দক্ষিণ এশিয়ায় জাহাজ ভাঙা বন্ধ
৫ এপ্রিল ২০১৫রয়টার্সের বিশেষ প্রতিবেদনে প্রথমেই যে পরিসংখ্যানটি তুলে ধরা হয়েছে, তা লক্ষণীয় এই কারণে যে, বিশ্বের অধিকাংশ পুরনো জাহাজই কিন্তু ভাঙা হয়ে থাকে উপমহাদেশের সমুদ্রসৈকতে৷
‘শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম' নামধারী একটি এনজিও গত জানুয়ারি মাসেই জানায় যে, ২০১৪ সালে যে ১,০২৬ টি সামুদ্রিক পোত ভেঙে ফেলা হয়, তাদের মধ্যে ৬৪১টি ভাঙা হয়েছে উপমহাদেশের তিনটি দেশের ইয়ার্ডগুলিতে৷
জাহাজগুলি সৈকতে তুলে পরে ব্লোটটর্চ দিয়ে সেই লোহালক্কড়ের সুবিশাল দানবগুলিকে কাটার কাজ যারা করে, তারা সাধারণত অতি দরিদ্র, প্রশিক্ষণবিহীন, ক্ষেত্রবিশেষে বহিরাগত শ্রমিক৷
দুর্ঘটনা লেগেই থাকে৷ গুজরাতে জাহাজ ভাঙার দীর্ঘতম সৈকতটির নাম হল আলাং-সোসিয়া: এখানে গত বিশ বছরে অন্তত ৪৭০ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন, বলে মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস জানিয়েছে৷
শ্রমিকরা প্রাণ হারান উঁচু ডেক থেকে পড়ে; অথবা ইস্পাতের পাতের ধাক্কা লেগে৷ জাহাজের ভেতর থেকে নানা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ সাগরের পানিতে ধুয়ে সাগরে গিয়ে পড়ে৷ ওদিকে শ্রমিকদের অথবা পরিবেশের সুরক্ষা সংক্রান্ত আইন ও তার প্রয়োগ ঢিলেঢালা বলেই উপমহাদেশে জাহাজ ভাঙতে দিয়ে মালিকরা পান প্রতি টন ইস্পাত অনুযায়ী ৫০০ ডলার, যেখানে চীনে জাহাজ ভাঙতে দিলে পাওয়া যায় টন প্রতি ৩০০ ডলার এবং ইউরোপে আরো কম – মাত্র ১৫০ ডলার৷
ইউরোপে যে গতবছর মাত্র চার শতাংশ জাহাজ ভাঙা হয়েছে, সেটার পিছনেও রয়েছে মালিকদের মুনাফার লোভ৷ কাজেই ইইউ-র নতুন আইনের প্রাথমিক লক্ষ্য শ্রমিক ও পরিবেশের সুরক্ষা হলেও, এর ফলে যে ইউরোপীয়, এবং সেই সঙ্গে তুর্কি ও চীনা শিপব্রেকিং শিল্পের হাতে আরো বেশি অর্ডার গিয়ে পড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷
অবশ্য ‘শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম'-এর পাট্রিৎসিয়া হাইডেগার-এর মতে, ইইউ এবার যে তালিকা প্রকাশ করবে, তার ফলে জাহাজ ভাঙার বাজার একটি নিরাপদ, ও একটি নিম্নমানের বাজারে বিভক্ত হবে৷
অপরদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নিয়মাবলীতে একটি বড় ফাঁক রয়ে গেছে: জাহাজের মালিকরা তাদের জাহাজ ইইউ-বহির্ভূত কোনো দেশে নতুন করে রেজিস্ট্রি করতে পারেন, কিংবা তৃতীয় কাউকে বেচে দিতে পারেন – যার ফলে সেই জাহাজ তার ভাঙার সময় উপস্থিত হলে, শেষমেষ উপমহাদেশেই গিয়ে পৌঁছতে পারে৷
এসি/ এসবি (রয়টার্স)