আসামে জাতিদাঙ্গা
২৭ জুলাই ২০১২আসামে এই জাতিদাঙ্গা দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে – স্থানীয় বোড়ো উপজাতি এবং বাঙ্গালি মুসলিম, যারা লোয়ার আসামের বাসিন্দা৷ গত এক সপ্তাহে জাতিদাঙ্গায় মারা গেছে এপর্যন্ত ৪৫ জন৷ প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ ঘরছাড়া৷ তারা আশ্রয় নিয়েছে ২০০টি ত্রাণ শিবিরে৷ ভীতি, আতঙ্ক আর অবিশ্বাসের ঘেরাটোপে বন্দি৷ ফিরে যেতে চাইছেনা গ্রামের বাড়িতে৷ দশ হাজার ঘরছাড়া পরিবার পালিয়ে গেছে পাশের পশ্চিমবঙ্গে৷
মুসলিম সাংসদদের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি. চিদাম্বরমের সঙ্গে৷ বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ওপর তাদের আস্থা নেই৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার যাচ্ছেন কোকরাঝাড়৷ আর আগামীকাল যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী৷ দোষীদের গ্রেপ্তার করে কড়া শাস্তি দেবার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈকে৷
কেন এই জাতিদাঙ্গা? এই বিষবৃক্ষের বীজ নিহিত আছে কোথায়? ইতিহাস বলছে, আসামে বাঙালি মুসলমানদের ব্যাপক আগমন ঘটলে বোড়োদের মনে আশঙ্কা, তাদের জমি এরা বুঝি দখল করে নেবে৷ কারণ অনেক জায়গায় মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ কৃষিকাজে বাঙালি মুসলিমরা এদের চেয়ে অনেক উন্নত৷ বিদ্বেষ ও অবিশ্বাসের শুরু সেই থেকে৷ যদিও বাঙালি মুসলিমদের আসামে আসা শুরু সেই ব্রিটিশ আমলে, তৎকালীন পূর্ব বাংলা থেকে৷
সেই অবিশ্বাস ছড়িয়ে পড়ে ছাত্র রাজনীতিতে৷ তারমধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে জঙ্গি সংগঠন, বোড়ো লিবারেশন টাইগার সংক্ষেপে বিএলটি৷ যারা হাত মেলায় সরকারের সঙ্গে৷ গঠিত হয় ঐ এলাকার চারটি জেলা নিয়ে বোড়োল্যান্ড ডিসট্রিক্ট টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল৷ বোড়োদের রাজনৈতিক ক্ষমতালাভে অবিশ্বাস দানা বাঁধে অ-বোড়োদের মধ্যে৷ গঠিত হয় অল মাইনরিটি স্টুডেন্টস কাউন্সিল৷ তারপর এই বিদ্বেষ ও সন্দেহ সহিংসতার আকার নেয় ৯০-এর দশকে৷
অসমের এক স্থানীয় সাংবাদিক যিনি পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন ডয়চে ভেলে তিনি বলেন, পুরো ব্যাপারটাই দাঁড়িয়ে আছে ভোটব্যাংক রাজনীতির ওপর৷ সে দিকে তাকিয়েই সরকার সবকিছু জেনেও না জানার ভান করছে এবং করে আসছে৷
কত মানুষ মারা গেল, কত বাড়ি পুড়ে গেল – তার থেকেও বড় কথা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিতটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাচ্ছে৷
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ