1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঘূর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে লড়

৩ জুন ২০১৮

বৃষ্টি, ভূমিধস আর ঘূর্ণিঝড়ের মতো বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা এখন আদিম মানুষের মতোই অসহায়৷ শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গারা নির্ভর করছেন কেবল ভাগ্যের উপর৷

https://p.dw.com/p/2yk3p
রোহিঙ্গা ক্যাম্প
ছবি: Getty Images/AFP/P. H. Kyaw

এ সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরের পাশেই পাহাড়৷ বিষণ্ণ দৃষ্টিতে দেখছিলেন শরণার্থী ওয়াসিউর রহমান মাটির পাহাড়ের একটি জায়গা৷ সেখানে কিছুদিন আগে ভারি বৃষ্টিতে ভূমিধসে মারা গেছেন এক রোহিঙ্গা নারী৷ তিনি হয়তো ভাবছিলেন, নিজের এবং তার পরিবারের বেঁচে যাওয়ার সৌভাগ্যের কথা৷    

৫৩ বছর বয়স্ক ওয়াসিউর বলেন, ‘‘আমার পরিবারও মারা যেতে পারতো৷ চারপাশে প্রচুর শিশু রয়েছে৷ আমরা সবসময়ই আতঙ্কে থাকি কখন বৃষ্টির কারণে ভূমিধস হয়!''

পরিবারের ৯ সদস্য নিয়ে ওয়াসিউর মিয়ানমার থেকে জাতিগত নিপীড়ণের কারণে পালিয়ে আসার পর পাহাড়ের ঠিক পাশেই বাঁশের মাচা ঘর তৈরি করে থাকছেন৷

গত আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংস নিপীড়ণে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে৷ কিন্তু এবার বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগ থেকেই শুরু হয়েছিল শঙ্কা৷ আগের শরণার্থী এবং নতুন করে আসা শরণার্থী মিলিয়ে মোট ১০ লাখ শরণার্থী কক্সবাজারের পাহাড়ি ঢালে প্লাস্টিকের বস্তা বা বাঁশের চাটাই দিয়ে ডেরা তৈরি করে থাকছেন৷

শরণার্থীদের ভূমিধস থেকে প্রাণে বাঁচানোর তাগিদেই সরকার বিশাল কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে৷ বুলডোজার দিয়ে সমান করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থান, শরণার্থী আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করছে৷ তারপরও কিছুদিন আগের ভূমিধসে রোহিঙ্গা মেয়েটির মৃত্যু শঙ্কা তৈরি করেছে নতুন করে৷

পাহাড়ি ঢল এবং ভূমিধসের কারণে প্রাণহানির ঝুঁকিতে থাকা দুই লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেওয়ার মতো জায়গার অভাব রয়েছে বাংলাদেশে৷ এখন পর্যন্ত মাত্র ২১ হাজার শরণার্থীকে কিছুটা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে৷

কক্সবাজারে জাতিসংঘ শরণার্থী শিবিরের প্রধান কেভিন জে. অ্যালেন বলেন, ‘‘ভূমিধস বা পাহাড়ি ঢলে সত্যিকার অর্থেই ব্যাপক প্রাণহানির ঝুঁকি রয়েছে৷ সেক্ষেত্রে এসব শরণার্থী আরেকটি বড় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বেন এবং এবার প্রকৃতির দ্বারা৷''

ক্যাম্পের অস্থায়ী ঘরগুলোকে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত আড়াই মিটারের বেশি (আট ফুট) বৃষ্টিপাত সহ্য করতে হবে৷ মোটামুটি একবছর ব্রিটেনে যা বৃষ্টিপাত হয় তার তিনগুণ!

এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ এ কারণে প্রচুর পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার৷ বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গাদের প্রতিকূল অবস্থা থেকে রক্ষা করতে সরকার ও অংশীদার প্রতিষ্ঠানসমূহ আরো বেশকিছু প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ পাহাড়ের খাড়া অংশগুলোকে সমান করা, আগাম সতর্কবার্তা প্রচার, বর্ষাকালীন রোগব্যাধি সম্পর্কে সচেতন করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে৷

পায়খানগুলো বালির বস্তা দিয়ে  ঘিরে দেওয়া হয়েছে, যাতে জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতি না হয়৷ আবার রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থাও করতে পারছে না৷ প্রথমত, সামর্থে্র অভাব এবং দ্বিতীয়ত, এটি স্থায়ীভাবে তাদের এখানে থাকার সুযোগ করে দেবে৷ ঢাকার পরিকল্পনা হচ্ছে, এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো৷

নূর মোহাম্মদ নামের আরেক শরণার্থীর খুপড়ি ঘরের ছাদ এক সাম্প্রতিক ঝড়ে উড়ে গেছে৷ তিনি এটা বাঁচানোর চেষ্টায় কাঠ আর পাথর দিয়ে বাড়ির ছাদ ভারি করেছেন৷ কিন্তু চরম প্রতিকূল আবহাওয়ায় যখন হাওয়া বইবে তখন এর কার্যকারিতা নিয়ে তার নিজেরই সন্দেহ রয়েছে৷

তিনি বলেন, ‘‘আমরা রোহিঙ্গারা ঘূর্ণিঝড়ের সাথে অপরিচিত নই৷ মিয়ানমারে আমাদের ঘরগুলো এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রতিরোধক হিসেবে তৈরি করা হয়৷ চারপাশের গাছগুলো একটি শক্ত প্রতিরোধ বা বাধা হিসেবে কাজ করতো৷ এখানে সেরকম আটকানোর কিছুই নাই৷''   

পাহাড়ে উজাড় হয়ে যাওয়া বিস্তৃত বনাঞ্চলের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি এ কথা বলেন৷ তাদের জন্য বাংলাদেশ হাজার হাজার হেক্টর জমি দিয়েছে, কিন্তু সেটা পাহাড়ে এবং রোহিঙ্গারা এখানে আসার আগেও ভূমিধসে বাংলাদেশে প্রাণহানির ঘটনা বিরল নয়৷

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক বলেন, ‘‘মসজিদ এবং কমিউনিটি সেন্টারগুলো দুর্যোগকালীন দেড় লাখ লোককে আশ্রয় দিতে পারবে৷ কিন্তু বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় আঘাতের শঙ্কা থাকলে এসব শরণার্থীকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে, যে ব্যবস্থপনা নেই৷''

এদিকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছেন৷     

রোহিঙ্গা ইমাম ইউসুফ বলেন, ‘‘সবাই ভয় পাচ্ছে এটা ভেবে যে, কোথায় যাবে, কেননা আমাদের বাড়ি তো ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে৷''  

সেবা সংস্থাগুলো বলছে, বড় ধরনের যে-কোনও ঘূর্ণিঝড় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর সাথে যোগাযোগের রাস্তা এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দিতে পারে৷ ফলে, খাবার ও অন্যান্য সরবরাহ বন্ধ থাকবে৷

অ্যামেরিকার সানফ্রান্সিসকোর সমান বিপুল জনসংখ্যার রোহিঙ্গা গোষ্ঠী সত্যি তখন ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে সম্মুখীন হবে৷ 

অবশ্য সেরকম অবস্থা তৈরি হলে খাদ্য বহনকারী কয়েক হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাকর্মী প্রস্তুত রয়েছে বলে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার জরুরি বিভাগের সমন্বয়ক পিটার গেস্ট জানিয়েছেন৷
কেননা, এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাঁদের কোথাও পালানোর বা যাওয়ার সুযোগ নেই৷ কারণ, বাংলাদেশের নিরাপত্তাপত্তা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে রয়েছেন তারা৷    

নিজেদের অসহাত্বের কথা ৭০ বছের বৃদ্ধ শরণার্থী দিল মোহাম্মদের সুরেই সবচেয়ে করুণভাবে এলো, ‘‘আল্লাহ সহায়তা না করলে আমরা আর কী বা করতে পারি!''

এইচআই/এসিবি (এএফপি)

প্রতিবেদনটি নিয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷