1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আলৎসহাইমার রোগের লক্ষণ নির্ণয়ে ব্যাপক অগ্রগতি

১২ নভেম্বর ২০১১

মানুষকে সুস্থ, সুন্দর দীর্ঘ জীবন দিতে গবেষণার অন্ত নেই৷ বয়স বাড়লেও মানুষ যেন স্মৃতি বিভ্রাটের কবলে না পড়ে অর্থাৎ আলৎসহাইমারের শিকার না হয় সেজন্য এবার বিজ্ঞানীরা বের করলেন এই রোগে ধরার ২০ বছর আগেই তা চিহ্নিত করার উপায়৷

https://p.dw.com/p/139Xc
আলৎসহাইমার এর ব্যাখ্যাছবি: ALZHEIMER FORSCHUNG INITIATIVE E.V.

সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফলাফল জানাতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বললেন, স্মৃতিশক্তি বিলোপ কিংবা চিন্তাশক্তি লোপ পেতে শুরু করার প্রায় ২০ বছর আগেই এই রোগ তথা আলৎসহাইমারের সম্ভাব্যতা চিহ্নিত করা যাবে৷ প্যারিসে আলৎসহাইমার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিজ্ঞানীরা উপস্থাপন করেন এই গবেষণার প্রতিবেদন৷ এতে বলা হয়েছে, এই রোগের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করার বেশ কিছু বছর আগেই মস্তিষ্ক রসায়নের নিরূপণযোগ্য কিছু পরিবর্তন ঘটতে থাকে৷ এসব পরিবর্তনের দিকে নজর রেখে সম্ভাব্য আলৎসহাইমার রোগীকে এর হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷

মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য ও পরিবর্তন চিহ্নিত করে সম্ভাব্য রোগীদের রক্ষার পাশাপাশি ইতিমধ্যে এর শিকার ব্যক্তিদের আরোগ্য লাভের ব্যাপারেও ইঙ্গিত দিয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান৷ সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা প্রায় সব ধরণের আলৎসহাইমার রোগের জন্য দায়ী মস্তিষ্কে বিশেষ দু'টি আমিষ জাতীয় রসের পরীক্ষা করেন৷ একটি হলো, স্পাইনাল রসে অ্যামাইলয়েড বেটা৪২ নামক আমিষের ঘাটতি পরীক্ষা৷ কারণ স্পাইনাল রসে এর ঘাটতির অর্থই হচ্ছে মস্তিষ্কের অন্য কিছু অংশে এই একই আমিষের ক্ষতিকর প্রবৃদ্ধি৷ যা স্নায়ুকোষ ধ্বংস করে এবং পরিণামে স্মৃতিশক্তির মারাত্মক ক্ষতি হয়৷ আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, স্নায়ুতন্তুর জটে ‘টাও' নামের একটি উপাদান বৃদ্ধি যা স্নায়ুকোষের মৃত্যুর জন্য দায়ী৷

Flash-Galerie Alzheimer Diagnostik
মস্তিষ্ক স্ক্যান-এর পদ্ধতিছবি: CHROMORANGE

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং ঐ গবেষণার প্রধান গবেষক ব়্যান্ড্যাল বেটম্যান বলেন, ‘‘বাহ্যিকভাবে দৃশ্যমান লক্ষণ প্রকাশিত হওয়ার আগেই আমরা চিকিৎসা শুরুর মাধ্যমে এই রোগের সাথে সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের কোষগুলোর ক্ষতি ঠেকাতে চাই৷'' এই গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ করে এমন সম্ভাব্য রোগীদের উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে যারা তাদের পিতা-মাতা উভয় কিংবা যে কোন একজনের কাছ থেকে জিনগতভাবে এই রোগের ঝুঁকি বহন করছিল৷ তবে বংশগতভাবে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও বিপুল সংখ্যক মানুষ জিনগত সংমিশ্রণ এবং পরিবেশগত কারণেও এই রোগে ভুগতে পারে৷ সারাবিশ্বে বর্তমানে সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত৷ তবে চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই সংখ্যা তিনগুণ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷

নতুন এই গবেষণায় আলৎসহাইমারের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের কোষে বেশ কিছু পরীক্ষা চালিয়ে এর ফল পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ একই ধরণের বোধ মূল্যায়ন, পজিট্রন নির্গমন টমোগ্রাফি (পিইটি), চৌম্বকীয় অনুরণন প্রতিচ্ছবি তথা এমআরআই এবং মস্তিষ্কে প্রবহমান রস ও রক্তে গোপন লক্ষণ প্রকাশসূচক চিহ্নের অনুসন্ধানমূলক পরীক্ষা চালানো হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির সহোদরদের ক্ষেত্রেও৷ এসব পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সিদের মধ্যে তখনও আলৎসহাইমারের কোন লক্ষণ দেখা যায়নি৷ কিন্তু যারা আলৎসহাইমারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তাদের মস্তিষ্ক রসে উল্লিখিত দু'টি বিশেষ আমিষেরই ক্ষতিকর প্রক্রিয়ায় হ্রাস-বৃদ্ধির প্রমাণ মিলেছে৷ যা তাদের ঝুঁকিমুক্ত ভাইদের ক্ষেত্রে ঘটেনি৷ তবে ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে ততোদিনে আলৎসহাইমারের অন্তত একটি লক্ষণ প্রকাশিত হয়েছিল৷

এ ধরণের রোগীর সংখ্যা কম হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার ১১টি গবেষণা কেন্দ্রের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ এসব গবেষণা কেন্দ্র মূলত ডোমিন্যান্টলি ইনহেরিটেড আলৎসহাইমার নেটওয়ার্ক তথা ডিআইএএন এর আওতায় কাজ করে যাচ্ছে৷ এই গবেষণা কর্মে অংশগ্রহণকারী ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবীর উপর পরীক্ষার ফল প্যারিসে অনুষ্ঠিত ঐ বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়৷ সেখানে আরো জানানো হয়েছে যে, শীঘ্রই আরো ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবীকে এই গবেষণার কাজে সম্পৃক্ত করা হবে৷

যাহোক, এই পরীক্ষার ফলে দেখা যাচ্ছে পিতা-মাতার ক্ষেত্রে ঠিক যে বয়সে আলৎসহাইমার রোগের লক্ষণ ধরা পড়েছিল তার চেয়ে ১০ থেকে ২০ বছর আগেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে সন্তানদের ঝুঁকির বিষয়টি৷ ফলে তাদের বিশেষ চিকিৎসার আওতায় এনে এর হাত থেকে বাঁচানোর আশা দেখছেন বিজ্ঞানীরা৷ আলৎসহাইমার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান চিকিৎসা ও বিজ্ঞান বিষয়ক কর্মকর্তা উইলিয়াম থিজও আশা প্রকাশ করেন যে, এই পরীক্ষার ফল থেকে আলৎসহাইমার রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সম্ভব হতে পারে৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ