দুর্বিষহ জীবন
২১ আগস্ট ২০১৩২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন৷ আহত হয়েছিলেন তিন শতাধিক৷ আহতদের একজন আওয়ামী মহিলা লীগের মাহবুবা পারভীনকে তখন মৃত ভেবে উদ্ধার করা হয়েছিল৷ তাঁর দেহ পড়েছিল রক্তাক্ত অবস্থায়৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি প্রাণে বেঁচে যান৷
তবে তিনি বেঁচে আছেন মৃত্যুযন্ত্রণা নিয়ে৷ মাহবুবা ডয়চে ভেলেকে জানান, তাঁর শরীরে গ্রেনেডের ১,৮০০টি স্প্লিন্টার রয়েছে৷ এই স্প্লিন্টার নিয়েই গত নয় বছর তিনি অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর৷ তাঁর মতে, এই যন্ত্রণা মৃত্যুযন্ত্রণার চেয়েও ভয়ঙ্কর৷ তিনি রাতে ঘুমাতে পারেন না৷ অন্যের সহায়তা ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না৷ তাঁর স্বামী এবং দুই সন্তানের জীবনও তাঁর জন্য দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে৷ ভারতে কয়েকবার গিয়েছেন চিকিত্সার জন্য, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি৷ চিকিত্সকরা বলেছেন তাঁকে ব্যাংককে নেয়া প্রয়োজন উন্নত চিকিত্সার জন্য৷ মাহবুবা জানান, শেষ পর্যন্ত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর তাঁকে চিকিত্সার জন্য ১০ লাখ টাকার চেক দেয়া হয়েছে৷
মাহবুবার কথায়, তাঁর দুটি সন্তানের চিকিত্সার ভার সরকারের নেয়ার কথা থাকলেও তা নেয়া হয়নি৷ ফলে তাঁর জীবনে এখন আর অন্ধকার ছাড়া কিছুই নেই৷ ঢাকার অদূরে সাভারে নিজ বাড়িতে এখন তিনি যেন শেষ দিনের অপেক্ষায় আছেন৷
গ্রেনেড হামলায় নিহতদের মধ্যে একজন হলেন পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার কলেজ ছাত্র মামুন মৃধা৷ কৃষক পরিবারের সন্তান মামুন ঢাকার সরকারি কবি নজরুল কলেজে এইচএসসি-র ছাত্র ছিলেন৷ ছাত্রলীগ করার সুবাদে তিনি ২১ আগস্টের সমাবেশে যান৷ কিন্তু তাঁকে বাড়ি ফিরে যেতে হয় লাশ হয়ে৷ মামুনের মৃত্যুর পর তাঁদের পরিবারে নিমে এসেছে বিপর্যয়৷ সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা মোতালেব মৃধা পুত্র হারানোর শোকে নিজেও অসুস্থ হয়ে পরেছেন৷ কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না৷ মামুনের মা মোর্শেদা বেগম ডয়চে ভেলেকে জানান যে, এখন তাঁরা চরম অভাব-অনটনের মধ্যে আছেন৷ তাঁদের দেখার কেউ নেই৷ সরকারের কাছ থেকে দুই লাখ টাকার সহযোগিতা ছাড়া আর কিছুই পাননি৷ তবুও যদি তাঁর ছেলে হত্যার বিচার হতো, তাহলে কিছুটা শান্তনা পেতেন৷ কিন্তু তাও যে হয়নি৷
সাভারের মাহবুবও বলেন একই কথা৷ তিনি বলেন, নয় বছর হয়ে গেলেও এখনো পৈশাচিক হামলার বিচার হয়নি৷
নানা চড়াই-উত্রাই আর নাটকের পর গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার চলছে এখন৷ তবে এই সরকারের মেয়াদে এই মামলার বিচার শেষ হবে না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, বিএনপি-র আমলে এই হামলার ঘটনার পর তত্কালীন সরকার মালাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল৷ জজ মিয়া নাটকসহ নানা নাটক সাজিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে চেয়েছিল তারা৷ ফলে নতুন তদন্ত করে মামলাটিকে সঠিক পথে আনতে এবং প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করতে সময় লেগেছে৷ এই মামলায় তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর এবং মুফতি হান্নানসহ মোট আসামি ৫২ জন৷ আর সাক্ষী মোট ৪৯১ জন৷