সংশয়
৪ জুলাই ২০১২গত সপ্তাহান্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে স্পেন ও ইটালির ব্যাংকগুলির জন্য ইউরোপীয় তহবিল থেকে সহায়তার আশ্বাসের ফলে চলতি সপ্তাহে বাজার কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে৷ এই দুই দেশের রাষ্ট্রীয় বন্ডের উপর চড়া সুদের হার কমাতেও সরাসরি বন্ড কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ১৫,০০০ কোটি ইউরো কাজে লাগাতেও রাজি হয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা৷ তবে ইউরো'র বিনিময় মূল্য ডলারের তুলনায় কিছুটা কমে গেছে৷ আসলে ইউরো এলাকায় বেকারত্বের হার প্রায় ১১.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷ উৎপাদনের হারও কমে চলেছে৷ এই অবস্থায় আগামী বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বর্তমান ১ শতাংশ থেকে আরও কমানো হতে পারে, এমন সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় বাজারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে৷
তবে এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, যে জার্মানি সহ ইউরোজোনের শক্তিশালী দেশগুলি এভাবে সরাসরি স্পেন ও ইটালির ব্যাংকগুলিকে সহায়তা দেওয়ার পক্ষে ছিল না৷ বিশেষ করে সরাসরি বন্ড কিনে তাদের সাহায্য করার বিষয়টি বেশ বিতর্কিত৷ চারিদিক থেকে চাপের মুখে গত শুক্রবারের শীর্ষ সম্মেলনে তারা সম্মতি দিলেও ফিনল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস সোমবার নতুন করে আপত্তি জানিয়েছে৷ জার্মানির সাংবিধানিক আদালতেও ইএসএম ও বাজেট ঘাটতি সংক্রান্ত চুক্তির বিরুদ্ধে এক অভিযোগ জমা পড়েছে, যার শুনানি হবে ১০ই জুলাই৷ ফলে গোটা প্রক্রিয়া থমকে যেতে পারে৷ তবে অতীতে সংসদের অনুমোদন বা গণভোটের তিক্ত অভিজ্ঞতা এড়াতে এবার এমনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে সরকার একাই তা কার্যকর করতে পারে৷
সম্মেলনে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখোই বলেছিলেন, ‘‘সম্মিলিতভাবে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল ইউরো'কে বাঁচানো এবং অভিন্ন মুদ্রার পথ থেকে যাতে কোনো অবস্থায় সরে আসা সম্ভব না হয়, তা নিশ্চিত করা৷ এই লক্ষ্যে একটা আপোশ মীমাংসার প্রয়োজন ছিল৷ আমার ধারণা, ইউরোপীয় পরিষদ এই মর্মে অত্যন্ত স্পষ্ট এক বার্তা পাঠিয়েছে৷ ফলে ইউরোপীয় সমন্বয় প্রকল্প অতীতের তুলনায় আরও শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে৷''
কিন্তু কাগজে-কলমে ইউরোপীয় নেতারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে৷ তবে কোনো না কোনো ভাবে এই অঙ্গীকার পালন না করলে পুঁজিবাজার ইউরোপীয় নেতৃত্বের উপর আস্থা হারাতে পারে৷ কোনো পক্ষই সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চায় না৷ জার্মানি আপাতত এক ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করছে৷ বাজেট ঘাটতি কমিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার চালিয়ে দুর্বল দেশগুলিকে ঘর সামলাতে হবে, এটাই জার্মানির দীর্ঘমেয়াদি ঘোষিত লক্ষ্য৷
এর মধ্যে ইউরোপ সম্পর্কে ব্রিটেনের সাম্প্রতিক মনোভাব নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্তমান অবস্থা একেবারে গ্রহণযোগ্য নয়৷ তাই ব্রিটেনের সঙ্গে ইইউ'র সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা করার সময় এসে গেছে৷ তবে ইইউ'তে থাকা বা না থাকার প্রশ্নে কোনো গণভোটের দাবি মানতে নারাজ তিনি৷ তিনি আরও কিছুকাল অপেক্ষা করতে চাইছেন৷ ক্যামেরন'এর মতে, ব্রিটেনের স্বার্থে আপাতত কোনো বড় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না৷
এসবি / ডিজি (এএফপি, রয়টার্স, এপি)