বেতন চান অনশনরত শ্রমিকরা
১ আগস্ট ২০১৪এদিনও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা রাজধানীর বাড্ডায় হোসেন মার্কেটের সপ্তম তলায় শ্রমিকদের অনশনস্থলে গিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন৷
অনশন চালিয়ে যাওয়া শ্রমিকদের এখন একটাই দাবি ‘কোনো আশ্বাস নয়, বেতন চাই'৷ অনশন চলার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে খবর এসেছে তুবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেন জামিন পেয়েছেন৷ অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার মামলায় গ্রেফতার হয়ে তিনি কারাগারে ছিলেন৷ দেলোয়ারের জামিনের খবরে আরো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন শ্রমিকরা৷ শ্রমিকদের দাবি তাঁর জামিন বাতিল করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে৷
গার্মেন্টস মালিক-শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি দেলোয়ার হোসেনের জামিন হয়েছে৷ আগামী রবি বা সোমবার জেল থেকে তিনি ছাড়া পাবেন৷''
অনশন কর্মসূচি থেকে তুবা গ্রুপের ১,৬০০ শ্রমিকের তিন মাসের বেতন, ওভারটাইম ও বোনাস বাবদ পাওনা ৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা পরিশোধের দাবিও করেন মোশরেফা মিশু৷ শ্রমিকদের অনশনে অংশ নেয়া এই শ্রমিক নেত্রীও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ তিনি অবিলম্বে বেতন-ভাতা পরিশোধ, তুবার প্রতিটি কারখানা সচল করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ, শ্রমিক হত্যাকারী খুনি দেলোয়ারের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত, তাজরিন গার্মেন্টসে আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান৷
তুবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেনের শ্বাশুড়ি লাইলী বেগম গত ৫ দিন ধরে অবরুদ্ধ রয়েছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘জামাইয়ের জামিন হয়েছে শুনেছি৷ এখনো বের হয়েছে কিনা জানি না৷ শুক্রবার সকাল থেকেই আমি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন৷'' তিনি বলেন, একটা কারখানা বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ জামাই জেল থেকে বের হলেই এসব ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷ তখন শ্রমিকরা পাওনা পেয়ে যাবেন৷ তিনি বলেন, ‘‘শ্রমিকদের দাবির সঙ্গে আমিও একমত, শুধু একটু সময় দরকার৷''
শ্রমিকদের অনশনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে শুক্রবার গার্মেন্টসে যান সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না৷ তিনি উপস্থিত শ্রমিকদের বলেন, ‘‘আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন, আর একটু ধৈর্য্য ধরে আন্দোলন চালিয়ে যান, সফলতা আসবেই৷ মালিককে আপনাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করতেই হবে৷''
আমরণ অনশনে অংশ নেয়া বাংলাদেশ টেক্সটাইল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, ‘‘বিজিএমইএ-র নেতারা আনন্দে ঈদ উদযাপন করেছেন৷ কিন্তু, একবারও কি তাঁদের মনে হলো না যে, এই মানুষগুলো ঈদের দিন না খেয়ে আছে৷ শ্রমিকদের সন্তানেরা অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে৷ আসলে মালিকেরা শ্রমিকদের মানুষই মনে করেন না৷ বিগত পাচ দিনেও বিজিএমইএ-র পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি দল তুবা গ্রুপে যায়নি৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রতিনিধি দল আসবে বলে তারা শুনেছেন৷ এরই মধ্যে ৭৬ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ এর মধ্যে ১০ শ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷''
তুবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেনের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ে নতুন করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তুবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটি৷ শুক্রবার দুপুরে শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন৷ শনিবার বেলা ১১ টায় বাড্ডার হোসেন মার্কেটের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন৷
তিনি বলেন, ‘‘বিজিএমইএ তুবা গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে মিথ্যাচার করছে৷ বিজিএমইএ-র পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে মালিক জেলে থাকায় বেতন-বোনাস দেয়া সম্ভব হয়নি৷ ব্যাংকও টাকা দিতে রাজি হয়নি৷ তাহলে আমাদের প্রশ্ন দিন-রাত কাজ করে শ্রমিকরা যে পণ্য তৈরি করেছে সেই শিপমেন্টের টাকা কোথায়? সেই টাকা এনে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করুন৷''