পশ্চিমবঙ্গে ভোটে অশান্তি
১৪ মে ২০১৮পশ্চিমবঙ্গের ২০ জেলার ৩২১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩৮,৫২৯ আসনে ভোট৷ বুথের সংখ্যা ৪৬,৭০৫৷ ভোট দেবেন ৩ কোটি ২৫ লক্ষ ভোটার, যাতে নির্বিঘ্নে ভোট হতে পারে, তার জন্য মোট ৭১,৫০০ সশস্ত্র পুলিশকর্মী মোতায়েন করেছে প্রশাসন৷ এঁদের মধ্যে আছেন কলকাতা পুলিশের ৯০০০ অফিসার এবং সিকিম, ওড়িশা, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র থেকে আসা ১৮ কোম্পানি, অর্থাৎ ১৮০০ পুলিশকর্মী৷ আর তার সঙ্গে ৮০ হাজার লাঠিধারী সিভিক ভলেন্টিয়ার৷ ফলে প্রতিটি বুথের জন্য একজন সশস্ত্র পুলিশকর্মী এবং একজন সিভিক ভলেন্টিয়ারের বেশি বরাদ্দ করা যায়নি৷ ফলে যা আশঙ্কা ছিল, তা-ই হয়েছে৷ রাজ্যজুড়ে, জেলায় জেলায় বিক্ষিপ্ত রাজনৈতিক সঙ্ঘর্ষ, বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট এবং বোমা-গুলিতে হতাহতের খবর৷ বেলা ১১টায়, এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২৬ শতাংশ৷
সোমবার, ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গের উত্তর থেকে দক্ষিণ সন্ত্রাসের খবর আসতে শুরু করে৷ কোচবিহারের দিনহাটায় রাতভর বোমা-গুলির খবর আসে৷ কাকদ্বীপের নামখানা থেকে খবর আসে এক সিপিএম এজেন্টের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে ওই এজেন্ট এবং তাঁর স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার৷ উত্তর ২৪ পরগণার ভাঙড়ে তৃণমূল নেতা, এই মুহূর্তে পুলিশের হাতে আটক আরাবুল ইসলামের অনুগামীদের বাড়িতে রবিবার বিকেল থেকে রাতভর দফায় দফায় হামলার খবর আসে৷ সকাল হতেই পাল্টা মার দিতে শুরু করে আরাবুলের দলবল৷ ব্যাপক বোমা-গুলির লড়াই শুরু হয় ভাঙড়ের জমি ও জীবিকা রক্ষা কমিটি সমর্থিত নির্দল প্রার্থীদের সঙ্গে৷ পুলিশ অবশ্য আগে থেকেই সতর্ক থাকায় হাঙ্গামা নিয়ন্ত্রণে আসে তাড়াতাড়ি৷ এরই মধ্যে এই জেলার বনগাঁ সীমান্তের এক প্রান্তিক গ্রাম থেকে খবর আসে, বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতিদের ভাড়া করে এনে বুথ দখলের চেষ্টা করছে বিজেপি৷ জেলার তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি, রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এই অভিযোগ তোলেন৷ কিন্তু গ্রামবাসীরাই তাড়া করে ওই হামলাকারীদের ৭ জনকে ধরে ফেলে এবং বেধড়ক মারে৷ গণপ্রহারের মুখে তারা জানায়, স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বই তাদের বুথ দখলের জন্যে পাঠিয়েছিল৷
জনতা রুখে দাঁড়ানোয় হামলাবাজদের রুখে দেয়ার আরও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে নদীয়ার শান্তিপুরে৷ সেখানেও অভিযোগের আঙুল শাসকদলের দিকে৷ তাদের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতিদের বাইক বাহিনী বুথ দখল করতে এসে ব্যাপক গণ প্রতিরোধের মুখে পড়ে পিঠটান দেয়৷ ১৪টি বাইক কেড়ে নিয়ে জ্বালিয়ে দেন গ্রামবাসীরা৷ গণপিটুনিতে প্রাণ হারায় এক দুষ্কৃতি, যে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক বলেই পরিচিত৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে তৃণমূল কংগ্রেস এবং সিপিএম ও নির্দল সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষের খবর আসে৷পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের সাতেঙ্গাবাড়ি থেকে তৃণমূল কর্মীদের ওপর বিজেপি-আশ্রিত দুষ্কৃতিদের সশস্ত্র হামলার খবর পাওয়া যায়৷ এখানে অন্তত ১৫ জন তৃণমূল কর্মী অস্ত্রের ঘায়ে জখম হন৷ জেলাগুলির মধ্যে তুলনায় একমাত্র শান্ত ছিল বীরভূম, যেহেতু সেখানে কার্যত ভোট হচ্ছে না৷ অধিকাংশ আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস৷
সোমবার সকাল থেকেই উত্তরবঙ্গ জুড়ে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় হাঙ্গামা হওয়ার সুযোগ হয়নি৷ কিন্তু বৃষ্টি থামতে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তরের বিভিন্ন জেলায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে৷ দিনহাটা থেকে ব্যাপক হারে বুথ দখল এবং ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ আসতে শুরু করে৷ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ৷ এখানে রেজিনগর, বেলডাঙায় কংগ্রেস বনাম তৃণমুল কংগ্রেসের সঙ্ঘর্ষে যথেচ্ছ বোমা-গুলি চলে৷ জলপাইগুড়ির শিকারপুরে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতিরা৷ইভিএম বা বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র নয়, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে পুরনো প্রথায়, ব্যালট দিয়ে৷ ফলে ব্যালট বাক্স জ্বালিয়ে দেওয়া, জল ঢেলে দেওয়া, বা জলে ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে৷ ফলে অনেক বুথে ভোট বাতিল করে ফের নির্বাচনের নির্দেশ দিতে পারে নির্বাচন কমিশন, যার হিসেব পাওয়া যাবে দিনের শেষে৷