আসিফের ওপর হামলাকারীরা আল-কায়েদার অনুসারী
২ এপ্রিল ২০১৩এদিকে আসিফ এখনো চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, আছেন আত্মগোপন করে৷
আসিফ মহিউদ্দীনের ওপর হামলা চালানো হয় ১৪ই জানুয়ারি রাতে উত্তরায় তাঁর অফিসের সামনে৷ গুরুতর আহত আসিফ দীর্ঘ চিকিৎসার পর এখন কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন৷ রবিবার রাতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আসিফের ওপর হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করে৷ তারা হলো সাদ আল নাহিন, কাউসার, কামাল এবং নিরাপত্তা প্রহরী কামাল৷
গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মশিউর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, তারা চারজনই আসিফের ওপর হামলার কথা স্বীকার করেছে৷ তারা জানিয়েছে যে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল আসিফকে হত্যা করা৷ তবে চাপাতির ব্যাগ নিয়ে যার আসার কথা ছিল সে ঠিক সময়ে না আসায় তারা ছুরিকাঘাত করেই আসিফকে হত্যার চেষ্টা করে৷
পুলিশ তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি এবং সাইকেল উদ্ধার করেছে৷ আর তাদের কাছে পাওয়া গেছে নিহত আল-কায়েদা নেতা আনওয়ার আল-আওলাকির ভাষণের সিডি ও ভিডিও৷ গোয়েন্দা কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান যে, তারা আল-কায়েদা নেটওয়ার্কের অনুসারী বলে স্বীকার করেছে৷
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে নাহিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন এমবিএর ছাত্র৷ সে জানিয়েছে, আব্দুল করিম নামে একজনের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রেই সে জেহাদি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়৷ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আব্দুল করিমই তাদের ব্লগার আসিফ মহীউদ্দিকে হত্যার প্রস্তাব দেয়৷ করিম তাদের জানান, ‘‘আসিফ মহিউদ্দীন নামে একজন ব্লগার ব্লগে ধর্ম সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য দেয়৷ তাকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে৷'' এরপর তার আলোচনা করে হত্যার ছক তৈরি করে৷ সে জানায় রানা নামে একজন এই কাজের জন্য অর্থের জোগান দিয়েছে৷
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, আরেকজন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে হত্যাকারীরাও একই মতাদর্শের অনুসারী৷ তাকে ১৫ই ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুরে নিজ বাসায় সামনে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তারা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েল ছাত্র৷
নিরাপত্তাহীনতায় আসিফ
ব্লগার আসিফ মহীউদ্দিন ডয়চে ভেলেকে জানান, তিনি এখন চরম নিপত্তাহীনতায় ভুগছেন৷ তাঁর ব্লগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং তাঁকে নানা রকম ভয় ভীতি দেখান হচ্ছে৷ গোয়েন্দারা তাঁকে ব্লগে লেখালেখির ওপর এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে৷ এমনকি তাঁকে গ্রেপ্তারেরও হুমকি দেয়া হচ্ছে৷ তিনি জানান, ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যে ৮৪ জন ব্লগারের তালিকা দেয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে৷ তাতেও তাঁর নাম রয়েছে বলে জানা গেছে৷ আসিফ বলেন, ২০১১ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে জড়িত হওয়ার কারণে পুলিশ তাঁকে একবার গ্রেপ্তার করে মানসিক নির্যাতন চালিয়েছিল৷ এবার গ্রেপ্তার করলে হয়ত শারীরীক নির্যাতন চালাবে৷ কিন্তু সেই নির্যাতন সহ্য করার মতো শারীরিক ক্ষমতা তাঁর নেই৷
আসিফ মহীউদ্দিন বলেন, তাঁকে প্রথমদিকে গানম্যান দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও তিনি তা নেননি নিরাপত্তার কারণেই৷ হয়ত ঐ গানম্যানের মাধ্যমেই কেউ তাঁর বাসার ঠিকানা জেনে যেত৷ আর এখন তিনি একরকম আত্মগোপনে আছেন বলে জানিয়েছেন৷ এর কারণ, মৌলবাদী এবং পুলিশ দু'দিক থেকেই হুমকির মুখে আছেন তিনি৷
গেয়োন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মশিউর রহমান অবশ্য দাবি করেন যে, আসিফকে তাঁর নিরাপত্তার কারণেই ব্লগে লেখালেখি করতে নিষেধ করা হয়েছে৷ তবে তাঁকে গ্রেপ্তারের কোনো হুমকি দেয়া হয়নি বলেই তাঁর দাবি৷