু গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না৷ এই অভিনব প্রযুক্তিকে বাজারজাত করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ প্রয়োজন এক ক্ষুদ্র ট্রান্স রিসিভার ব্যবস্থা, যার মধ্যে থাকবে প্রেরক ও গ্রাহক যন্ত্র৷ এলইডি বাল্ব, স্মার্টফোন ও কম্পিউটার – সর্বত্র যোগ করা যেতে পারে এই প্রযুক্তি৷ ফলে আলোর মাধ্যমেই গান, ছবি, ভিডিও'র মত ফাইল আদান-প্রদান করা সম্ভব হবে৷ প্রফেসার হাস'এর কথায়, ‘‘আলোকে কথা বলাতে হলে আলোর ঘনত্ব বাড়ানো বা কমাতে হবে৷ একমাত্র এভাবেই আলোর মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদান সম্ভব৷ অর্থাৎ আলোর কম্পন ঘটিয়ে সেই স্পন্দনের মাধ্যমে ফাইল পাঠানো যাবে৷''
নতুন এই প্রযুক্তির ফলে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটের গতিতে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে তাতে সন্দেহ নেই৷ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি বহুগুণ বেড়ে যাবে ৷ অনেক জায়গায় বর্তমান সেল ফোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা নিরাপদ নয়৷ যেমন, পানির নীচে, বিমানের ভেতর কিংবা হাসপাতালে৷ নতুন এই প্রযুক্তির ফলে সেসব জায়গাতেও মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে৷ প্রফেসর হাসের কথায়, ‘‘অদূর ভবিষ্যতে মানুষ দেখবে যে তার টেবিল ল্যাম্পটি কিংবা সিলিং এ লাগানো বাতিটি থেকেই সে ইন্টারনেট সংযোগ পাচ্ছে৷
তবে এই প্রযুক্তিকে আরও এগিয়ে নিতে হলে আরও বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করা বাকি৷ কারণ আলো দেওয়াল ভেদ করে যেতে পারে না, যেটা বর্তমান তারবিহীন প্রযুক্তি পারে৷ এছাড়াও এই প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের নাগালে থাকবে কিনা সেটাও একটা বড় প্রশ্ন৷ এর বাইরে পরিবেশগত প্রভাবের বিষয়টি তো রয়েছেই৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন