ইইউ-র জন্য নতুন শরণার্থী নীতি প্রয়োজন
২০ এপ্রিল ২০১৫অভিবাসন ও শরণার্থী নীতি পরিবর্তন করার উদ্যোগ নিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য আর কী ধরনের ঘটনা ঘটা প্রয়োজন? ইউরোপের নেতাদের মধ্যে সাড়া ফেলতে ভূমধ্যসাগরে আর কতজনকে প্রাণ হারাতে হবে? ব্রাসেলসকে কার্যকর ভূমিকা নিতে আর কত অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করতে হবে?
২০১৩ সালের অক্টোবরে ইটালির লাম্পেডুসা দ্বীপের কাছে একটি নৌকা দুর্ঘটনায় পড়ার পর ইটালির নেয়া উদ্যোগ ইইউকে দেখিয়ে দিয়েছে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে কী করতে হয়৷ ইটালির নৌবাহিনীর কয়েকটি জাহাজ তখন থেকে ‘মারে নোসট্রুম' কর্মসূচির আওতায় উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ ইউরোপের সাগরপথে টহল দিতে শুরু করে৷ এর মাধ্যমে ইটালি কয়েক হাজার মানুষকে বাঁচাতে সমর্থ হলেও ইইউ'র অন্যান্য দেশ এই কর্মসূচি চালু রাখতে বার্ষিক ১০৮ মিলিয়ন ইউরো জোগাড় করতে সহায়তা দিতে চায়নি৷
এর পরিবর্তে ইউরোপ তার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ফ্রনটেক্স'কে শরণার্থীদের জীবন বাঁচানোর দায়িত্ব দেয়৷ গত বছর নভেম্বরে শুরু হওয়া ‘ট্রিটন' নামের এই কর্মসূচির খরচ ‘মারে নোসট্রুম' এর চেয়ে অনেক কম বলে ধারণা করা হয়৷ ফলে ট্রিটন কর্মসূচি শুধু ইউরোপের উপকূলের কাছাকাছি থাকা মানুষের প্রাণ রক্ষার কাজ করে৷ লিবিয়ায় যে দুর্ঘটনা ঘটে গেল তাতে এই কর্মসূচির আওতায় কিছু করার উপায় নেই৷
শোকের কথা আর নয়
সবশেষ ট্র্যাজেডি নিয়ে ইউরোপের নেতাদের মুখ থেকে আর কোনো শোকবাণী আমি শুনতে চাই না৷ ব্যয়ের কথা চিন্তা করে যেসব দেশ ‘মারে নোসট্রুম' এর মতো কর্মসূচিতে অংশ নিতে চায় না, তারা অন্তত পরিষ্কার করে বলুক যে, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া ও সিরিয়ার মানুষের প্রাণ তাদের কাছে ততটা মূল্যবান নয়৷
ইউরোপের কৃষিনীতির কথা একবার চিন্তা করুন৷ ভর্তুকি হিসেবে প্রতিবছর কৃষকদের ৫০ বিলিয়ন ইউরো দেয়া হয়৷ এর মানে হলো, ইউরোপ কৃষকদের সহায়তা করতে একদিনে যে অর্থ খরচ করে থাকে সেটা, মারো নোসট্রুম কর্মসূচির এক বছরের খরচের চেয়ে বেশি৷
তিন দাবি
কয়েক বছর ধরেই নতুন অভিবাসন ও শরণার্থী নীতির কথা শোনা যাচ্ছে৷
প্রথমত, স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ: তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান পুরো ভূমধ্যসাগরে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং এর জন্য যে ব্যয় হবে সেটা দিতে হবে ইইউ-র সব দেশকেই৷ মারে নোসট্রুম এর মতো শুধু ইটালিকে নয়৷
দ্বিতীয়ত, মধ্যমেয়াদী পদক্ষেপ: ইউরোপের অভিবাসন নীতিতে সংস্কার আনতে হবে৷ রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হওয়া মানুষ ও যুদ্ধপীড়িত দেশের মানুষদের মতো অর্থনৈতিক কারণে যারা ইউরোপে আসতে চায় তাদেরকেও অভিবাসী হওয়ার সুযোগ দিতে হবে৷
ইউরোপ এখনই একটি অভিবাসীতে পূর্ণ মহাদেশ৷ এখানকার অনেক দেশেই বয়স্ক মানুষের সংখ্যা অনেক৷ তাই ভবিষ্যতে অভিবাসীদের প্রয়োজন হবে৷ কোটা ও পয়েন্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে পুরো বিষয়টিকে একটা বৈধ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে৷
তৃতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ: মানুষ কেন তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে- ইউরোপকে সেটা বিবেচনায় নিতে হবে৷ সামরিক অভিযানের মাধ্যমে যারা লিবিয়ার সব সরকারি স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে তারা শুধু সেখান থেকে চলে আসলেই হবে না৷ ইইউকে সেখানে এবং আফ্রিকার অন্যান্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও কাজ করতে হবে৷
আলোচনা করার জন্য আমাদের অনেক সময় থাকবে৷ কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার এখনই সময়৷